কলকাতা নিয়ে বই
বইমেলা ১৩ পর্ব
HnExpress সম্রাট গুপ্ত, ১১ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা ঃ সে কালের চিৎপুর রোড তথা আজকের রবীন্দ্র সরণি। উত্তর সীমানার বাগবাজার খালধার থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন নামে নামাঙ্কিত এই পথ চৌরঙ্গি হয়ে কালীঘাট ছুঁয়ে চলে গিয়েছে শহরের দক্ষিণ প্রান্তের দিকে। জোব চার্নকের সুতানুটিতে পদার্পণের অনেক আগেই তীর্থযাত্রীদের পায়ে পায়ে এ পথের সৃষ্টি। ইংরেজরা নাম দিয়েছিল ‘পিলগ্রিম রোড’। শুধু তীর্থযাত্রী কেন, যে ব্যবসার টানে চার্নকের আগমন, তার উপকরণ অভ্যন্তরীণ নদীপথ বেয়ে পৌঁছত শিয়ালদহে— সেখান থেকে আজকের বৌবাজার হয়ে লালবাজার পেরিয়ে সোজা চলে আসত হুগলি নদীর তীরে। অর্থাৎ পুব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত এও আর এক প্রাক-ঔপনিবেশিক পথ।
সিরাজের কলকাতা আক্রমণের আগে এমন রাস্তা আরও ছিল, যার হদিস লুকিয়ে আছে কোম্পানি আমলের নানা নথিতে। এ দিকে ১৭৪২ সালে মরাঠা বর্গিরা বাংলা আক্রমণ করে। কলকাতা বাঁচাতে কোম্পানি ঠিক করল, উত্তরে বাগবাজার থেকে দক্ষিণে কুলিবাজার (হেস্টিংস) পর্যন্ত সাত মাইল জুড়ে শহরটাকে গোল করে ঘিরে একটা পরিখা কাটা হবে। এন্টালি বাজার পর্যন্ত কাটতে কাটতেই বর্গি হাঙ্গামা স্তিমিত হয়ে আসায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণেও কিছুটা অংশ কাটা হয়েছিল। পরে এই ‘মরাঠা ডিচ’ বুজিয়ে তৈরি হয় সার্কুলার রোড।
চিৎপুর রোড থেকে সার্কুলার রোড পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগই আদি কলকাতা। এ সব নিয়ে নানা সময় বই লিখেছেন অনেকে। সেই তালিকায় নিঃসন্দেহে অমূল্য সংযোজন চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ‘কলকাতা ত্রিপদী’ ও ‘কলকাতা কথকতা‘।
১৯৯৬ সালে আদি কলকাতার পথগুলি নিয়ে অজিতকুমার বসু (১৯২৯-২০০৮) লিখেছিলেন কলিকাতার রাজপথ/ সমাজে ও সংস্কৃতিতে (আনন্দ)। পুরসভার বহু দুষ্প্রাপ্য নথি ব্যবহারের সঙ্গে ক্ষেত্রসমীক্ষা ছিল তাঁর কাজের অবলম্বন। দ্বিতীয় একটি খণ্ডের পরিকল্পনা করলেও পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি তৈরি করে যেতে পারেননি তিনি। তাঁর পরিকল্পনার ভিত্তিতে সেই পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করে গ্রন্থরূপ দিয়েছেন শ্রীময়ী গুহ ঠাকুরতা ও সোমদত্তা চক্রবর্তী (কলিকাতার রাজপথ/ সমাজে ও সংস্কৃতিতে, দ্বিতীয় খণ্ড। আনন্দ)। এই বইয়ে চিৎপুর রোড ও সার্কুলার রোড তো আছেই, সঙ্গে পাওয়া যাবে বিডন স্ট্রিট, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার স্ট্রিট, ওয়েলিংটন স্ট্রিট, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, লালবাজার স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার ও বাগবাজারের কথা।