December 13, 2024

এপারে “মরছে শিশু অনাহারে” আরেকপারে পালিত হচ্ছে পদ্মাজাত “ইলিশ উৎসব”

0
Advertisements

HnExpress ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত, হাওড়া : বেশকিছু দিন আগেই নিম্নচাপের জেরে মাঝ সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বেশকিছু ট্রলার ডুবে যায়, নিখোঁজ হয়ে মাঝি সহ বহু মৎসকর্মী। পরে তাদের দেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও সেই দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে দেখা যায় যে দেহের প্রতিটি অংশ খসে খসে পরছে। এই বিভৎস্য দৃশ্য প্রতিটি মিডিয়া চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়, আর তা দেখে মানুষ শিউরে উঠেছে।  আবার ঠিক উল্টো দিকে দেশের রাজধানী দিল্লীতে দুবেলা দুমুঠো খেতে না পেয়ে, দিনের পর দিন অনাহারে থাকার ফলে তিনটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। কিন্তু এত কিছু দুঃখজনক ঘটনার পরেও বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা মা মাটি মানুষের মমতাময়ী জনদরদী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর রাজ্যে বিপুল পরিমাণে ইলিশ এর স্টক তৈরি করে স্বারম্বরে পালিত হচ্ছে “ইলিশ উৎসব”। যেখানে ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে মাঝ সমুদ্রে প্রান হাড়াল বহু মৎসজীবি, যার দরুন নাকি এবছরের ইলিশ এর দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে মানুষ দুবেলা দুমুঠো অন্ন ঠিক ভাবে পায় না, সেখানে গতকাল হাওড়ার বালিঘাট সংলগ্ন জেটিয়া রোড এর বাঙ্গুর বাড়িতে মহা স্বারম্বরে পালিত হল “ইলিশ উৎসব ২০১৮” ধ্রুবতারার সভাপতি বিশ্বজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাত ধরে। এই ইলিশ ধরতে গিয়েই মাঝ সাগরে প্রাণ হাড়াল মৎসজীবিরা, সাথে বহু পরিবার হাড়াল তাদের প্রিয়জনকে, হাড়াল পরিবারের একমাত্র অন্নদাতাকে। কিন্তু তাতে বাংলায়, বিশেষ করে হাওড়ার বাঙ্গুর বাড়িতে ইলিশ উৎসবে ভাটা পরল না ইলিশের যোগান তথা আনন্দ মজলিশে। এদিন এই আড়ম্বরপূর্ণ ইলিশ উৎসবকে ও উদ্যোক্তাকে আরো বেশি করে উৎসাহিত করতে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক রানা চ্যাটার্জী, বিশিষ্ট শিল্পী সৌমিত্র রায়, বিশিষ্টা বাচিকশিল্পী পরমা ব্যানার্জী, বিশিষ্ট সমাজসেবক মদন মিত্র। উদ্যোক্তা বিশ্বজয় বাবু সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, এটি আমাদের ৩০ তম বর্ষ। আগেরবার আমাদের এন্ট্রি ফি ছিল পাঁচশত টাকা করে, কিন্তু এবারে ট্রলার ডুবে যাওয়ার জন্য মাছের যোগান কম থাকায় বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ভাবে পদ্মার ইলিশ আনার ব্যাবস্থা করতে গিয়ে এবছরের এন্ট্রি ফি দুইশত টাকা বাড়িয়ে প্রায় সাতশো টাকা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মদন মিত্র অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর  মূল্যবান বক্তব্যের সাথে এও বললেন যে, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘ঘ্রাণে ন অর্ধ ভজনম’, তাই যারা আমার কাছে এন্ট্রি কার্ডটি চেয়েছেন তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলি আমার মতে ‘দর্শেন পুরোং ভজনম’। অর্থাৎ একটুকরো ইলিশ পেটে না গেলেও শুধুমাত্র চোখের দেখাতেই ইলিশ উৎসবের ইলিশ ভোজ টা আপনি সেরেই ফেললেন। তবে এতবড় একটি আড়ম্বরপূর্ণ জমজমাট অনুষ্ঠানের মাঝে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, আজকের সময় দাঁড়িয়ে যেখানে বাংলা তথা দেশে বহু মানুষ তথা ছোট ছোট শিশুরা অনাহারে প্রাণ দিচ্ছে অথবা অপুষ্টিজনক রোগে ভুগে মরছে, যেখানে মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বিপুল ঝড়ের হাতে পরে প্রাণ হাড়াচ্ছে, তাদের পরিবার গুলি হাড়াচ্ছে তাদের একমাত্র অন্নদাতাকে, ইলিশের স্টক বাড়ানোর জন্য যেখানে ইলিসের দাম ঊর্ধ্ব মুখি, বাঙ্গালির রসনা তৃপ্তিতে মরশুমের মাছ এই ইলিশ যা এখনকার বর্তমান দামের ঠ্যালায় বাঙালীর হাতের মুঠোর বাইরে, সেখানে এই ইলিশ উৎসব কি শুধুমাত্র তাদের ভোগবিলাসের উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে? নাকি সংগঠন গুলি তাদের মুনাফা লুটের জন্য এবং আরো স্পন্সরশীপ পাওয়ার জন্য ব্যবসাকে উৎসবের নাম দিয়ে আনন্দ মস্তি করছে? নাকি এ ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবে দেশের-দশের বা সমাজের কোন উপকার বা অর্থনৈতিক সহায়তা লাভ হচ্ছে কি? সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেশের বা দশের সহায়তায় এই বিলাসবহুল উৎসবের উপকারিতা কিছু কি দেখা যাবে? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে আমজনতার মনে।

Advertisements

Leave a Reply