“আশ্রয়ের আশ্বাস”, এক অন্য রকম মানবিক মুখ
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, বেহালা ঃ শুক্রবার দুপুর আন্দাজ ১টা নাগাদ বেহালার পর্ণশ্রী থানায় খবর আসে, বঙ্কিমপল্লী এলাকায় একটা কিছু নিয়ে অশান্তি দানা বাঁধছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে থানার অফিসাররা দেখেন যে, একটি বাড়ির সামনে ছোটখাটো ভিড় জমেছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জনতার সন্দেহ ওই বাড়িতে নিজেদের দুই শিশু সন্তানকে বিক্রি করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন বাপ্পা জানা এবং তাঁর স্ত্রী পুনম।
কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী? অতঃপর পুলিশি জেরার পরে বাপ্পা এবং পুনম জানায় যে, জন্ম থেকেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী বাপ্পা পেশায় একজন রিক্সাচালক। সন্তোষপুরের ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী, দু’বছরের কন্যা ও তিন মাসের পুত্রকে নিয়ে টানাটানির সংসার তাদের। কিন্তু লকডাউনের সময় রোজগার আরও কমে গেছে, ফলে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি গত কয়েক মাস ধরে। ফলে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বাড়ির মালিক।
গত দিন পাঁচেক পরিবার সমেত ফুটপাথেই ছিলেন বাপ্পা। কিন্তু গতকাল সকালে দেখা হয়ে যায় দেবু মণ্ডল নামে তাঁর পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে। বাপ্পার অবস্থা দেখে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে বঙ্কিমপল্লীর নিজের বাড়িতেই নিয়ে আসেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, যতদিন মাথা গোঁজার আস্তানা না জুটছে, ততদিন নিঃসহায় পরিবারটিকে একটু আশ্রয় দেওয়া। আর সেই ঘটনার জেরেই পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে সন্তান বিক্রির গুজব, যার কোনো ভিত্তিই খুঁজে পায়েনি পুলিশ।
বরং বাপ্পা পুলিশকে জানান, ইতিমধ্যে বেহালার পইলান এলাকায় অন্য একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তাঁর বন্ধু দেবু, যিনি এক কথায় এক অন্য রকম মানবিকতার অধিকারী। তবে এই কথার সম্পূর্ণ সত্যতা যাচাই করেছে পর্ণশ্রী থানা। এছাড়াও বাপ্পা ও পুনমের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া কর্মকার।
বর্তমানে অসহায় পরিবারটি নিজেদের নতুন ঠিকানায় গিয়ে উঠেছেন এবং খুশির কথা এই যে, পইলানেরই একটি কলম প্রস্তুতকারক কারখানায় চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে বাপ্পার জন্য। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে পর্ণশ্রী থানা।
তথ্যসূত্র ও চিত্র ঃ কলকাতা পুলিশ ফাইল।