রবীন্দ্র অর্ঘ্য ঃ ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বলছি গুরুদেব
HnExpress কবির কলমে, দেবনাথ চক্রবর্তী ঃ তোমার কাছে কিছু অনুযোগ রাখছি…
অক্লান্ত পরিশ্রমে মানবজমিন গড়বে বলে দুনিয়া কাঁপিয়েছো জীবনভর।
কিন্তু ভবিষ্যতের ‘মানুষ’ খুঁজে পেয়েছিলে কি!
মুষ্টিমেয় কিছু আদর্শবান তোমাকে ঘিরে থাকতেন ঠিকই…..কিন্তু ‘মানুষ’!
এতো এতো গ্রন্থ লিখেছো….
এতো কাব্য, উপন্যাস, সঙ্গীত, ছবি….
সবই কি আজ গুরুত্বহীন!
যদি তা না হয় তবে মানুষ কেন আজ এতো ধ্বংসলোলুপ!
বলতে পারো গুরুদেব!
পারো বলতে!
পারো না।
তোমার পাথরে বারবার ধাক্কা দিয়েও উত্তর পাই নি আমি।
তোমার বানী আজ শুধুই ব্যবসা…. পেট পুজোর দোহাই দিয়ে লালিপপের মতো দেখছি তোমার হাজারো ছবি….
কিন্তু মিটছে না ক্ষুধার জ্বালা।
কিছুক্ষন আগে যে ‘সাধারন মেয়ে’-টি খুন হলো….
কি সান্তনা দেবে তুমি তাকে!
যাদের জন্য লিখলে ‘শিশু ভোলানাথ’
তাদের হাড় জিরজিরে শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখেছো…তারা কিভাবে থাকে!
তোমার নন্দিনী আজও খুঁজে পায়নি রঞ্জনকে….
‘বিশু পাগল’ আজও ভিক্ষে করে রাজপথে
আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তোমার চল্লিশফুট উত্তুঙ্গ স্তম্ভের দিকে।
দেখতে পাচ্ছো না তাইতো!
তোমার নিশ্চুপ পাথুরে দেহ আমি আর মেনে নিতে পারছি না।
আমি শুধু উত্তর চাই গুরুদেব
উত্তর চাই।
তোমার অমিতও আর লাবণ্যকে ভালোবাসে না।
নিয়মিত খুঁজে চলে জ্যামিতিক আকার বহু বহু ‘কেটি’ -র মধ্যে।
দেখতে পাও!
পাও না….কেননা তোমার দৃপ্ত চোখ আজ পাথর।
অনেক চেষ্টা করেও একটা ‘বলাই’ বা ‘রতন’ খুঁজে পাইনি….
কাবুলিওয়ালারাও আজ মিনিকে খোঁজে না আর।
জানো তুমি!
‘মাষ্টারবাবু’-কে আজ দূরবীনে খুঁজছি।
ব্যর্থ….
ব্যর্থ তুমি আজ আগুন জ্বালাতে….
পুড়বে না আর কোনও আবর্জনা।
এ বড় নিদারুন সংকট….
এই সভ্যতাই চেয়েছিলে বুঝি!
তুমি দিব্যি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছো…..
‘কথা কও গুরুদেব , কথা কও’।
ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে আজ আবার তোমার জন্মদিন….
কিছুক্ষন পরেই শাঁখ ধ্বনিতে….
নাচে-গানে-নাটকে মেতে উঠবে পৃথিবী….
একবার তুমি চেয়ে দেখো….
তোমার শুদ্ধ প্রতিকৃতির পেছনে সাজানো রয়েছে সার সার সুরা আর চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় আদিম হিংস্রতা।
এ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি গুরুদেব!
তুমিই না বলেছিলে ‘সারাজীবন ছাইপাশ লিখে গেলাম।’
আজ ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে বলছি গুরুদেব….
‘আর আমি এই ছাইপাশ পড়বো না – পড়াবো না।
কেননা আমি ‘মানুষ’ হতে পারিনি
তুমি ‘মানুষ’ করতে পারো নি গুরুদেব….॥