এসি অর্থাৎ এয়ারকান্ডিশনের ভুল ব্যবহারে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে জ্বর-নিউমোনিয়া

HnExpress রূপা বিশ্বাস : সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাক দিয়ে জল গড়াতে শুরু করেছে ক্লাস টু’য়ের ঋজুর। দিন কয়েক যেতে না যেতেই ছেলেটার বুকে সর্দি জমে যায়। এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। যথারিতি ছোট্ট ঋজুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তার বাবা-মা। হুম, এইভাবেই আচমকা শরীর খারাপ হওয়ার কারন জানতে দিশাহারা হয়ে পড়েন অভিভাবকেরা। একে তো গরমের ছুটি চলছে, তাই দরকার ছাড়া রোদে বেরোবার কোনো কারনই নেই। আর তা ছাড়া রোদের বেশিরভাগ সময়টা ঘরেই থাকে ঋজু। তাও আবার ফুল এসির মধ্যে। তাহলে কেন সর্দি-কাশিতে ভুগছে সে। বিশিষ্ট চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞরা জানাছেন যে, ঋজুর অসুস্ততার জন্য মুলত দায়ী ওই এয়ারকন্ডিশনাই।
তবে শুধু মাত্র ছোট্ট ঋজুই নয় বছর ষাঠের সমরেশ ঘোষালও একই ভাবে অসুস্ত হয়েছেন এই এসির কারনেই। অবসরপ্রাপ্ত সমরেশ ঘোষাল গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেক সাধ করে ঘরে এসি লাগিয়েছিলেন। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই বুকে পিঠে সর্দি বসে সাংঘাতিক ভাবে অসুস্ত হয়ে পড়েন তিনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাসিংহোমে ভর্তি করতে হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন সমরেশ ঘোষাল। বিভিন্ন রকম পরিক্ষা নিরিক্ষা করার পর চিকিৎসকরা এর কারণ হিসেবে বললেন, যদিও আগে থেকেই নিউমোনিয়ার জীবানু বাসা বেঁধেছিল সমরেশ বাবুর শরীরে। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক ভাবে বা অনবিজ্ঞ হওয়ার দরুন ভুল পদ্ধতিতে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবহারের জন্যই তার শরিরে এই রোগের প্রকোপ ফলত বেড়ে গিয়েছে।
শুধুই সমরেশ বাবু বা ঋজুর বাড়ির নয়, প্রচন্ড গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য শহরের ঘরে ঘরে এসি বসানোর ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যে লোড বাড়ানোর জন্য সিইএসই’র দপ্তরে আবেদনও জমা পড়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে জানা নেই এই যন্ত্র ব্যবহারের কায়দা। আর তার জেরেই ফলত সর্দি-কাশি, এমনকি নিউমোনিয়ার মতন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শহরবাসী। এই কারনেই হাজার খানেক টাকার যন্ত্র কিনে লাখো টাকা খরচ হচ্ছে অনেকেরই।
আরজিকর হাসপাতালের চেস্ট বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা কুন্ডু এই বিষয় জানাচ্ছেন, বৈজ্ঞানিক ভাবে সঠিক পদ্ধতি না জেনে এসির ব্যবহারের জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শহরবাসী। এসি ঠিক মতন তাপমাত্রায় ব্যবহার না করতে পারলে এই সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে সকলকেই।
প্রথমত, নতুন এসি কিনলে পরিমিত ভাবে সেই এয়ার কন্ডিশনের ব্যবহার করা হয়না।
তাই ব্যবহারের আগে মনে রাখতে হবে কিছু বিশেষ ও সঠিক পদ্ধতি ঃ-
➤ এসিতে জমা ধুলিকনায় অ্যালার্জেন্ট মজুদ থাকে।
➤ বাইরের তাপমাত্রা বাড়লে তখন এসি টিকে ম মাত্রায় চালাতে হবে।
➤ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন শরীরকে সুস্থ রাখতে আনুমানিক ২৪-২৮ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা রাখা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সম্মত।
➤ মনে রাখতে হবে এসি কিন্তু ফ্যান নয়। তাই বেশি গরম হচ্ছে বলে ১৬ ডিগ্রি তে তাপমাত্রা নামিয়ে আনা এক্কেবারেই উচিত নয়।
➤ এসিকে সময় দিতে হবে ঘর ঠাণ্ডা করার জন্য, তাতে এসিও ঠিক থাকবে আবার শরীরও খারাপ হবেনা, মন্তব্যটি একজন এয়ারকন্ডিশন এক্সপার্টের।
➤ অপরিমিত এসি ব্যবহারের জন্য বেশিরভাগ সমস্যায় পড়ছে শিশু এবং প্রবীণ ব্যাক্তিরাই।
➤ শিশু বিশেষজ্ঞ প্রভাস গিরি জানান, কোনো বাবা-মা যদি দেখেন একদিন বা একরাত এসিতে থাকলে কোনো শিশুর ঠান্ডা লাগার ভাব দেখাছে, তাহলে তখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। ➤ ওই অবস্থায় এসিতে থাকলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
➤ ঘন্টার পর ঘন্টা এসিতে বসে টানা বসে থাকাও যথেষ্ট ক্ষতিকারক শরীরের পক্ষে।
➤ পালমনোলজিস্ট রাজা ধর এই বিষয় আরও জানিয়েছেন, এসির মধ্যে ধূলিকণা জমে যাওয়াই হলো এসির সব থেকে বড়ো সমস্যা। সেই ধূলিকণাতেই থাকে অ্যালার্জেন্ট।
➤ আর নিয়মিতভাবে এসি পরিষ্কার না করা হলে অ্যালার্জেন্টের কারনে সর্দি-জ্বর বা শ্বাসনালীর সমস্যা ছাড়াও আরো অনেক রকম মারাত্মক রোগের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
তথ্যসূত্র ঃ সোস্যাল মিডিয়া ( চরিত্র ও নাম গুলি কাল্পনিক হলেও লেখার বিষয় বস্তু এবং চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্পূর্ণ সত্য ও যথাযথ)।