জোকা বিবেকানন্দ মিশনের সামনে মহিলার সাথে ঘটল এক অমানবিক আচরণ, ভিডিও সহ ছবি ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়াতে
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ গতকাল সকালে এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হতে হল এলাকার এক বাসিন্দা সহ বহু আম মানুষকে। মানুষ যে এত অমানবিক হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বোধহয় বিশ্বাস করা যায় না। গতকাল এমনি এক অমানবিক ঘটনা ঘটে জোকার বিবেকানন্দ মিশনের কাছে। আর সেই ঘটনার ইতি বৃত্তান্ত ছবি ও ভিডিও সহ ভাইরাল হয়ে যায় ফেসবুক সোশ্যাল পেজে। আজকাল বার বার এমনই কিছু অমানবিক ঘটনা বা অপরাধমূলক আচরণ সবার সামনে উঠে আসচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। আজ যেখানে সমাজ উন্নতির শিখরে, সেখানে মানুষের মানবিকতা এসে ঠেকেছে তলানিতে। কিন্তু কেন?
গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীর জবানবন্দিতে উঠে আসা তথ্যসূত্র অনুযায়ী, “গতকাল সকাল ৮টা ২৫ নাগাদ জোকা বিবেকানন্দ মিশনে দিদির ছেলেকে পৌঁছে দিতে গিয়ে, স্কুলের পাশে এক অস্থায়ী চায়ের দোকান থেকে একটা হট্টগোল শুনতে পান প্রত্যক্ষদর্শী। হট্টগোলের কারণস্বরূপ তিনি জানতে পারেন যে এক ভদ্রমহিলা তাঁর তিন বছরের মেয়েকে স্কুলে ঢোকানোর আগে ওই দোকান থেকেই কেক ও জল কিনে খাওয়ায়। কিন্তু কোনো কারণবশতই ওই বাচ্চা মেয়েটি অসুস্থ বোধ করে ও বমি করে ফেলে ওই দোকানের মধ্যে। আর তাই দেখেই নাকি দোকানের মালিক, তার স্ত্রী ও মেয়ে মিলে ওই বাচ্চার মাকে বমি পরিস্কার করার জন্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এদিকে স্কুলে ঢোকার সময় পেরিয়ে যেতে থাকায় বাচ্চাটির মা অনুরোধ করেন যে, তাঁর মেয়েকে স্কুলের গেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে এসেই তিনি পরিস্কার করে দেবেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কিন্তু দোকানের ওই তিন ব্যাক্তি সেই মুহুর্তেই পরিস্কার করিয়ে নেবার জন্য নাছোড়বান্দা হয়ে পরে। কিন্তু স্কুলের দেরি হচ্ছে বলে মহিলাটি যখন মেয়েকে স্কুলের গেটে পৌঁছে দিতে যাবেন এমন সময় দোকানের মালিক ওই মহিলার গালে সজোরে চড় মারেন, যার ফলে মহিলাটির ঠোঁট দিয়ে রক্তও বেরোতে থাকে। তার সাথে চলে অকথ্য গালিগালাজও। এই অমানবিক আচরণ আর অত্যাচারের হাত বাদ যায়নি বাচ্চা মেয়েটিও, তাকেও সজোরে ধাক্কা দেয়। এত কিছুর পরেও ওই অবস্থায় কোন মতে মেয়েকে স্কুলের গেট অব্দি পৌঁছে দিয়েই মহিলা চলে আসেন বমি পরিস্কার করতে। কিন্তু তার পরেও ঘটে আরেক বিপত্তি। দোকান মালিকের স্ত্রী ওই ভদ্রমহিলাকে আবার হাতের কাছে পেয়েই শুরু করেন ধস্তাধস্তি, যার ফলে ভদ্রমহিলার পোশাক এর বেশ কিছু অংশ ছিঁড়েও যায়।
তবে ততক্ষণে আশেপাশে থাকা আরো কিছু আভিভাবক-অভিভাবিকা ওই দৃশ্য দেখে ছুটে আসেন, কিন্তু তাদেরকে আসতে দেখেই এবং অবস্থা বেগতিক বেগতিক বুঝে দোকান মালিক দ্রূততার সাথে দোকানের শাটার নামিয়ে দোকানের পিছনে নিজের বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। ইতিমধ্যেই অভিভাবকের মধ্যে কেউ নিকটবর্তী থানায় খবর দেন আর পুলিশ এসে পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। তবে পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত একটা জিনিস লক্ষ্য করা হলো, দোকান মালিক সহ তিনজন যারা ওই ঘটনায় জড়িত, তারা বাড়ির ভিতর থেকেও উপস্থিত অভিভাবকদের সাথেও অকথ্য ভাষায় তর্ক করতে থাকে। তাদের মধ্যে না ছিল এতটুকুও অপরাধ বোধ আর না ছিল ভুলের স্বীকারোক্তি। তাদের ব্যবহার বলে দিচ্ছিল তারা যেন কোনো অন্যায়ই করেনি। উলটে তারা হুমকি দিতে থাকে উপস্থিত অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে।
অবশেষে ঠাকুরপুকুর থানার পুলিস এসে উত্তেজিত জনতার মাঝখান থেকে ওই দোকান মালিককে থানায় নিয়ে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও ওইদিন এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় যে, এর আগেও নাকি এই দোকানদার এমন অনেক অভিভাবকদের সাথেই এমন খারাপ ব্যবহার করেছে । এই আকস্মিকতায় ভদ্রমহিলা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন, আর ধস্তাধস্তির দরুন তাঁর মুখের খানিকটা অংশ ফুলে ওঠে। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এ হেন অমানবিক ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্ষিপ্ত জনতা। যদিও পুলিশ প্রশাসন তাদের আস্বস্ত করেন যে, অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা তারা করবেন। তবে এখন প্রশ্ন হলো, এই ধরনের অমানবিক ঘটনার দৃশ্য দেখার পর ওই মহিলার তিন বছরের শিশুর মনে কী প্রভাব পড়তে পারে? আর আজকের এই অমানুষিক ব্যবহার আসন্ন সমাজ বা আগত প্রজন্মের কাছে কি বার্তা বহন করতে চলেছে?
তথ্যসূত্র ও চিত্র ঃ সোস্যাল মিডিয়া।