বেহালায় চিকিৎসকের হাতে ভূমিষ্ঠ এক সদ্যোজাত শিশুর নাম রাখলেন ‘করোনাস’
HnExpress ১২ই এপ্রিল, জয় গুহ, বেহালা ঃ বেহালায় ভূমিষ্ঠ এক সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা হল “করোনাস”, চিকিৎসক নিজেই করলেন এমন অদ্ভুত নামকরণ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন শিখা মন্ডল। ঠাকুরপুকুর কবরডাঙ্গা অঞ্চলের বাসিন্দা শিখা দেবী। অন্তঃসত্বা হবার পর থেকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতেন তিনি। গত মাসেও সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন।
কিন্তু এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। তাই সেই হাসপাতলে যেতে ভয় পান শিখা দেবী। ফলে প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকা শিখা দেবীকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন স্বামী গৌর মন্ডল। এদিকে লকডাউন চলায় কোন ভাবেই স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার উপায় পাচ্ছিলেন না। এরমধ্যেই শিখা দেবী অনুভব করেন পেটের ভিতরে থাকা শিশুটি কোনরকম নড়াচড়া করছে না।
এই ঘটনায় আরও ভয় পেয়ে যায় মন্ডল পরিবার। এক বন্ধুর থেকে ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরীর ফোন নম্বর পান গৌর মন্ডল। বেহালার পর্ণশ্রী অঞ্চলে বাড়ি সেই ডাক্তারের। একটা অটো জোগাড় করে গৌর বাবু স্ত্রীকে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। শিখা মন্ডলকে পরীক্ষা করার পর ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী বুঝতে পারেন অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। না হলে সন্তানটিকে বাচাঁনো মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ শিশুটির হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু এই সময় অপারেশন থিয়েটার কোথায় মিলবে? পেশায় গাড়িচালক গৌর বাবুর আর্থিক সামর্থ্য সেরকম নয়। কোনও নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর মতো আর্থিক অবস্থা নেই তার। এখন তাহলে উপায় ? এই পরিস্থিতি দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী। তিনি খোঁজ করতে শুরু করেন বেহালা অঞ্চলে কোনও নার্সিংহোম পাওয়া যায় কিনা। এক বন্ধুর মাধ্যমে শকুন্তলা মেটারনিটি নার্সিংহোমের খবর পান। যেখানে নাকি সমাজের প্রান্তিক মানুষদের কম পয়সায় চিকিৎসা করা হয়।
ডাক্তার কৌশিক বাবু তড়িঘড়ি নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আশ্বাস পেয়ে শিখা মন্ডলকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনিই। তবে এখানেও সমস্যা দেখা দেয়। লকডাউনের ফলে ডাক্তারবাবুর গাড়ি চালক না থাকায় চিন্তা বাড়তে থাকে। শিখা মন্ডলের স্বামী গৌর মণ্ডল পেশায় গাড়িচালক হওয়ায় তিনি নিজেই গাড়ি চালানোর দায়িত্ব নেন। ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরীর গাড়িতে শিখা মন্ডলকে নার্সিংহোমে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
৭ ই এপ্রিল রাত আটটায় ভর্তি হন। অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তার ডা. রায়চৌধুরী নিজেই। রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন শিখা দেবী। ডাক্তার কৌশিক বাবুই এই সন্তানের নাম ঠিক করেন। শিখা ও গৌর মন্ডলের সদ্যোজাত সন্তানের নাম রাখেন “করোনাস।” এই রূপ অদ্ভুত নামকরণের কারণ হিসেবে ডাক্তার রায়চৌধুরী জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন চলছে।
তার মধ্যেই অনেক প্রতিকূলতাকে দূর করে এই সন্তানের জন্ম। করোনাকে জয় করে যার জন্ম তার নামই করোনাস। তবে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো, মা ও সন্তানের কোনও করোনা সংক্রমণ নেই। আসলে পরিস্থিতির বিচারেই এই নামকরণ। বর্তমানে মা এবং সন্তান দুজনেই ভালো আছেন। রবিবার সকালে নার্সিংহোম থেকে ছাড়া হবে বলে জানা গেছে। ডাক্তার রায়চৌধুরী আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রোপচার না হলে সন্তানটিকে সত্যিই বাঁচানো সম্ভব হতো না।
কারণ বাচ্চাটির হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। আসলে মায়ের নাড়ি সন্তানের গলায় জড়িয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়। তবে আমি কৃতজ্ঞ নার্সিংহোমের কাছে। নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা ভাবা যায় না। একজন মায়ের কোলে সন্তানকে তুলে দিতে পেরেছি। আমরা সবাই খুশি। শিখা মন্ডলের অস্ত্রোপচারের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেননি ডাক্তার কৌশিক রায়চৌধুরী।
এমনকি, রবিবার ডাক্তারবাবু নিজের গাড়ি করেই শিখা মন্ডল ও তার সদ্যোজাত সন্তানকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলে জানান। পাশাপাশি ডাক্তার রায়চৌধুরীর কাছ থেকে এধরনের মানবিক সাহায্য পেয়ে আপ্লুত মন্ডল পরিবারও। গৌর মন্ডল বললেন, এদিন ডাক্তারবাবু না থাকলে কি যে হতো জানি না। তাই ছেলের নাম ডাক্তারবাবু যা দিয়েছেন তাতেই আমরা খুশি। আমরা চাই ভবিষ্যতেও করোনাস মন্ডল নামেই আমার সন্তান পরিচিতি লাভ করুক।