মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন পূজা মহাশোল সিংহ পরিবারের লক্ষী সরস্বতী পূজা ও হরিবাসর
HnExpress ৩০শে জানুয়ারি, নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর ঃ গ্রামবাংলার উন্নতি হয়েছে সবুজ বিপ্লবের পর, তার আগে বাৎসরিক ধান চাষের সমাপন হতো পৌষ মাসে, আর মকর সংক্রান্তির পর এলাকার মানুষদের জন্য বসতো গ্রামীণ মেলা। গ্রামের হরিমন্ডপ ছাড়াও ঝিলিপির দেখা মিলতো সত্যিকারের, মহাশোল গ্রামের রাজপুত ক্ষত্রিয় পরিবারের পাঁচটি মূল অংশ বর্তমানে, কিন্তু সেই প্রথম পুরুষ থেকেই চলে আসছে এই সময় একত্রে লক্ষী সরস্বতীর আরাধনা ও চব্বিশ প্রহর ব্যাপী অখন্ড হরিনাম সংকীর্তন বা হরিবাসর।
গতকাল সকালে ঘট ডুবিয়ে মায়ের অঞ্জলি সম্পন্ন হয় বিকেল পাঁচটায়। এলাকার মানুষের একমাত্র বিনোদনের এই পূজাতে প্রায় দুশ বছরের বেশী সময়কাল ধরেই সাড়ম্বরে পূজিত ও পালিত হয়ে আসচ্ছে মহাশোল ক্ষত্রিয় বংশের লক্ষী সরস্বতী পূজা। কথিত আছে নয় পুরুষ আগে অর্থাৎ প্রায় ২০০ বছরের বেশী সময়ে এই পূজার প্রচলন হয়েছে। সেই থেকে বংশানুক্রমে এই পূজা চলে আসছে। গ্রামের ‘পাঁচবংশে’র সবথেকে বয়স্ক পুরুষ এই সিংহ বাড়ির পূজোর মূল আহ্বায়ক হন। গ্রামের পক্ষে চিত্তরঞ্জন সিংহ, দুলাল চন্দ্র সিংহ, নিরঞ্জন সিংহ, নেপাল সিংহ এই বছরের পরিকল্পনা ও এই পূজার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।
কথিত আছে সিংহ বংশের আদি পুরুষ সৈজন সিংহ বিহার থেকে প্রায় সাত পুরুষ আগে বাংলায় এসে মহাশোল মৌজাতে জমি কিনে বসতি পত্তন করেন। তারপর মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। পুরোহিত সজ্ঞয় বাবু বললেন যে কথিত আছে মাঘ মাসে একদিন রাত্রে বর্তমান মন্দির প্রাঙ্গনে রাত্রিযাপন করা গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক দুই বোন এর স্বপ্নাদেশ পান ও এই স্থানে পূজা করার কথা বলেন। সেই সময় মাঘ মাস ও সরস্বতী পূজা নিকটে হওয়ায় দেবী লক্ষী সরস্বতী পূজা শুরু হয়।
এবং সেই থেকেই মহাশোল গ্রামে মা লক্ষী সরস্বতী পূজা এক মেড়ের মধ্যে দাসদাসী সহ প্রচলিত হয়। পরবর্তীকালে চব্বিশ প্রহর ব্যাপী হরিবাসর এর আয়োজন করা হয় এই পূজা উপলক্ষ্যে। তখনকার একচালার খড়ের মন্দির এখন পাকার সাথে হরিমন্দির। পরবর্তীকালে পূজার পরের দিন সকালে অধিবাস করে অখন্ড হরিনাম চব্বিশ প্রহর ব্যাপী সূচনা হয় ও মেলার আয়োজন হয়। প্রত্যেকদিন দুপুরে এলাকার নামী দামী কীর্তনীয়ারা ভোগ কীর্তন নিবেদন করেন।
এই উপলক্ষে শালবনী ব্লকের মহাশোল এর সিংহ পরিবারের সদস্যরা ও তাদের সমস্ত আত্মীয়স্বজন এবং আশেপাশের জগন্নাথপুর, খেমাকাটা, ঝাঁটিয়াড়া, মন্ডলকূপী গ্রামের গ্রামবাসীরা ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা এসে উপস্থিত হয় ও মেলায় অংশগ্রহন করে। এইভাবে মেলার কয়েকদিন বিভিন্ন দোকান বসে মিস্টি,ঝিলাপী সহ বিভিন্ন দোকান বসে ও মেলায় ব্যাপক জনসমাগম হয়। মায়ের হাতে পাকানো গুড় দিয়ে চিঁড়ের লাড়ু এই মেলার বিশেষ আর্কষন। হরিনামের সমাপনের পর দুই দিন ব্যাবস্থা থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এইভাবে পূজা ও হরিনাম সহ মেলা ৭ দিনের হয়।