June 13, 2025

ইনকা দেবতার গ্রাসে ৫০০ বছরেরও পুরনো ৩ শিশুর মমি উদ্ধার, মৃত্যু গুহায়

0
Advertisements

সুরভিত তথা সুরক্ষিত পরিবেশের জন্য আজই ব্যবহার করুন, DAFFODIL

HnExpress ৯ই মার্চ, ওয়েবডেক্স নিউজ, পৌরাণিক ঃ উদ্ধার হলো ইনকা দেবতার গ্রাসে মৃত ৫০০ বছরেরও পুরনো ৩ শিশুর মমি, মৃত্যু গুহায়। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের নিজস্ব এক্সপ্লোরার জোহান রেইনহার্ড। ১৯৯৯ সালে ১৬ই মার্চ, এক্সপ্লোরার রেইনহার্ড ক্লাইম্ব করছিলেন আন্দ্রিজ পর্বতমালার অন্তর্গত ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি এল লুল্লাইল্লাকো (৬৭৩৯ মিটার)। আর লুল্লাইল্লাকো শৃঙ্গটি আন্দ্রিজ পর্বতমালার অন্তর্গত।

এবং চিলি ও আর্জেন্টিনার বর্ডার সংলগ্ন। ক্লাইম্ব করে পর্বতের শৃঙ্গে ওঠার পর স্তম্ভিত হয়ে যান রেইনহার্ড। শৃঙ্গের ওপর এক অনাবিস্কৃত ইনকা সমাধি ক্ষেত্র। এর সঙ্গেই রেইনহার্ড খুঁজে পেলেন, ২২১১০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পৃথিবীর উচ্চতম প্রত্নতাত্বিক ক্ষেত্রটি। এল লুল্লাইল্লাকো (৬৭৩৯ মিটার) লুল্লাইল্লাকো শৃঙ্গের ওপর গর্ত করে পাঁচফুট গভীরে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে তিনটি মৃতদেহ। রেইনহার্ড পরে তাঁর লেখায় বলেছিলেন, এই তিনটি মমি এ যাবৎ আবিষ্কৃত ও সংরক্ষিত হওয়া সেরা মমি।

আর এই সমাধিক্ষেত্র থেকে রেইনহার্ড পেলেন এমন তিন নাবালক নাবালিকার মমি, যাদের মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। বরং কষ্ট দিয়ে, তিলে তিলে মারা হয়েছে কুসংস্কারছন্ন ইনকা দেবতাদের তুষ্ট করতে। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে। দেহ তিনটির মধ্যে ছিল দুটি বালিকা ও একজন বালকের দেহ। ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গিয়েছিল বালিকা দুজন একই পরিবারের, কিন্তু বালকটি ছিল অন্য পরিবার থেকে।

এল লুল্লাইল্লাকো শিখরের সেই ইনকা সমাধিক্ষেত্রে দেবতাদের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য জীবন্ত শিশুদের উৎসর্গ করাকে ইনকা সভ্যতায় বলা হতো ‘কাপাকোচা’। ইনকাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিলো এই কাপাকোচা। সরাসরি রাজাদের তত্ত্বাবধানে চলতো এই অনুষ্ঠান। ইনকা রাজাদের দীর্ঘায়ু, যুদ্ধে সফলতা, রাজ্যবাসীর সুস্বাস্থ্য, ভালো আবহাওয়া, অধিক ফলনের জন্য অনুষ্ঠিত হতো এই নৃশংস প্রথা।

পুরো ইনকা সাম্রাজ্য থেকে খুঁজে আনা হতো বালক বালিকাদের। যে সে শিশু হলে চলবে না। নিখুঁত শারীরিক গঠন হতে হবে। এবং ভদ্র, ধার্মিক বা স্থানীয় শাসনকর্তার পরিবারের ছেলে মেয়েই হতে হবে। উৎসর্গ করার জন্য বালক বালিকাদের নির্বাচন হয়ে গেলে নিয়ে যাওয়া হতো হাজার মাইল দূরের ইনকা রাজধানী কসকো শহরে (বর্তমানে যা পেরুতে অবস্থিত)।

জানা যায়, ‘লা নিনা ডেল রায়ো’-এর সঙ্গে অভিযাত্রী রেইনফোর্ড নির্বাচনের পর হতভাগ্যদের পবিত্র করা শুরু হতো। তা চলতো কয়েক বছর ধরে। এরপর তাদের সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গে নিয়ে যাওয়া হতো উৎসর্গের জন্য। বিভিন্ন ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের পর, নাবালক এবং নাবালিকাদের জীবন্ত অবস্থায় দুর্গম স্থানে নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায় ফেলে রাখা হতো।


