December 13, 2024

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ—

0
1606373658 5fbf511a98f61 Atlas Five.jpg
Advertisements

HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, ওয়েবডেক্স নিউজ ঃ চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ আর কয়েক দিনের মধ্যেই পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে ঠিক কখন, কিভাবে এবং পৃথিবীর কোন অংশে এটি আছড়ে পড়বে সেটা এখনও পরিষ্কার ভাবে বলা যাচ্ছে না। এ যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার আতঙ্ক। করোনা কাঁপুনির মধ্যেই নয়া আতঙ্ক চীনা রকেটকে ঘিরে। চিনা রকেট ভেঙে পড়ার ভয়ে কাঁটা গোটা দুনিয়া।

বিশ্বস্ত সুত্রের খবরে জানা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত গতিতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে চিনের বৃহত্তম রকেটের ১১০ ফুট লম্বা অভ্যন্তরীণ অংশ। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর উপর ভেঙে পড়তে পারে এই চীনা রকেট। জানা যাচ্ছে, রকেটটির ওজন ২২ মেট্রিক টন।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত ২৯শে এপ্রিল
চীনের ওয়েনচ্যাং স্পেস কেন্দ্র থেকে “লং মার্চ ফাইভ -বি” রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

সুত্রে জানা গিয়েছে, মহাকাশে এই রকেটের ধবংসাবশেষ এখন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে এবং বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে ঢুকছে। যার অর্থ, এটি পৃথিবীর চারিদিকে বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে নীচের দিকে নেমে আসছে। এ বিষয়ে, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কয়েকদিন ধরে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে যে, এই রকেটের ধ্বংসাবশেষ এর ফলে জনবহুল অঞ্চলে বিধ্বস্ত হতে পারে আবার আন্তর্জাতিক জলসীমাতেও তা পড়তে পারে।

মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিংয়ের বরাত দিয়ে গ্লোবাল টাইমস বলেছে যে, চীনের স্পেস মনিটরিং নেটওয়ার্কে বিষয়ে নিবিড় ভাবে নজর রাখবে এবং কোথাও কোন ক্ষতি হলে তক্র জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে তারা ধ্বংসাবশেষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। সেটিকে গোলা ছুড়ে নীচে নামিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই। এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন,
“আমরা আশা করছি যে এটি এমন জায়গায় ধসে পড়বে যেখানে কারও কোন ক্ষতি হবে না।

আশা করি তা সমুদ্র বা এমন কোথাও পড়বে”,
এই কথা বলার পাশাপাশি তিনি পরোক্ষভাবে
চীনের সমালোচনা করে বলেন যে, “যেকোন পরিকল্পনা এবং অভিযান পরিচালনার সময় এই ধরণের বিষয়গুলি বিবেচনায় নেওয়াটা বেশ জরুরি।” এই চীনা মহাকাশযান উৎক্ষেপণ এর বিষয়ে উল্লেখ্য হলো, ২০২০ সালের মে মাসে লং মার্চ ফাইভ-বি নামের আরেকটি রকেট চীন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টের গ্রামগুলোয় ওই রকেটটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে ছিল বলে জানা যায়।

এর মধ্যে ১২ মিটার বা ৩৯ ফুট দীর্ঘ ধাতব পাইপও ছিল। যদিও ওই ঘটনায় কেউ আহত হননি। কিন্তু, মার্চ ফাইভ -বি রকেটের এই ধ্বংসাবশেষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে নাকি সেটা নিয়ে চীনের মহাকাশ সংস্থা এখনও কোন মন্তব্য করেননি। এদিকে, চীনের রকেট নিয়ে হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডোয়েল বলেছেন, এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আছড়ে পড়ার বিষয়টি “লং মার্চ ফাইভবি-এর একটি বড় সমস্যা”।

অর্থাৎ এ বিষয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, খুব শীঘ্রই এই রকেটের ধ্বংসাবশেষ নিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে ভেঙে পড়তে পারে, কিন্তু রকেটটির গতির উৎক্ষেপণের পদ্ধতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেতেও পারে। এক্ষেত্রে ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের মাঝখানে এবং জনমানব থেকে দূরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যে ভেঙে পড়বে সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। একইভাবে, রকেটের গতিপথ এমন ভাবে ঠিক করতে হবে যেন এর ধ্বংসাবশেষ পড়ার স্থানটি দ্রুত অনুমান করা যায়।

মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের মতে জানা গিয়েছে যে,
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সবচেয়ে দূরের দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি এসব ধ্বংসাবশেষ ফেলার ক্ষেত্রে নিরাপদ। কারণ এই জায়গাটিকে মহাসাগরের দুর্গম মেরু বলা হয়। এখানকার প্রায় ১৫০০ বর্গ কিমি বা ৫৮০ বর্গ মাইল জুড়ে থাকা অঞ্চলটি মহাকাশযান এবং উপগ্রহের একটি কবরস্থান বলা হয়, যেখানে বিগত সময় প্রায় ২৬০টি যানের অবশিষ্টাংশ সমুদ্রের নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে মনে করা হয়।

এ বিষয়ে জানা গিয়েছে, চীনের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৯শে এপ্রিল ওয়েনচ্যাং স্পেস কেন্দ্র থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এটি নতুন ও স্থায়ী স্পেস স্টেশনটির একটি মডিউল কক্ষপথে বহন করতে ব্যবহার করা হয়। আরও জানা গিয়েছে, বেইজিং ২০২২ সালের মধ্যে
তাদের নতুন মহাকাশ কেন্দ্রের কাজ শেষ হওয়ার আগেই কমপক্ষে আরও ১০টি অনুরূপ রকেট উৎক্ষেপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

যেন তাঁরা প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম কক্ষপথে নিয়ে যেতে পারে। চীন যদিও মহাকাশে প্রথম নভোচারী পাঠিয়েছিল ২০০৩ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশক পর।
চীন রাশিয়ার সহযোগিতায় একটি চান্দ্র স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনাও করেছে। বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে বলা যেতে পারে যে কারিগরি ও প্রযুক্তির দিক থেকে মহাকাশ অভিযানে কিছুটা পিছিয়ে আছে চীন।

এই অবস্থায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রূপে দেখা দিয়েছে তা হল, এই- ধ্বংস হওয়া রকেট লং মার্চ ফাইভ -বি’র মূল অংশ কোথায় পড়তে পারে? আর্থ অবজারভেটরি সিঙ্গাপুরের জেসন স্কট হেরিন বিবিসিকে বলেছেন, “মধ্যাকর্ষণ টানের ফলে এই ধ্বংসাবশেষ নীচের দিকে আরও ঘণ বায়ুমণ্ডলের দিকে নামতে থাকবে, এর ফলে মধ্যাকর্ষণ টান এবং নীচের দিকে নেমে আসার গতিবেগ আরও বাড়তে থাকবে।” জেসন স্কট বলেছেন,”একবার এই প্রক্রিয়াটি
শুরু হয়ে গেলে বস্তুটি একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে নীচের দিকে ধেয়ে আসতে থাকবে।

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডল ক্রমেই ঘন হতে থাকায় রকেটের ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ আগুনে পুড়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যে অংশগুলো পুড়বে না সেগুলোই পৃথিবীতে ভেঙে পড়বে। যদি এই সমস্ত কিছু অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়ে থাকে তাহলে কোথায় রকেটের ধ্বংসাবশেষ পুড়বে এবং তা কোথায় এসে পড়বে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বা সঠিক পূর্বাভাসও দেওয়া দেওয়া সম্ভব হবে না।

কিন্তু ঠিক কোথায় ভেঙে পড়বে এই রকেটের ধ্বংসাবশেষ? রকেটটি ভেঙে পড়লে ক্ষয়ক্ষতিই বা কী হতে পারে, এ নিয়ে আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, রকেট ভেঙে পড়লেও তাতে মানব জীবনে খুব একটা ক্ষতি হবে না। সম্ভবত কোনও মহাসাগরে ভেঙে পড়তে পারে রকেটটি। কিন্তু, এখনই নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না।

তথ্যসূত্র ও চিত্র ঃ বিবিসি নিউজ।

Advertisements

Leave a Reply