একটি ডিম বেশি চাওয়ার অপরাধে শিশুর যৌনাঙ্গে গরম খিচুড়ি ঢেলে দিল অঙ্গনয়াড়ির কর্মী
HnExpress ওয়েবডেক্স নিউজ, রূপা বিশ্বাস ঃ সম্প্রতি একটা ডিম বা একটু বেশি খিচুড়ি চাওয়ার জন্য পেতে হল জীবনের কঠিনতম ও নারকীয় শাস্তি। তথ্য অনুযায়ী, এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের খিদিরপুরে। বেশ কিছুদিন আগে বছর তিনেকের এই ছোট্ট শিশুটিকে তার বাবা-মা ভর্তি করেছিল এই খিচুড়ি স্কুলে। প্রতিদিনের মতন শিশুটি এদিনও স্কুলে গিয়েছিল মা আর তার ভাগের বরাদ্দ খাবারের ভাগ পেতে। আর নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য খুদের সাথে এই খুদেটিকেও খাওয়ার পাতে খিচুড়ির সাথে একটা ডিম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হয়েতো একটু বেশি খিদে পাওয়ার কারনেই আর একটি ডিমের বা একটু বেশি খিচুড়ির জন্য বায়না করে ফেলে অবুঝ শিশুটি। আর বোধহয় এটাই ছিল তার জীবনের বৃহত্তর অপরাধ। শিশুটি যখন আর একটা ডিমের বায়না করছিল, ঠিক তখনই অঙ্গনয়াড়ির কর্মী হটাৎ রেগে গিয়ে শিশুটির প্যান্টের মধ্যে বেশ খানিকটা গরম খিচুড়ি ঢেলে দেয়। খিচুড়ি প্রচন্ড গরম থাকার ফলে শিশুটির শরীরের নিম্মাংশের প্রায় অনেকটা অংশই পুড়ে গিয়েছে, ঝলসে গিয়েছে তার পশ্চাৎদেশ।
মূলত ঘটনাটি হল, মায়ের ভাগটুকু চাওয়াতেই উড়ে এল ফুটন্ত খিচুড়ি, যার ফলস্বরূপ জঙ্গিপুর হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে ভর্তি হলো এই বছর তিনেকের আফ্রিদি। আসলে তার মায়ের খুব জ্বর। বছর তিনেরেকের আফ্রিদি শেখ তাই টিফিন বাক্স নিয়ে একাই এসেছিল সেদিন অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রে— মা-ছেলের নিত্য বরাদ্দ, খিচুড়ি আর ডিম নিতে। তাকে দেখেই সেদিন ‘‘মা কই তোর’’ বলেই খিঁচিয়ে উঠেছিলেন অঙ্গলওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী শেহরি বেওয়া ওরফে চাঁদ সুলতানা। সঙ্গে মা নেই, তাই ছেলের বরাদ্দটুকু দিয়েই আফ্রিদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বেঁকে বসে ছেলেটি, খালি ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, ‘মায়ের ভাগটা দাও না গো!’ আর অভিযোগ, তাতেই চটে গিয়ে, ‘এই নে তো মায়ের ভাগ’ বলে ফুটন্ত এক হাতা খিচুড়ি ছুড়ে দেন ছেলেটির দিকে। হাফ প্যান্ট পড়া ছেলের নিম্নাংশ নিমেষে ঝলসে যায়। অঙ্গন ওয়াড়ির অন্য কর্মীরা ছুটে এসে আফ্রিদির প্রাথমিক শুশ্রূষা করে খবর পাঠান বাড়িতে। জ্বর গায়েই ছুটে আসেন মা মিনু বিবি। ভ্যান রিকশায় চড়িয়ে তখনই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে।
মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে খিদিরপুর ১ নম্বর আইসিডিএস কেন্দ্রে শুক্রবার সকালে ওই ঘটনার পরে আপাতত কেন্দ্রটির গায়ে তালা পড়েছে। ওই দিন রাতেই চাঁদ সুলতানার বিরুদ্ধে রঘুনাথগঞ্জ থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ করেছেন মিনু বিবি। তবে ওই দিন বিকেল থেকেই চাঁদ সুলতানার খোঁজ মেলেনি আর। রঘুনাথগঞ্জের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “এটা কেউ করতে পারেই বলে ভাবতে পারছি না! বেশ কিছুটা অংশ জুরে পুড়ে গেছে শিশুটির। ওই কর্মীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।” জেলা আইসিডিএস প্রকল্পের ব্লক অধিকর্তা প্রত্যয় সরকার বললেন, “কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে। ওঁকে আর কাজেই রাখা হবে না।”
ওই আইসিডিএস কেন্দ্রে মা ও শিশু মিলিয়ে ১২০ জনের নাম নথিভূক্ত রয়েছে। প্রায় রোজই তাদের জন্য বরাদ্দ ডিম এবং খিচুড়ি। অনেক সময় শিশুদের হাত দিয়েই মায়ের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। শুক্রবার যেমন, মিনু বিবি না যাওয়ায় একটা টিফিন বাক্স নিয়ে একাই গিয়েছিল আফ্রিদি। মিনু বললেন, “ছোট ছেলে। তাই আমার ডিমটাও দিতে হবে বলে হয়েতো বায়না ধরেছিল। বাড়িতে যেমন বায়না করে হয়ত তেমনই করেছে। তার জন্য এমন শাস্তি!’’ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে উপুড় হয়ে শুয়ে আফ্রিদিও বলছে, ‘‘আমি তো শুধু আর একটু খিচুড়ি চেয়েছিলাম, দিদিমণি আমাকে পুড়িয়ে দিল?’’
প্রায় গুরুতর আহত অবস্হায় শিশুটিকে তখনই জঙ্গিপুর এর মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একটা ডিম বেশি চাওয়ার অপরাধে এমন ভয়ঙ্কর ভাবে যে শাস্তি পেতে হবে তা বোধহয় সবারই কল্পনার বাইরে ছিল। তবে ইতিমধ্যেই শিশুটির পরিবার অঙ্গনয়াড়ির ওই কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ঘটনার পরেই অঙ্গনয়াড়ির ওই কর্মীকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সুত্র অনুসারে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পর থেকেই পলাতক সেই অমানবিক কর্মী। এলাকাবাসী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে ওই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার জন্য দাবী জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। এখন পুলিশ অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অভিযুক্তকে পাকড়াও করার জন্য চিরুনী তল্লাশি শুরু করে দিয়েছে এবং ঘটনাটির বিষয় পূর্ণ তদন্ত চালাচ্ছেন তারা।