সাংবাদিকের মানবিক মুখ : যৌন লালসার শিকার বৃদ্ধাকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করালেন সাংবাদিক
HnExpress দেবাশিস রায়, বর্ধমান : অন্যান্য দিনের মতো পেশার তাগিদে পথে নেমেছিলেন সাংবাদিক সুজাতা মেহতা। বর্ধমান হাসপাতালে, একটি দুর্ঘটনার খবর করতে। সঙ্গী ছিলেন সহকর্মী সুমিত। হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা গেটের সামনে জটলা দেখে এগিয়ে যান। দেখেন এক প্রায় ৭৫-৮০ বছরের বৃদ্ধা শুয়ে আছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁর নিম্নাঙ্গ। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কেউ তাঁকে সাহায্য তো দূরে থাক, কী হয়েছে তাও জানতে চাননি। মহিলার অবস্থা দেখে সুজাতা দুর্ঘটনার খবরের কথা মাথা থেকে সরিয়ে এগিয়ে যান তাঁর কাছে। নাম ঠিক করে বলতে না পারলেও ওই বৃদ্ধা জানান, ওনার বাড়ি হুগলির শ্যাওড়া গ্রামে। পেশা ভিক্ষাবৃত্তি।
তিনি জানান, কাল অর্থাৎ শুক্রবার সকালে বর্ধমান স্টেশন এলাকায় একটি বন্ধ দোকানের সিঁড়িতে শুয়েছিলেন। এসময়ে এক মাঝবয়সী ব্যক্তি তাঁকে বলেন ‘মা’ চা খাবে তো চলো আমার সঙ্গে। এরপর ওই ব্যক্তি পাশের একটি নির্জন স্থানে তাঁকে নিয়ে গিয়ে মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে। এমনকি বৃদ্ধার যৌনাঙ্গেও রীতিমতো অত্যাচার চালান। তারপর ওই মহিলাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। কোনওক্রমে বৃদ্ধা স্টেশনের বাইরে এসে দেখেন চারটি অল্পবয়সী যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ওই যুবকদের অনুনয়-বিনয় করে তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে বলেন। যুবকেরা বৃদ্ধাকে রিকশা করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। রক্তে ভিজে সাদা কাপড় লাল হয়ে গেছে।
তারপর কেটে গেছে অনেক সময়। অনেক রোগী ও তার পরিবারের লোকজন দেখেছেন এই দৃশ্য। দেখেছেন অনেক ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতালের কর্মীরা। কিন্তু ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে কেউ ভর্তি করতে এগিয়ে আসেননি। উল্টে আধুনিক মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সুজাতাদেবী, তাঁর সহকর্মী ও হাসপাতালের এক আয়ার তৎপরতায় বৃদ্ধাকে ভর্তি করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগে। শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত বৃদ্ধার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
হায়রে! আমরা এখন কোন যুগে বাস করছি। মা সম্বোধন করেও এমন জঘন্য কাজ করা যায়! ধন্যবাদ বা অভিনন্দন দিয়ে সুজাতা বা তাঁর সহকর্মীকে ছোট করব না। সেলাম আপনাদের। আপনারাই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যে সাংবাদিকতার আসল অর্থ শুধু সংবাদ সংগ্রহ করে তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা নয়।
মানুষের সাথে, মানুষের পাশে থাকাই সাংবাদিকতার মূললক্ষ্য। প্রসঙ্গত, সুজাতা ওই বৃদ্ধার জবানবন্দি ভিডিওতে সংগ্রহও করেছেন বলে জানিয়েছেন। বর্ধমানের পুলিশ প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ধর্ষণের মামলা রুজু করে কিনা এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন! এইচ এন এক্সপ্রেস-এর এই প্রতিবেদন রাজ্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আমরাও এর সুবিচারের অপেক্ষায় রইলাম।
তথ্য ও ছবি : সুজাতা মেহেরার ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।