মাঝেরহাট ব্রীজ দূর্ঘটনা, মৃত্যু কে কাছ থেকে দেখা
HnExpress রাজকুমার দাস, কলকাতা : রোদ বৃষ্টির সাথে আজ মেঘের খেলা। তারই সাথে জীবন নিয়ে খেলা, মৃত্যু কে কাছ থেকে দেখা! কলকাতার উড়ালপুল যখন তখন অবস্থা, অজস্র মানুষের আনা গোনা। ভয় লাগে বিদ্যাসাগর সেতু, রবীন্দ্র সেতু, কিংবা মা সেতুর উপর দিয়ে দুরন্ত গতিতে নিজের গাড়ী বা টাক্সি কিংবা বাসে যাওয়ার সময়।আতঙ্কের ভয় বাসা বাঁধে প্রথম। গত ৪ঠা মার্চ ২০১৩ তে যখন উল্টোডাঙ্গা তে নব নির্মিত ব্রীজের অংশ বিশেষ ভাবে ভেঙে পড়েছিল। কলকাতা জেগে থাকে ঠিকই, কিন্তু সেই নিদ্রাহীন জাগরণে বুকের মাঝে ধুকু পুকু হতে থাকে সদাই, শহরের যেকোনো ব্রীজের উপর কিংবা নীচ দিয়ে গেলে সারাক্ষন যাত্রীবাহির চলযানের হাতল চেপে ধরে মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করতে হয়। সতর্ক বাংলা, কিসের সতর্ক আম বাঙালী?জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাওয়া আশা রাস্তা পারাপার, উড়ালপুলের হয়ে পথ চলা। সবকিছুই কলকাতার হাল খাতায়। আমরা অভ্যস্থও তাতে, ভয় কাটেনি, রাতের বেলা বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত মায়ের মন ছটপট করে, বাবা খবরের চ্যানেলে নজর রাখে, কত মানুষ যে অকালে পথের বলি হয়, ঠিক যেমন আজ এখন সৌমেন বাগ নামের যুবকটি মাঝের হাট ব্রীজের নিচে চাপা পরে মারা গেল, খবর হয়ে গেল বছর ২৮ এর সেই তরতাজা যুবকটি। খবর পেল তার বাবা মা ছেলে হাড়ানোর দুঃসংবাদটি।
সত্যি বিধাতার খেলা কে বোঝে।ভাবতে অবাক লাগছে এই ব্রিজের উপর দিয়ে আজ এই ঘটনা ঘটার এক ঘন্টা আগে আমি (প্রতিবেদক) নিজেই বাসে করে ঠাকুরপুকুর নিজের বাড়িতে ফিরেছি। তখন ও ভাবতে পারিনি। আমি বেঁচে গেছি, উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ। কিন্তু ভয় এখনো কাটেনি। কলকাতার অলি গলি ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করা, নিজেকে শক্ত করে এগিয়ে চলা সবটাই। ঠিক যেমন দ্বিতীয় আতঙ্কের দিন ছিল ৩১শে মার্চ ২০১৬ পোস্তা ব্রীজ দুর্ঘটনা। খবর পরিবেশন করার জন্য সেদিনও দৌড়ে গিয়েছিলাম, কত মানুষের আর্তনাদ, চিৎকার, সেসব এখনো স্মৃতিতে তাজা। আজ আবার কলকাতা দেখলো তিলোত্তমার তৃতীয় ব্রীজ দুর্ঘটনা।
৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৮, আবার খোদাই হলো মর্মান্তিক তারিখ।আরও পরবর্তীতে কোন তারিখ কোন পুলকে খোদাই করবে একমাত্র ভগবানই জানে। আজ কলকাতা পুলিশ, এন ডি অর ইফ, পোর্ট ট্রাস্ট, নৌ বাহিনী, সেনা বাহিনী, দমকল, পৌর সভার সকলেই উদ্ধার কাজ করতে ব্যাস্ত, হয়েত রাতভর ব্যাস্ত থাকবে। বজবজ শিয়ালদাহ যাওয়ার সব ট্রেন বাতিল। সব গুরুত্ব পূর্ণ রাস্তা জ্যাম, বাসে ঠাসা ভিড়। সকলের ঘরে আপনজনদের ফেরার জন্য উদগ্রীব অপেক্ষা। অপরদিকে হাপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় ২৫ জনের উপর। মন্ত্রী, নেতা, নেত্রী সকলের আনাগোনা, সাথে কিছুটা কাঁদা ছোড়াছুড়িও হবে বোধহয়, রাজনৈতিক ভাবে। জানা গিয়েছে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফর থেকে রওনা দেবেন আগামীকাল।
পুরানো ব্রিজের মধ্যে ফাটল, কেউ বোঝেনি তা নয়, তবে কেউ মেরামতির জন্য, রক্ষনাবেক্ষনের জন্য তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তাই আজকের এই পরিস্থিতি। পাশেই মেট্রো রেলের কাজ চলছে, তার ভাইব্রেশন থেকে ব্রীজ ভাঙার কোনো সম্ভাবনাকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নস্যাৎ করেছেন। যদিও তদন্ত হবে, তবে দোষীরা শাস্তি কী পাবে আদৌ? যাঁরা পৃথিবী ছাড়লো তারা বা তাদের পরিবার কি পাবে? আহতরা ৫০ হাজার টাকা পাবে ঘোষণা মুখ্য মন্ত্রীর। সকলের চিকিৎসা সরকার করবে। বাংলাদেশ জুড়ে আন্দোলন দেখেছি কিছুদিন আগে “নিরাপদ সড়কের দাবীতে”, এখানেও হোক তবে কলরব, উঠুক সমবেত আওয়াজ “নিরাপদ ব্রীজ” এর দাবীতে। আমরা আম জনতারা সেই অপেক্ষাতেই রইলাম।