রক্তেই রয়েছে সমাজসেবা, তাই আর্থিক প্রতিবন্ধকতাও বাঁধা মানলো না
HnExpress ২৩শে এপ্রিল, অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া ঃ সপ্তর্ষী, তানিয়া, অতনু করাতি, কুন্তল, সোমনাথ বোস, রঞ্জন বেরা —গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার বাসিন্দা। এরা কেউই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়ে নয়। এদের বয়স পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ হবে। কোন রকমে উপার্জন করে জীবন চলে। তবে বর্তমানে করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের জন্য সেই উপার্জনও বন্ধ। কিন্তু রক্তে যে রয়েছে সমাজসেবার অদম্য ইচ্ছে, তাই কোনো আর্থিক প্রতিবন্ধকতাই তাদের কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
প্রসঙ্গত, গত বছর পুজার সময় এরাই নিজেদের উপার্জনের টাকা নিজেদের জন্য খরচ না করে, বেশ কয়েক হাজার পোশাক কিনে দরিদ্র, দুস্থ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের মধ্যে বিতরণ করে। আর সেই সময়, তাদের এই কাজ করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করায় তাঁরা বলেছিল, ছোট বেলায় অনেক কষ্টে ছিলাম। তবু পুজার সময় বাবা-মা যখন নতুন পোশাক কিনে দিত, তখন ভীষণ আনন্দ হত। বারবার নতুন পোশাকের গন্ধ শুঁকতাম। সেই সময়ের সেই আনন্দটা আজও ভুলতে পারিনি।
আমাদের তখনের সেই আনন্দ, সেই অনুভূতির কথা চিন্তা করে, সেই আনন্দকে তাদের সাথে ভাগ করে নিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলছে একটানা লকডাউন পিরিয়ড। দিনমজুর, ভিখারী, ভবঘুরেরা সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। এদের অবস্থা দেখে আবারও পথে নামল সপ্তর্ষী, অতনু, তানিয়ারা। ৬ নং জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা পরিযায়ী মানুষদের অভাবনীয় কষ্ট দেখে এদের জন্য কিছু করার জন্য চিন্তা-ভাবনা শুরু করে।
এই ছেলে-মেয়েগুলো একত্রিত হয়ে আলোচনা করে, নিজেদের সাধ্যমত কিছু খাবার রান্না করে সঙ্গে পানীয় জলের বোতল ও হাত ধোয়ার সামগ্রী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে মুম্বাই রোডের দিকে। আর এদের ত্যাগ, এদের এই মানবিক উদ্যোগ, এদের সমাজ সেবার মানসিকতা ও আন্তরিকতা দেখে বহু সচেতন মানুষ, যুবক-যুবতীও এদের পাশে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছেন। এই যুবক-যুবতীরা মিলিত ভাবে একটি সংগঠনও তৈরী করেছেন। আর সংগঠনের নাম দিয়েছে “আনন্দধারা”।
সংগঠনের সদস্য রঞ্জন বেরা বলেন, আমরা প্রথমে আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে কাজে নেমেছিলাম। এখন বহু সচেতন মানুষ এবং যুবক-যুবতীরাও আমাদের কাজে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের পাশ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খন্ড, ওড়িশ্যা থেকে বহু শ্রমিক মুম্বাই রোড ধরে প্রায় রোজই যাতায়াত করছেন। এদিকে জাতীয় সড়কের দুই পাশের দোকান গুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে জরুরী পরিষেবায় যুক্ত থাকা গাড়ির চালকরা আহার ও পানীয় জল পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বললেন, এছাড়াও বীরশিবপুর, কুলগাছিয়া প্রভৃতি রেলস্টেশনে বহু ভবঘুরে, ভিখারী আশ্রয় নিলেও রয়েছে অভুক্ত অবস্থায়। তাই এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের সাধ্যমত তাদের জন্য মধ্যাহ্নের আহার ও পানীয় জলের বোতল, রাতের জন্য ঝুরিভাজা, মুড়ি, বিস্কুটের প্যাকেট, পানীয় জলের বোতলের ব্যবস্থা করে বিতরণ করে চলেছি। তবে আমরা এই কাজ করছি সরকারি সমস্ত রকম স্বাস্থ্য বিধি মেনেই।
সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা অতনু করাতি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যে ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে ত্রাণের কাজ করার প্রয়োজন, আমরা সে বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও এলাকার সচেতন মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে করে চলেছি। আর আগামী দিনে আরও বেশী সংখ্যক মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। লকডাউন উঠে গেলেও পরিস্থিতি যতদিন না স্বভাবিক হয়, যতদিন না এরা স্বচ্ছল অবস্থায় ফিরে আসে ততদিনই আমরা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করব।