‘বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান ২০১৯’ — ৮ম ও শেষ ভাগ
HnExpress নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগণা ঃ “নদীর জলে নেমেচি নাইতে। মাধবপুরের পারের ওপরে সেই মেঘনীল দিগ্বলয়ের পটভূমিতে একটা শিমুল গাছ কি সুন্দর দেখাচ্ছে। এই ইছামতী, এই মেঘমালা, এই বর্ষার সবুজ বনভূমি এমনি থাকবে।–অথচ আমরা চলে যাবো। আমাদের সকল সুখ দুঃখ নিয়ে, আজকের এই মেঘ মেদুর সন্ধ্যার সকল অনুভূতি নিয়ে আলোক জ্বেলে এগিয়ে চলুক। ঘাটের ওপর ওই বনাসিম লতার কোলের নীচে খুকুর সে ছবিটা ক্ৰমে বহুদূরের হয়ে পড়ছে।
এই পল্লী নদীটির শ্যামতীরে বাঁশ ও বনসিমলতার ছায়ায় অক্ষয় হয়ে থাকবে সে ছবি, এর আকাশে বাতাসে মিলিয়ে, কিন্তু তাকে চিনে নেবার লোক থাকবে না কেউ। কেউ এমন থাকবে না যার মনে ও ছবি বেঁচে থাকবে। বারাসাত গেলুম পশুপতি বাবুর কাছে। উনি সকালেই যেতে লিখেছিলেন। কিন্তু শরীরটা একটু খারাপ ছিল। বারাসাত নেমে দেখি এ অঞ্চলে খুব বৃষ্টি হয়ে গিয়েচে-অথচ কলকাতায় এক ফোটাও জল নেই।”
বারাসতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ রকম অনেক স্মৃতি। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তো বটেই, এলাকার অনেক প্রবীনেরও তা জানা নেই। আসলে অতীত নয়, সবাই বর্তমানকে লালন করতেই ব্যস্ত। তা হোক! তবে বারাসাতের বর্তমানের কালীপুজো তো এখন রীতিমতো বিখ্যাত!
‘বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ থিমে মণ্ডপ তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে বারাসতের কালীপুজোর ঐতিহ্যবাহী বারাসত কেএনসি রেজিমেন্ট। ৬০তম বর্ষে পাট, পাটকাঠি–সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে নিখুঁত কারুকার্যের মাধ্যমে শিল্পীরা পুজোমণ্ডপ তৈরি করছেন। পুজো কমিটির কর্ণধার তথা বারাসত পুরসভার উপপুরপ্রধান অশনি মুখার্জি জানান, তাঁদের মণ্ডপে এলে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন বাংলার বিভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন।
একসময় যখন সেভাবে মোটরযান ছিল না, তখন মানুষ যাতায়াত করতেন পালকি, গরুর গাড়ি, হাতির পিঠে চড়েই। মূলত জমিদারেরাই পালকি চড়তেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এখন সে সব দিনের কথা প্রায় ভুলতেই বসেছে, আবার অনেকেই তা চাক্ষুষই করেনি। সেই কারণেই প্রাচীন সংস্কৃতির সেইসব দিক তুলে ধরতে তাঁরা এবার নতুনত্বের থিমে পুজো করছেন বলেও জানান।
মণ্ডপে দর্শনার্থীরা এলেই এখানে দেখতে পাবেন বিভিন্ন ধরনের মূর্তি ও কলকা। ঘোড়া, পুতুল, ঘটি— থাকবে সবই। মূল মণ্ডপে থাকবে হাতির মূর্তিও। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেএনসি রোডে থাকছে আলোকসজ্জা দিয়ে তৈরি ওভারহেড গেট। এবারও দর্শনার্থীরা যাতে কেএনসি ক্লাবের মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে মাতৃপ্রতিমা দর্শন করতে পারেন তার জন্য পুজো কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকও রাখা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বারাসত থানা সংলগ্ন এই পুজোমণ্ডপে প্রতিবারই রেকর্ড সংখ্যক মানুষের ভিড় হওয়ায় এখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে এবার।
আর এই সব পুজোর মধ্য থেকে বাছাই করা বেশ কয়েকটি পুজোকে দেওয়া হবে ‘বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান ২০১৯’। উদ্যোক্তা ‘হাইলাইট নিউজ এক্সপ্রেস’। বিচারক হিসেবে থাকছেন দুই প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক অশোক সেনগুপ্ত ও দিব্যেন্দু ঘোষ, নৃত্যশিল্পী ইন্দ্রানী গঙ্গোপাধ্যায়, আন্তর্জাতিক অ্যাথলিট প্রবীর সরকার এবং ফ্যাশন ডিজাইনার প্রমিত মুখোপাধ্যায়। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন চ্যানেল হেড ইন্দ্রানী সেনগুপ্ত।
এরই পাশাপাশি মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকছে, সংবাদপ্রতিখণ, বেঙ্গল টুডে, বিবিপি নিউজ, লাভ এন অ্যাফেয়ার ও নজরে বাংলা চ্যানেল। সহযোগী পার্টনার হিসেবে রয়েছেন, ড. সিদ্দিকী ফাউন্ডেশন এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান ড. ইকবাল সিদ্দিকী (নিউরোসার্জেন, কন্স্যালটেন্ট ব্রেইন ন স্পাইন সার্জেন), চন্দনা মেমোরি অফ ট্রাস্ট এর কর্ণধার নুপুর সাহা , এসআরআইএএইচসি এর কর্ণধার কুমারেশ রায় প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় থাকছেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী জয় সরকার।