মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বাজেট পেশ করলেন, প্রায় বিরোধী শূন্য বিধানসভায়—
HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে সেই পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে তার কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। ঠিক এমনই সিধান্ত নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিধানসভায় আসন্ন অধিবেশনে রাজ্য বাজেট পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বর্তমানে অসুস্থ। সেই কারণে চিকিৎসক এর পরামর্শে বাড়ির বাইরে বেড়ানো নিষেধ থাকার কারনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আপাতত গৃহবন্দি।
ফলে গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। যদিওবা তা নিয়ে বিরোধীরা কটূক্তি করতে ব্যাস্ত। কারণ হিসাবে তাদের বক্তব্য ২১ এর ভোটের আগেই তাড়াহুড়োতে বাজেট পেশ আদপে হলো ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর আসল উদ্দেশ্য। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বাজেট পেশ এই প্রথম না হলেও তবে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তা প্রথম। সূত্রের খবর অনুযায়ী অতীতে বাম জমানার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও ১৯৮৪ সালে বাজেট পেশ করেছিলেন। কারনের হেতু বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, তৎকালীন বাম জমানার অশােক মিত্র এর সাথে দলের মত পার্থক্যের জেরে অর্থমন্ত্রীর পদ ও যাদবপুরের বিধায়ক পদ ত্যাগ করে ছিলেন তিনি।
সেই সময় জরুরি ভিত্তিতে দফতরের দায়িত্ব নেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ফলত বাংলার রাজনীতিতে প্রথম পুরুষ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বাজেট পেশ করেন তিনিই। এদিন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে রাজ্যের বাজেট পেশ শুরু হওয়ার আগে এবার আর রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বক্তব্য রাখবেন না। আর এতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘রাজ্য বাজেট শুরুর প্রথম দিন সবার প্রথমে রাজ্যপালের ভাষণ থাকে। কিন্তু এ বছর সেটা থাকছে না। এটা একেবারেই ঠিক হল না’।
বাজেট প্রস্তাবে মোট প্রায় ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে বিপুল টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে পার্শ্ব শিক্ষকদের বেতন ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তফশিলি জাতি, উপজাতি, জনজাতিদের জন্য অলচিকি ভাষায় স্কুল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি এবং নেপালি, কামতাপুলি, রাজবংশী ভাষাতেও স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে রাজ্য বাজেটে। আর গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ৪৬ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি হবে এবং সংস্কার করা হবে ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা।
আগামী ৩ বছরে বিভিন্ন বিভাগে শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ, পর্যটন শিল্পে ১০ হাজার থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ, পার্ক সার্কাসে স্কাইওয়াক এর ভাবনা, পরিবহণে লাইসেন্স রিনিউর দেরী হলে জরিমানা মকুব, বালুরঘাট, মালদহ, কোচবিহার থেকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ, সেচ কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, ব্যবসায়িক যাতায়াতে ৩০ জুন পর্যন্ত কর মকুব, অন্ডাল বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রুপে রূপায়নের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ, তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রুবি থেকে কালিকাপুরে উড়ালপুল, উল্টোডাঙা থেকে পোস্তা বাজারে উড়ালপুল, চিংড়িঘাটা থেকে নিউটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল, পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত উড়ালপুল নির্মাণে ২,৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
‘যুবশক্তি’ নামে নতুন প্রকল্পে যুবকদের ইন্টার্ন হিসেবে নেওয়া হবে। ইন্টার্নশিপ শেষে চাকরি।রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হওয়ার ফলে নগদ জমা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান। নেতাজি সুভাষ রাজ্য যোজনা কমিশনের জন্য ৫ কোটি ব্যয়বরাদ্দের ঘোষণা, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী প্রদানের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। সাথেই মাতৃবন্দনা নামে নতুন প্রকল্পের জন্য ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করা হয়। কোভিডের জন্য ৪৫ হাজার শ্রমিককে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে একর পিছু অনুদান ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা বৃদ্ধি করা হলো।
অন্যদিকে, মাদ্রাসাগুলিকে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এদিন বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই চিৎকার চেঁচামেচির ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় বিধানসভায়। এদিকে বিজেপি বিধায়করা তুমুল হই-হট্টগোল শুরু করেন বলে জানা গেছে। সুত্রের খবর, স্পিকারের বারন সত্তেও তাঁদের থামানো যায়নি। বামেরা আগেই বাজেট বয়কট করেছিলেন। ফলত বিরোধীশূন্য বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।