রাজবংশী সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র কৈলাশ বর্মণ
HnExpress পল মৈত্র, বিশেষ প্রতিবেদন ঃ ১৯৯৬ সালের ২৮ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে প্রতিভার মুকুট নিয়ে জন্ম হয় মামার বাড়িতে। মা দিনমজুরী করে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি করে ছেলেকে তার মামার বাড়িতে রেখে মানুষ করেন। মামার সহযোগিতায় আংরা ভাষা বোর্ড স্কুলে পঠন পাঠন শুরু হয়। এরপর কৈলাশ বড় হওয়ার সাথে সাথে সেসময় থেকেই তার জাতির প্রতি সমাজের প্রতি কিছু করবার ভাবনা জাগে। প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে নলিনী রঞ্জন মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে স্কুলে বরাবরই চতুর্থ স্থানে থাকতো কৈলাশ। এরপর নাথুয়াহাট আশ্রম গভঃ স্পোসর্ড হাই স্কুলে মাধ্যমিক পাশ করে এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে মা- মামা ও এলাকার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করে। তারপর কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষে নামী ছাত্রদের মধ্যে একজন তারা ছিল কৈলাশ। ছোট থেকেই অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যতা ছিল নিত্য দিনের সাথী।
শুধুমাত্র দারিদ্রতার অভাবে কৈলাশের পঠন পাঠনে ভাঁটা পড়ে কলেজ অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এরপর দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বি.পি.ও সেক্টরে হিন্দুজা গ্লোবাল সলিউশন নামী কোম্পানিতে সি.আর.ও চাকরি করতে শুরু করলেও কিছুদিন্যপর সেই চাকরি ছেড়ে মধ্য ভারত পাওয়ার প্রজেক্ট লিমিটেড কোম্পানিতেও চাকরি শুরু করে কৈলাশ। কিন্তু সেই কাজেও তার মন টেকেনি কারন এই কাজে থাকলে সে সমাজের জন্য কিছু করতে পারবেনা সে কথা ভেবেই সেই কাজও ছাড়তে হয় তাকে। খুব ছোট বেলা থেকেই ক্যারাটের সঙ্গে যুক্ত কৈলাস। আত্মরক্ষার কৌশল সে ছোট থেকেই শিখতে শুরু করে। কৈলাশ বর্মন বলেন, ক্যারাটের মধ্যে দিয়েই জাতির প্রতি, সমাজের প্রতি কিছু করতে চাই বর্তমানে দ্বিতীয় স্তরের ব্যাকবেল্ট-এর সঙ্গে জাতীয় বিচারক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছি। এই মুহূর্তে শতাধিক স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে ক্যারাটে শেখাই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এবং তারা সুস্থ মনোবল ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমার কাছে ক্যারাটে শিখছে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখি প্রতিবাদ শুরু করি আর তাতেই বেশ কয়েকবার
কয়েকজন দূস্কৃতীরা রাতের অন্ধকারেও আক্রমণ করেছে আমায় কিন্তু এই ক্যারেটের কৌশলের কাছে তারা হার মানে।
অনেকবার হত্যার হুমকিও এসেছে কিন্ত সেসবকে উপেক্ষা করে ভয় কে জয় করে ক্যারাটে নিয়ে সমাজের প্রতি কিছু করার প্রচেষ্টা করে চলেছি। অনেক কিছুই করার ইচ্ছে থাকলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থাভাব, আমার স্বপ্ন জাপান থেকে ক্যারাটে সর্বশেষ ডানব্যাকবেল্ট করতে চাই পাশাপাশ নিজেকে একজন বেস্ট কোচ হিসেবে পরিচয় দিতে চাই পাশাপাশি সরকারি আর্থিক ভাবে সহযোগিতার খুব প্রয়োজন আর তা পেলে আমি সমাজ ও ক্যারাটেকাদের জন্য কিছু করতে সক্ষম হবো, সর্বশেষে বিশ্বের সমস্ত ক্যারাটে কোচ-অনুশীলনকারী ও প্রেমিকদের আন্তরিক প্রণাম জানাই। রাজবংশী সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র কৈলাশ বর্মনকে নিয়ে (এস.এস.কে.এ) প্রেসিডেন্ট প্রলয় দে সরকার জানান, “ক্যারাটে শুধু শারীরিক শিক্ষার জন্যই নয়, এটা জীবন গড়ার একটা আর্ট ।
ক্যারাটের মাধ্যমেই একজন সুনাগরিক তৈরি করা সম্ভব”। পাশাপাশি ক্যারাটে ছাত্র সৌমিক পাল বলেন, “ক্যারাটে আমি খুব ভালোবাসি এটা আমার নিজের প্রতি আত্ম বিশ্বাস বাড়িয়েছে । আমি মনে করি ক্যারাটে প্রত্যেকটি মানুষের শেখা প্রয়োজন”।অন্যদিকে জেলা চীফ প্যাট্রোন ডঃ কৃষ্ণ দেব জানান, এই ক্যারাটে যখন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে সেখানে আমাদের দেশের জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও ক্যারাটে কে জায়গা করে দেওয়া উচিত।
আমাদের রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে শুধুমাত্র নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ক্যারাটে শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধু আত্মরক্ষার কৌশল ই নয় শরীর চর্চার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম তাছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ক্যারেটে অনেক স্থান অর্জন করে নিতে পারে তাই শুধুমাত্র নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের জন্য নয় প্রাথমিক থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কে ছাত্র-ছাত্রী ও ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। পরিশেষে বলা যাই জলপাইগুড়ির ক্যারাটে প্রশিক্ষক কৈলাশ বর্মনের দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে যেভাবে এগিয়ে চলেছে তা সত্যি তার জাতির প্রতি গর্ব বোধের জায়গা তৈরী করেছে পাশাপাশি কৈলাশের বন্ধুসুলভ আচরন ও মিশুকে মনভাব সকলকে আকৃষ্ট করে তা বলাই বাহুল্য। সে আরো বড় হতে চাই তার সমাজ তার রাজবংশী জাতির জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে জলপাইগুড়ি শহরের বিশিষ্টদের অভিমত। আপাতত কৈলাশ বর্মন একাগ্রতার সাথে উজ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ অর্জন করতে গলদঘর্ম হয়ে নিজের ক্যারাটের ছাত্র-ছাত্রীদের কৌশল শেখাতে ব্যস্ত।
ভালো খবর ।