কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতির চাল বাংলার পাতে পড়ল না
HnExpress ১৯শে এপ্রিল, অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ঃ কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বরাদ্দ চাল-ডাল বাংলার পাতে আজও পড়ল না। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলাতেও এ যেন সেই একই সুর। আবার কেন্দ্র-রাজ্য বঞ্চনার ইতিবৃত্ত। এতদিন ছিল বকেয়া টাকা ও প্রাপ্য সুবিধা না মেলার, এবার সেটাই ফিরে এল খাদ্য দফতরের ঘরে। কেন্দ্রের ঘোষিত প্রাপ্য চাল ও ডাল পাচ্ছেন না বাংলার মানুষ।
লক ডাউন শুরু হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে একজন দেশ নায়ক হিসাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, একজন দেশবাসীকেও তিনি অভুক্ত অবস্থায় থাকতে দেবেন না। কিন্তু লক ডাউনের ২১ দিন পার হওয়ার পরেও মিলল না কেন্দ্রের সেই আশ্বাসবাণীর সেই চাল। কেন্দ্রের অজুহাত, লক ডাউনের জেরে শ্রমিক নেই, তাই লোডিং হচ্ছে না শস্য। কিন্তু অভুক্ত পেট খাবার চায়, প্রতিশ্রুতি নয়।
কেন্দ্রের যদি পরিকাঠামো নাই থাকে শস্য পৌঁছাবার, তাহলে সেই অক্ষমতার দায়ভার রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে কেন্দ্র কি ঋণ মুক্ত হতে পারে? প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা ছিল, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গরীব মানুষদের যাতে অভুক্ত থাকতে না হয়, তার জন্য জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার (এনএফএসএ) অন্তর্ভুক্ত রেশন গ্রাহকদের বিনামূল্যেই কেন্দ্রীয় সরকার থেকে চাল ও গম দেওয়া হবে। এপ্রিল, মে ও জুন মাস জুড়ে দেওয়া হবে এই পরিষেবা।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। কেন্দ্রের নয়, শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের বিনামূল্যে দেওয়া রেশনই পাচ্ছে বাংলার সাধারণ মানুষ। রাজ্যের খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুসারে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা ও প্রায়োরিটি হাউসহোল্ডরা প্রতি মাসে মাথা পিছু পাঁচ কেজি চাল ও পরিবার পিছু এক কেজি করে ডাল পাওয়ার কথা। এই হিসাব করলে বাংলার জন্য তিন মাসে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন চাল লাগবে।
সেখানে রাজ্যের এফসিআইয়ের গুদামে মজুত মাত্র ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল। এখন এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা রাজ্যের পক্ষে এক প্রকার অসম্ভব, এ কথা রাজ্যের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাংলার খাদ্য দফতরের প্রধান সচিব মনোজ আগরওয়াল। তবে এফসিআই সূত্রের খবর, ওড়িশা ও ছত্তীশগড় থেকে বাংলার জন্য চাল পাঠানো হচ্ছে।
কিন্তু শ্রমিকরা কাজে না আসায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই চাল বাংলার ডানকুনি, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার প্রভৃতি জায়গা থেকে নামিয়ে বন্টন করা হবে। তবে এমন চলতে থাকলে এপ্রিলের চালের ভাত কি বাংলার মানুষের পাতে আদৌও উঠবে? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, “রাজ্যের কিছু মানুষ চাল পাবেন, কিছু মানুষ চাল পাবেন না, এমন হতে পারে না।
কেন্দ্রের কথা মত ১০০টি রেক ভরে যদি চাল আসে তাতে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আসবে, এতে কি চাহিদা মিটবে? কেন্দ্রের এত বড় পরিকাঠামো থাকতেও তারা যদি না পারেন, সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু করার নেই। আমরা খাদ্যসাথী সহ জিআর এবং আইসিডিএস-এর চাল দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখতে বাজার থেকে চাল তুলে মানুষের মধ্যে দিতে পারি না। এতে খোলা বাজারে চালের আকাল হবে।
তবে কেন্দ্রের চাল এলে আমরা মানুষের মধ্যে অবশ্যই তা বিলিয়ে দেব”। এদিকে প্রতিদিনই প্রায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে রেশন না মেলার বা রেশন দুর্নীতির খবরও উঠে আসছে। এই ঘটনা যেন অনেকটা সেই মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। তবে কোন পথে যে মিলবে সুরাহা, সেটা ভবিষ্যতই এখন জানে।