আধ্যাত্মিকতা হল জীবনের এক আয়না
HnExpress একটু অন্যরকম, সাবির হোসেন হালদার ঃ আত্মাকে চেনাই বোধহয় আধ্যাত্মিকতা! অনেকের ধারণা পরমাত্মাকে চেনা জানাই হলো আধ্যাত্মিকতার মূল বিষয়।এই বিতর্কিত বিষয়ের উপরেই আলোকপাত করাই আজকের প্রবন্ধের মূল ও মুখ্য বিষয়বস্তু। কোনো মূর্ত জিনিস সম্পর্কে জানা সহজ নাকি বিমূর্ত বিষয় সম্পর্কে? অপরিচিত, অজ্ঞাত কোনো বিষয় অপেক্ষা তুলনামূলক জ্ঞাত বা পরিচিত বিষয় সম্পর্কে চর্চা করা বোধ হয় সহজসাধ্য। তাহলে “আমি কে?” আর “আমার সৃষ্টিকর্তাই বা কে?” এই দুই প্রশ্নের মধ্যে কোনটার উত্তর তুলনামূলক ভাবে সহজে পাওয়া যাবে ? যেহেতু “আমি” আমার কাছে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত, জ্ঞাত, তাই “আমি কে?” – আজ তবে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজারই চেষ্টা করা যাক তাহলে।
“Every thing is the copy of the real, only idea is real” আর এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে ঈশ্বর সকল মানুষকে স্বতন্ত্র বানিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর মনের মাধুরী মিশিয়ে। একমাত্র তিনি real, বাকি সব কিছুই তাঁর চিন্তা ভাবনার copy। এখানে G.M Hopkins এর কথা “no two objects are alike” সেই দিকের ইঙ্গিতবাহী। আধ্যাত্মিক চিন্তা ধারা দুটো কাজ করে, “আমার” “আমি” কে চিনতে সাহায্য করে, আর এটা পারলেই প্রভুকে চেনা যায়, পাওয়া যায়। আর প্রভুকে পেলেই সব পাওয়া যায়, ফলে আত্মার মুক্তিও সম্ভব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য প্রভু প্রত্যেক মানুষকে কিছু কাজ দিয়েই এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তবে সেটা কি? সেটা হল নিজেকে আর প্রভুকে চেনার মাধ্যমে পরম মুক্তি প্রাপ্তি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে নাকি শাস্তি ভোগ করতে হবে সেই বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয় এখানেই।
দুটো চোখ আমাদের পৃথিবীর সব কিছু দৃশ্যমান বিষয়কে দেখতে সাহায্য করে। কিন্তু এক চোখ আর এক চোখকে দেখতে পায় না। একটা মাধ্যম দরকার হয় এক চোখে অপরকে দেখার জন্য। তেমনভাবেই ‘আমাকে’ চিনতে হলে ‘আমার’ এক সঠিক মাধ্যম দরকার। আর এই মাধ্যম খোঁজার জন্য মানুষ ব্যস্ত হয় বটে, তবে নির্বুদ্ধিতার জন্য ধোকাও খায় বিভিন্ন ‘বাবা’ , ‘পীর সাহেব’, ‘গুরু’ আরো কতো সব ভন্ডদের কাছে, নাম বলে শেষ করা যাবে না। জীবনে অবশ্যই একজন পথপ্রদর্শক দরকার আছে, কিছু না কিছু মাধ্যম দরকার আছে। তবে সেটা কোনো ব্যক্তি বা বস্তু হলেও চলে।
তবে যাকেই গুরু মানা হোক না কেন, তার কাছে কিন্তু সদা সত্যিটা বলতে হবে। সেটা কারো মা বা বাবাও হতে পারেন অথবা অন্য কেউ। তবে সব থেকে উত্তম হয় যদি নিজেই নিজের গুরু হওয়া যায়। তবেই সব সমস্যার সমাধান হবে, আবার সত্য ও এক অদ্বিতীয় জীবিত ঈশ্বরকেও পাওয়া যাবে; কেন না ঈশ্বর সৃষ্ট এই মানব জীবনের ভেদ বা রহস্য জানতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে, তা সে আধ্যাত্মিক বিষয় হোক কিংবা প্রার্থিব। আর তাই নিজেকে নিয়ে নিজের মধ্যে মিশে যাওয়া বা ফানা হওয়ার মধ্যেই ঈশ্বরের পবিত্র অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। “আপনার আপনি ফানা হলে সে ভেদ বা নিঃগূঢ় রহস্য জানা যাবে”। আদি আর অন্তের গূঢ় তথ্য সমূহ জানা অনেক সহজ হয়ে উঠবে।