So Emmy…… Test Main Best —”TWIT”

ইনকারা বিশ্বাস করতো যাদের উৎসর্গ করা হচ্ছে তারা মারা যায় না। তারা পর্বতশৃঙ্গের ওপর থেকে ইনকা সাম্রাজ্যের সুরক্ষা বজায় রাখতে তার দেখ ভাল করে। এবং ইনকারা বিশ্বাস করতো এটাই শ্রেষ্ঠতম মৃত্যু। তা মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত বাচ্চারা যতই কাঁদুক না কেন। অন্যদিকে লা ডনসেল্লা বা কুমারী লুল্লাইল্লাকো
লা ডনসেল্লা (The Maiden) লুল্লাইল্লাকো আগ্নেয়গিরির শৃঙ্গে রেইনহার্ড খুঁজে পান এক মিষ্টি কিশোরীকে।

তার নাম দেওয়া হয় লা ডনসেল্লা। কুমারী লুল্লাইল্লাকো নামে বিশ্বখ্যাত ১৩ বছর বয়সি এই নাবালিকা মমি। সূর্য-কুমারী বা আকল্লা হিসেবে যাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, দশ বছর বয়সে। দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার জন্য যাকে রীতিমতো পবিত্র করা হয়েছিল পাঁচ বছর ধরে। রাখা হয়েছিল রাণি, মহিলা পুরোহিত ও উৎসর্গীকৃত অন্যান্য নাবালিকাদের সঙ্গে। এটাই ছিল ইনকাদের রীতিনীতি।

কারণ সে যে দেবকন্যা, সেটার প্রমাণ হিসাবে তার মাথায় পরানো ছিল পালকের মুকুট। কিশোরীটির চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো ছিল। পরনে ছিল সুন্দর পোশাক। ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছিল লা ডনসেল্লা, আর বাকিদের সঙ্গেই। মাত্র ১৩ বছর বয়েসেই লা ডনসেল্লার মাথার কয়েকটি পাকাচুল প্রমাণ করে, কী অসম্ভব মানসিক চাপ নিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হয়েছিল। মৃত্যুর আগে তাকে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টার মদ খাওয়ানো হয়েছিল। ঘুম পাড়ানোর জন্য।

উদ্ধারের সময় তার মুখে কোকা পাতা ছিল। যা কিনা নেশা করার জন্য ও হাই অল্টিটিউড সিকনেস কাটানোর জন্য ল্যাটিন আমেরিকার অধিবাসীরা হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। তবে ডনসেল্লার ফুসফুসে পাওয়া গিয়েছিল ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের চিহ্নও। লা ডনসেল্লাকে খুঁজে পাওয়ার সময়ও তার মুখের ভেতরে ছিল কোকা পাতা।

এরপর আসছি লা নিনা ডেল রায়ো (The Lightning Girl) এর কথা প্রসঙ্গে :— লুল্লাইল্লাকো আগ্নেয়গিরির শৃঙ্গের সমাধিক্ষেত্রে ছিল এই নাবালিকাও। রেইনহার্ড যখন তাকে খুঁজে পান, মাত্র ৬ বছর বয়স ছিল এই নাবালিকার। সম্ভবত বজ্রাঘাতের ফলে তার মুখ, একটা কান এবং একদিকের কাঁধ পুড়ে গিয়েছিল মৃত্যুর আগে বা পরে। নাবালিকার মাথাটি ওঠানো অবস্থায় ছিলো। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুখ করে শোয়ানো ছিলো তাঁকে।


জনস্বার্থে প্রচারিত।

নাবালিকার পরনে ছিল হালকা বাদামি আকসু পোশাক। তার ছোট্ট শরীর মোড়া ছিলো হলুদ লালের কারুকার্য করা মোটা উলের কম্বলে। নাবালিকার মাথাটি ছিল অস্বাভাবিক রকমের লম্বা। আরেকটি বিষয় গবেষকদের নজরে এসেছিল। লা ডনসেল্লাকে যেভাবে মৃত্যুর আগে তোয়াজ করা হয়েছে দেবকন্যা হিসাবে। সেই খাতিরটুকুও পায়নি এই ৬ বছরের নাবালিকা। কিছুটা তাচ্ছিল্য করে, আরও কিছুটা নির্মম ভাবে এই শিশুটির মৃত্যু ঘটানো হয়েছিল।

এল নিনো (The Boy ) :— আরেক বালকের মৃতদেহ। সে ছিল ৭ বছরের বালক। যার সারা শরীর দড়ি দিয়ে পেঁচানো ছিল। এতই জোরে বাঁধা হয়েছিল যে বুকের ও কোমরের পাতলা হাড় ভেঙে গিয়েছিল। প্রচন্ড মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুর আগে রক্তবমি করেছিল এল নিনো। এর প্রমাণ ছিলো তার পোশাকে। তার চুলে উকুন পাওয়া গিয়েছিলো। তিনজনের মধ্যে সেই একমাত্র, যাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

