“মানুষ মানুষেরই জন্য”— ৬১ কিলোমিটার মোটর সাইকেল চালিয়ে গিয়ে রক্তদান করে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে নজির গড়লেন এক ব্যাক্তি

HnExpress ৬ই জুন, সুদীপ ঘোষ, নদীয়া ঃ “মানুষ মানুষেরই জন্য”— ৬১ কিলোমিটার মোটর সাইকেল চালিয়ে গিয়ে রক্তদান করে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে নজির গড়লেন এক ব্যাক্তি। প্রসঙ্গত, কাঠুরিয়া পাড়া নিবাসী তপন সিংহ নামে এক ব্যক্তি যিনি বহু দিন ধরে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত, যার বর্তমান বয়স ৬০ বছরের উর্ধে। সেই তপন বাবুর মাসে তিনবার রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই করোনা মোকাবিলায় লকডাউন চলাকালীন প্রতিদিনই তিনি রক্ত নিতে গিয়ে ফিরে আসতেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে।
কারণ শক্তিনগর ব্লাড ব্যাংকে কোন প্রকার রক্ত এর সংরক্ষণ করা ছিল না। ব্লাড ব্যাংকে রক্ত না থাকার প্রধান অন্যতম কারণ নিশ্চয়ই কারোর অজানা নয়। করোনা দাবদাহের শিকার সারা বিশ্ব, তার ফলে মানুষ হাজার কারণ থাকলেও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে এবং এতদুর হাসপাতালে এসে রক্ত দিতে তো পুরোপুরি নারাজ। এর ফল স্বরূপ রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব থ্যালাসেমিয়া রোগীদের প্রতিমাসে রক্ত প্রয়োজন, রক্ত ছাড়া বাঁচা যাদের অসম্ভব তাদের মধ্যে বিরাজমান এই ষাটোর্ধ তপনবাবু।
তার প্রতিমাসেই রক্তের প্রয়োজন হয়। অরক্ত না পেয়ে সে ধীরে ধীরে প্রায় একেবারে রক্তশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এক ইউনিট রক্ত জোগাড় করা কতটা সমস্যা সেটা কি কেউ জানেন? যারা এই সমস্যায় পড়েন শুধু তারাই বুঝতে পারেন যে এই মুহূর্তে এক ইউনিট রক্ত পাওয়া, একটা দুঃস্বপ্ন এর মত। এই করোনা নামক মহামারীর কারণে বহু জায়গায় কোনো রকম রক্তদান শিবির হচ্ছে না, ফলে ব্লাড ব্যাংক গুলো একেবারে শূন্য। এমনকি কেউ নিজের পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবকেও নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন না। কারণ প্রাণভয় যে প্রত্যেকেরই আছে, তাই কেউ এই শক্তিনগর হাসপাতালমুখি হচ্ছেন না।
তাহলে কোথা থেকে পাবেন রক্তদাতা আর কোথা থেকেই বা আসবে রক্ত? এমতাবস্থায় এগিয়ে আসে কৃষ্ণনগরের কিছু মানবিক মুখ, যাদের এককথায় কৃষ্ণনগরবাসী প্রচেষ্টা গ্রুপ বলেই চেনে। প্রচেষ্টা গ্রুপের সম্পাদক সুমন ভৌমিকের কথায় ঠিক এই চিন্তা ভাবনা থেকেই সৃষ্ট প্রচেষ্টা। তিনি আরোও বলেন যে, আমাদের সংকল্প কোন ভাবেই যেন রক্তাভাবে কারোর প্রাণহানি না হয়। তাঁর এই মহান বাণী প্রচেষ্টা গ্রুপের সকল সদস্যরা মনেপ্রাণে মেনে চলেন।
প্রচেষ্টা গ্রুপের সম্পাদক সুমন বাবুর ফোন পেয়ে ভোর পাঁচটায় সুদূর বনগাঁ থেকে রওনা দেন গ্রুপের সদস্য শ্রী অনিমেষ কর্মকার। তিনি আনন্দের সুরে বলেন, সত্যিই আমরা গর্বিত, অনিমেষ বাবু তার মানবিকতার যে পরিচয় দিয়েছেন এই মানসিকতা যদি প্রতিটা মানুষের থাকে তাহলে পৃথিবীটা আবার নতুন করে সুস্থ হয়ে উঠবে এই আশা রাখি। তিনি আরও বলেন, গ্রুপের সকল সদস্যদের কর্তব্য সম্বন্ধে কিছু বলা সত্যিই আমার সাধ্যের বাইরে, যারা এই গ্রুপটার জন্য প্রতিনিয়ত এভাবেই লড়ে চলেছেন।
ধন্যবাদ এই গ্রুপের সকল সদস্যদের যারা যারা শোনা মাত্র প্রতিদিন এভাবে ছুটে আসেন এবং নিজের শরীর থেকে রক্ত দান করে কিছু মুমূর্ষু মানুষকে নতুন একটা জীবন দান করেন, তাদের কাছে আমি এবং প্রচেষ্টা গ্রুপ চির কৃতজ্ঞ। এই কঠিন পরিস্থিতিতে রক্ত পাওয়ার পর তপন বাবু প্রকৃত অর্থে উৎফুল্ল ও আনন্দিত। এর ফলে এক কথায় বলাই যেতে পারে “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনেরই জন্য।”