বিশেষ প্রতিবেদন : ইসলামপুরে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি
HnExpress দেবাশিস রায় : স্কুলে শিক্ষকের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল স্কুল পড়ুয়ারা। তার বিনিময়ে তাদের মিলল গুলি। প্রাণ হারাল দুই ছাত্র। ঘটনাটি দিনাজপুরের ইসলামপুরের। আর তার আঁচ এসে পড়েছে সারা রাজ্যে। বছর ঘুরলে সামনেই লোকসভা ভোট। তাই এই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাটা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। যেকারণই অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচতে পথে নেমে পড়েছে বামপন্থীরা। পথে নেমেছে গেরুয়া শিবিরও। আর এদের বিরোধিতা করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে শাসক দলও। দুই ছাত্রেরই মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। বিরোধীদের বক্তব্য পুলিশের গুলি মারা গেছে ওই দুই ছাত্রের। মৃত দুই ছাত্রের পরিবারেরও সেই একই কথা। যদিও পুলিশ বলছে, তাদের গুলিতে মারা যায়নি ছাত্ররা। কিন্তু এসব রাজনীতির খেলায় কি মায়েরা ফিরে পাবেন তাঁদের সন্তানদের! ছাত্ররা কি ফিরে পাবেন তাদের দুই সহপাঠীকে? এরা কি পাবে সঠিক বিচার! নাকি বিচারের বাণী নিভৃতেই কেঁদে যাবে?
এ প্রশ্ন নিয়ে কিন্তু কোনও মাথা ব্যথা নেই রাজনৈতিক দলগুলির। আর থাকবেই বা কী করে। এখন তো রাজনীতিকরা চলেন ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে। এমন একটা জ্বলন্ত ইস্যু তাই কোনও দলই হাতছাড়া করতে চাইছে না। বামেরা গলি ও পথে ঘুরে চাইছেন জনসমর্থন। গেরুয়া শিবির আবার এককাঠি এগিয়ে পৌঁছে গেছে রাজপথে। ডাক দিয়েছে ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ। এবং তাঁরা এটাও জানে তাঁদের এই কর্মসূচিকে প্রতিহত করতে সবরকম চেষ্টা করবে শাসক দল। যে কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনার বিচারের ভার তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন আমজনতার ওপর। আর তা না ছেড়েই বা উপায় কী? পন্চায়েত ভোটে নাগাড়ে কর্মী-সমর্থক, জয়ী প্রার্থীরা যেভাবে হেনস্থা ও নিগৃহীত হয়েছেন তাতে গেরুয়া শিবির কিছুটা হলেও আতঙ্কিত! পাশাপাশি এই চাল দিয়ে গেরুয়া শিবির কিছুটা হলেও ঘর গুছিয়ে নিতে অ্যাসিড টেস্ট করে নিতে চাইছে। কেননা, পুজোর মুখেই রাজ্যে আসছেন দলের সভাপতি। তাঁর আসার আগে রাজ্যে দলকে কিছুটা হলেও পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসতে মরিয়া চেষ্টা করবে। এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে ২৬ তারিখ বাংলা বন্ধ ব্যর্থ করতে শাসক দলও উঠেপড়ে লেগেছে। বিদেশে শিল্পের লগ্নি আনতে গেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন বন্ধ মোকাবিলার রসদ। আর তার জেরে সরকারিভাবে জারি করা হয়েছে নোটিশ। বন্ধের দিন অফিস-কাছারি, দোকানপাট, যানবাহন সচল রাখতে হবে। সরকারি অফিসে বাতিল করা হয়েছে ক্যাজুয়াল লিভ। এরই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে বন্ধের দিন রাস্তায় আরও বেশি করে সরকারি যানবাহন চালানো হবে। পাশাপাশি বলা হয়েছে বেসরকারি পরিবহনকেও সচল রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। আর বন্ধের দিন যদি বেসরকারি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্থ হয় তারও খেসারত দেবে রাজ্য পরিবহন দপ্তর।
কিন্তু এতো সবের পরও সরকার উদ্যোগী হয়নি কীভাবে, কাদের গুলিতে মারা গেল ওই দুই নিষ্পাপ ছাত্র, তা অজানাই রয়ে গেল। বিরোধীদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে সেই পুলিশকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হোক। আর যদি সরকারের কথা সত্যি হয়, তবে তাকে বা তাদের চিহ্নিত করা হোক। গ্রেপ্তার করে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। উল্টে তা না করে চলছে রাজনীতির কচকচানি! দিব্যি খোসমেজাজে কলার উঠিয়ে, বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আসল অপরাধী। আর পুলিশের তল্লাশির নামে ভুগতে হচ্ছে নিরীহ, নিরাপরাধ গ্রামবাসীরা। তবু মন্দের ভালো গ্রামবাসীরা কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় না থেকে জোটবদ্ধ হয়ে সুবিচার চাইছে। কেননা, গ্রামবাসীদের দাবি পুনরায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করা হোক। তাই তারা মৃতদেহ গুলি দাহ না করে করবস্থ করেছে। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতে পারছে না প্রশাসনকে, পুলিশকে। তাদের ভয় মরদেহ চুরিও হতে পারে। যে কারণে তারা পালা করে পাহারা দিচ্ছে মৃত দুই ছাত্রের মরদেহ।
এদিকে যে দুই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল স্কুল প্রাঙ্গণ, তাঁরাও আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁরাও আর চাইছেন না স্কুলের চাকরি! এমতাবস্থায় আগামী বুধবার বাংলা বন্ধের দিন কোথায় কী ঘটবে তা নিয়েও চরম চিন্তায় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও আমজনতা।