সম্পাদকের কলমে ঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের শতবর্ষ
HnExpress সম্পাদকীয় সাপ্তাহিক, ১৩ ফেব্রুয়ারি ঃ ‘‘আশ্চর্য এখানকার মানুষ।… এত লড়াই সত্ত্বেও ভারি সুন্দর শহর। এ পর্যন্ত কারো মুখ ভার দেখলাম না। সবাই হাসিমুখে। না এলে সত্যিই এ কালের সবচেয়ে বড় তীর্থ অদেখা থেকে যেত।’’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের চিঠি, ২১ মার্চ ১৯৭১-এ লিখছেন গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, হ্যানয় থেকে। (সুভাষ মুখোপাধ্যায়— চিঠির দূরত্বে। সম্পা — অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়,(অনুপমা প্রকাশনী)।
জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হল কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩)। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য বাঙালি কবি ও গদ্যকার। পশ্চিমবঙ্গ তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সহযোগিতায় তাঁর শতবর্ষ স্মরণে বাংলা আকাদেমি আয়োজন করল একাধিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হল কবিকে।
“প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য। পরিণত বয়সে গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পায়জামা, মাথাভর্তি ঘন কোঁকড়ানো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ, চোখে চশমা, বামে চশমার নিচে বড় একটা আঁচিল – কলকাতার প্রতিবেশে এরকম একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
শতবর্ষ উপলক্ষে চৈতালী দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে ‘শ্রাবস্তী’-র উদ্যোগে বুধ ও বৃহস্পতিবার ’নারী সেবা সঙ্ঘ’-র কৌশিক হলে চলল প্রদর্শনী (১১-৮টা)। প্রথম দিন সন্ধে ৬টায় গানে-কবিতায় প্রতুল মুখোপাধ্যায় শ্রীজাত প্রমুখ। দে’জ়, আইজ়েনস্টাইন সিনে ক্লাব, সপ্তাহ ইত্যাদির উদ্যোগে গোর্কি সদনে শতবর্ষ পালন হল ১৩-১৬ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দিন প্রদর্শনীর উদ্বোধনে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। নানা অনুষ্ঠানে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, জয় গোস্বামী প্রমুখ।
আদি লেক পল্লি ক্লাবে উদ্যাপন শুরু হয় মঙ্গলবার সকালে কবির মূর্তিতে মাল্যদানের মাধ্যমে। সমাপ্তি ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় কবিতা-গান-স্মৃতিচারণে, পরিচালনায় অভীক মজুমদার।
১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিশোর ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্যরূপে যোগ দেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এই সময় কবি সমর সেন তাঁকে দেন হ্যান্ডবুক অব মার্কসিজম নামে একটি গ্রন্থ। এটি পড়ে মার্কসীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন কবি ১৯৩৯ সালে লেবার পার্টির সঙ্গে সংযোগ হয় তাঁর।১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক। পরে ছাত্রনেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্ররোচনায় লেবার পার্টি ত্যাগ করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন।১৯৪২ সালে পান পার্টির সদস্যপদ।
বাংলা আকাদেমি আয়োজন করছে কবির স্মরণে নানা অনুষ্ঠান। গতকাল সন্ধ্যায় গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় প্রদর্শনী ‘যত দূরেই যাই’, উদ্বোধন করলেন বাংলা আকাদেমির চেয়ারপার্সন শাঁওলী মিত্র। প্রদর্শনীতে প্রায় ৫ ফুট বাই ৪ ফুট ৩৬টি বোর্ডে প্রয়াত কবির জীবনের নানা আখ্যান, তাঁর কবিতার নানা উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। ঠিক মাঝখানে প্রায় ১০ ফুট বাই ৭ ফুট একটি বোর্ডে প্রয়াত কবির ছবি। নিচে লেখা, “এই পৃথিবীতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে/ দেখ,/ আমি জটায় বাধছি/ বেদনার আকাশগঙ্গা।” পাঁচটি কাছের দেরাজে আছে প্রয়াত কবির নানা বইয়ের নমুনা।
খূব ভালো খবর ।