বাগবাজার ঝুপড়ির পর স্ট্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের অফিসে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, ১০ লক্ষ টাকা ও চাকরি দেওয়ার ঘোষনা মুখ্যমন্ত্রীর
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ এবারে আর ঝুপড়ি নয়, স্ট্যান্ড রোডের পূর্ব রেলের অফিসে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। বাগবাজার এর ঝুপড়িতে দাহ্য পদার্থ থাকার কারনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছিল বহু পুরাতন বাগবাজারের সেই বস্তি। কিন্তু রেলের এই নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের ১৩ তলায় বিপজ্জনক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো তারের কুণ্ডলী। এছাড়াও রয়েছে ফলস্ সিলিং, প্লাইউড দিয়ে তৈরি কিউবিকল। এক কথায় পুরোটাই জতু গৃহের মতো অবস্থা থাকার কারনে দাবানলের মতো আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেই প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান।
সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, বিধি মতো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল না। কলকাতা পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র এ কথা জানিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল, দমকলের চার কর্মী, পুলিশের এক অফিসার এবং আরপিএফ-এর একজন জওয়ান ছিলেন।এদিন রাত প্রায় ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে আগুনে পোড়া নয়টি মরদেহ এসে পৌঁছায়। হাসপাতালে মৃতদের কয়েক জনের পরিবারের লোকজন এসেও পৌঁছান।
রেলের ডেপুটি সিসিএম পার্থসারথি মণ্ডলের দেহ শনাক্ত করেন তাঁর মেয়ে ও জামাই। পার্থ সারথির গাড়ির চালক সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্যার প্রতিদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ নীচে নেমে আসতেন। আজ আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর থেকেই স্যারকে ফোন করতে শুরু করি। কিন্তু ফোনে পাইনি তাঁকে।’’
রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মৃতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘‘এখনও বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। লিফটে উঠতে গিয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে চারজনই ছিলেন আমাদের দমকলকর্মী। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আরও দুজনের মৃত্যুর আশংকা করা হচ্ছে। আমরা ঠিক করেছি, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ও পরিবারে একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়া হবে। যদিও জানি মৃত্যুর কোনও বিকল্প হয় না। আমাদের সকলেরই জানা উচিত, আগুন লাগলে কখনোই লিফট ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে দক্ষ ছিলেন। হয়তাে তাড়াতাড়ি আগুন নেভানাের জন্যই লিফটে উঠে ছিলেন। তবে যাই হােক না কেন সেটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার।”
এটি রেলের অনেক পুরনো ভবন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আগুন নেভাতে আসা সাত জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে উদ্ধারকারীদের অনুমান। এখনও দু’জনের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন। বস্তত এদিন তাঁরা আগুন নেভানোর কাজে সহযোগিতা করতে লিফটে করে উঠতে গিয়েছিলেন। সেখানেই বৈদ্যুতিক আগুনের ঝলকে পুড়ে যান তাঁরা। যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দমকলের দুটি ইঞ্জিনের বহু সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘লিফটে উঠে ১৩ তলায় পৌঁছে লিফটের দরজা খোলার পরে আগুনে ঝলসে প্রায় পুড়ে যান তাঁরা। আমরা উপরে উঠে দেখি, লিফটের মধ্যেই পাঁচ জনের দেহ পরে রয়েছে। বাইরে পরে ছিল আরও দু’জনের দেহ। পোশাক দেখেই বোঝা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে চার জন দমকলকর্মী। এছাড়াও এক জন আরপিএফ এবং একজন হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই ছিলেন। একজন ব্যক্তিকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।’’