সম্ভবত মৃত্যুর পূর্বেই এবং আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে পালাতে চেষ্টা করার জন্যই হয়তো এমনটা করা হয়েছিল। যদিও গবেষকদের মতে এল নিনো মারা গিয়েছিল শ্বাসরুদ্ধ হয়ে।মিউজিয়ামে রয়েছে লা ডনসেল্লা :— বর্তমানে লা ডনসেল্লাকে আর্জেন্টিনার সল্টায় অবস্থিত ‘দ্য হাই কান্ট্রি আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম’ এর এক বিশেষ কক্ষে রাখা হয়েছে। কক্ষের বায়ুচাপ, অক্সিজেনের মাত্রা ও তাপমাত্রা লুল্লাইল্লাকোর শিখরের মতোই রাখা হয়েছে।

স্বাভাবিক উপায়ে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে। দর্শকরা দেখতে আসেন লা ডনসেল্লাকে। লা নিনা ডেল রায়ো এবং এল নিনোর দেহ নিয়ে এখনও চলছে গবেষণা, যদিও তা গোপনে লোকচক্ষুর অন্তরালে। আরও জানা যায় যে, এদের তিনজনকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে সুউচ্চ পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা কয়েকদিন ধরে হেঁটে পাহাড়ে উঠেছিল। সঙ্গে ছিল ইনকা পুরোহিত ও রাজার লোকেরা। আগে থেকেই পর্বতশীর্ষে তাদের জন্য সমাধি খুঁড়ে রাখা হয়েছিল।

প্রচন্ড ক্লান্তিতে তারা এমনিতেই আচ্ছন্ন ছিল। তাদেরকে সজীব করার জন্য কোকা পাতা দেওয়া হয়েছিল। দেবতাকে উৎসর্গ করার আগে প্রাণ হারালে চলবে না। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে তাদেরকে প্রথমে হাই-প্রোটিন ডায়েট দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত পশুর মাংস। তারপর তাদেরকে আকন্ঠ ভুট্টার মদ পান করানো হয়েছিল। সবশেষে তাদেরকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল শৃঙ্গের পাথর, মাটি, বরফ খুঁড়ে তৈরী করা মৃত্যুগুহায়। বাইরে তখন চলছিল ইনকা পুরোহিতদের অবশিষ্ট ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।

বাচ্চাদের আচ্ছন্নভাব কাটলেই জোর করে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছিল মদ। মুখে ঠুসে দেওয়া হচ্ছিল কোকা পাতা। ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষের আগে মরা চলবে না। এক সময়ে শেষ হয়েছিল অনুষ্ঠান। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায়, চৌবাচ্ছার মতো সমাধিক্ষেত্রে, হতভাগ্য শিশুগুলিকে মৃত্যুর হাতে ফেলে রেখে নেমে এসেছিল ইনকা পুরোহিত ও রাজপুরুষেরা। তখন সম্ভবত তুষারপাত শুরু হয়েছিল। আচ্ছন্ন অবস্থায় জমে কাঠ হতে শুরু করেছিল হতভাগ্য লা ডনসেল্লা, লা নিনা ডেল রায়ো এবং এল নিনোর দেহ।

এক সময় এসেও গিয়েছিলো শেষ ঘুম। মুক্তি দিয়েছিল তাদের পৈশাচিক যন্ত্রণা থেকে। কিন্তু, কুসংস্কারাচ্ছন্ন তিনটি তাজা প্রাণের নির্মম হত্যায় আদৌ কি তুষ্ট হয়েছিলেন ইনকা দেবতারা? না, তাতেও আদৌ তুষ্ট হননি ইনকা দেবতারা। হতে পারেন না। ইতিহাস বলছে, এত কিছুর পরেও ১৫৭২ খৃষ্টাব্দে নির্মমভাবে ধংস হয়ে গিয়েছিল ইনকা সাম্রাজ্য, স্প্যানিয়াডদের হাতে।

সেদিন কিন্তু লা ডনসেল্লা, লা নিনা ডেল রায়ো এবং এল নিনোর সেই বিদেহী আত্মারা লুল্লাইল্লাকো পর্বত শৃঙ্গ থেকে এসে কুসংস্কারচ্ছন্ন ইনকা সাম্রাজ্য বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। হয়তোবা তারাই এইভাবে নিয়েছিল, এক নির্মম প্রতিশোধ।

Advertisements

Leave a Reply