June 13, 2025

ধর্ষণ করে খুন হয়েনি নদীয়ার অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতা, উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

0
Advertisements

HnExpress ২২শে এপ্রিল, সুদীপ ঘোষ, নদীয়া ঃ দেশ তথা রাজ্য জুড়ে চলছে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন। আর তার মধ্যেই সম্প্রতি নদীয়ার বুকে ঘটে গিয়েছিল এক অমানবিক ঘটনা। গত ১৬ই এপ্রিল, বৃস্পতিবার আনুমানিক সন্ধ্যা ৭.৩০ টা নাগাদ এক অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল নদীয়া জেলার ভালুকার মাদারতলার রাস্তায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল যে, ওই মহিলাকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু ধর্ষণ করে খুন করা হয়নি নদীয়ার অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতাকে, গতকাল উঠে এলো এমনই চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। আদতে সত্য উদঘাটন হলো এবং অবশেষে মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই মূল অভিযুক্ত বা দোষী ধরাও পড়লো।

গতকাল বিকেলে নদীয়া জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিদিশা কালিতা একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেন। আর এদিন সেখানে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, মৃতার নাম পূর্নিমা মজুমদার। স্বামীর নাম তমাল মজুমদার, তিনি পেশায় একজন উকিল। তবে বেশকিছু দিন যাবৎ পূর্ণিমা দেবী তাঁর স্বামীর সাথে থাকতেন না। তিনি নবদ্বীপে বাপের বাড়িতেই থাকতেন।পূর্ণিমা দেবীরা ছিলেন চার বোন ও এক ভাই। বর্তমানে পূর্ণিমা দেবীর বাবার ৪ বিঘা জমি ও একটি বসতবাড়ি আছে। কিন্ত কোনো বোনই তাতে ভাগ বসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেননি, শুধু মাত্র পূর্ণিমা দেবী ছাড়া, এমনটাই সুত্র বলছে।

তিনি আরও বললেন, কারণ অন্য বোনেদের নিজস্ব ঘর-সংসার, সম্পত্তি আছে। যেহেতু পূর্ণিমা দেবী বাপের বাড়িতেই থাকতেন তাই এক অংশের জমির ও বাড়ির ভাগ নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি, কিন্তু তাঁর ভাই সেটা মেনে নিতে পারেননি। আর এই নিয়েই দুই ভাইবোনের মধ্যে বিবাদও ঘটে। বস্তুত সেই কারণেই সমস্ত সম্পত্তির একা মালিক হবার আশায় ভাই তাঁর স্বামী পরিত্যক্তা অংশীদার বোনকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেয়ার ফন্দি আঁটে।

 

 

এরপর সেই প্ল্যান মাফিক বোনকে মোটর সাইকেল করে অন্য বোনের বাড়ি নিয়ে যাবার অছিলায় নির্জন রাস্তায় একা পেয়ে গুলি করে হত্যা করে বলে পুলিশ সুত্রের খবর। যদিও প্রথম অবস্থায় পুলিশই অনুমান করে ছিল ধর্ষণ করে তারপর খুন কিন্তু করা হয় মহিলাটিকে। কিন্তু পরে তাঁর শারীরিক পরীক্ষানিরিক্ষা করে জানা যায়, ধর্ষণ করা হয়নি তাঁকে, তবে মূলত সম্পত্তির মালিকানা একাই ভোগ করার জন্য এই নির্মম হত্যা কান্ডটি ঘটিয়েছে সহোদর। এবং পুলিশের জেরায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে মৃতার ভাই স্বীকারও করে নেয়।

ধৃত অভিযুক্ত অপরাধী অর্থাৎ মৃত মহিলার ভাইয়ের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায় যে, মৃত পূর্ণিমা দেবী সেদিন যাওয়ার সময় পথেই বাথরুম করার জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে বলেন ভাইকে। আর সেই সময় সুযোগ বুঝে ও নির্জন রাস্তা পেয়ে বাথরুম করতে যাওয়া অবস্থাতেই তাঁকে পিছন থেকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। গুলি দুটি এসে পিঠে ও মাথায় বিদ্ধ হয়, ফলত বাথরুম করা অবস্থায় সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে যান পূর্ণিমা দেবী, এবং সেই অর্ধনগ্ন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করার কারণেই প্রথম তদন্ত অনুযায়ী পুলিশের অনুমান হয়েছিল ধর্ষণ করে তারপর খুন করা হয়েছে বলে।

এদিনের প্রেস মিটে এমনটাই দাবি করলেন কৃষ্ণনগরের অতিরিক্ত এসপি বিদিশা কালিত। তবে যেকোনো কারণেই হোক, সম্প্রতি দেশ জুড়ে চলছে ভাইরাসের মরণ কামড়, আর সেই পরিস্থিতিতেও লকডাউন চলাকালীন ঘটে যাওয়া এই অমানবিক হত্যাকান্ড যে সমাজের কাছে নিতান্তই এক বাজে ও ক্ষতিকারক দৃষ্টান্ত এটা বলাই বাহুল্য। তবে পুলিশ এখনো তদন্ত জারি রেখেছে, এটা জানার জন্য যে আর কেউ এই হত্যার সাথে যুক্ত আছে কি না। তবে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে, মৃতার ভাই খুন করার জন্য পিস্তলটি পেলেন কোথা থেকে?

আর যদি এটি তাঁর লাইসেন্স প্রাপ্ত রিভলবারই হয়ে থাকে, তবে কেন তিনি এই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিজের কাছে রাখতেন? কিন্তু এসব বিষয় গতকালের সাংবাদিক বৈঠকে কোনো বিস্তারিত তথ্যই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েনি, এমনকি বারংবার অপরাধীর নাম জানতে চাইলেও তা গোপন রাখা হয়েছে পুলিস প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এমন গুরুতর অপরাধ ও জঘন্যতম ঘৃণ্য কাজ করার পরে কি অপরাধী তার যোগ্য শাস্তি পাবে? সুবিচারের আশায় আইন ও প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে জনসাধারণ সহ গোটা সমাজ!

Advertisements

Leave a Reply