আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞান ও উপবাস বিষয়ের মেলবন্ধন

HnExpress অন্যরকম, সাবির হোসেন হালদার ঃ আধ্যাত্মিকতা হলো আত্মার ও পরমাত্মা সম্পর্কীয় বিষয়ে জানা ও তার সাধনা করা। সেখানে শরীর প্রার্থিব, যেটা নশ্বর। অন্যদিকে আত্মা অবিনশ্বর ও ঐশ্বরিক। শরীরের জন্য খাদ্য লাগে কারণ খাদ্যই ইঞ্জিনের জ্বালানি। বিজ্ঞানের ভাষায় বললে বলা যায়, শরীর নামক যন্ত্রের চালিকা শক্তি হলো খাদ্য। জাগতিক বিষয় মাত্রই অন্য জাগতিক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। পরনির্ভরশীল নয় এমন কোনো জাগতিক বিষয় বা বস্তু নেই।
অন্যদিকে আমরাও অর্থাৎ আমাদের শরীর ও আত্মার বিষয় ভেবে থাকি আমরা আমাদের জন্য সব করছি। আসলে আমার বা আমাদের এইসব ধারণাগুলোই হলো প্রার্থিব। জাগতিক আর ঐশ্বরিক বিষয় একসাথে থাকলেও দুটো কখনোই এক নয়। এখানে সুক্ষ ফারাকটা অনেকটা ফ্রয়েডের মানসিক অবস্থার তিন ভাগের মতো : চেতন, অবচেতন ও অচেতন। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে তিনটি ভাগের যে কোনো দুটি সর্বদা আনুপাতিক ভাগ হারে সক্রিয়। এটা কোনো ব্যক্তির free will ঠিক করে সে জাগতিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায় নাকি ঐশ্বরিক, নাকি অসীমের সাধনে সসীম এ আবদ্ধ হয়ে যাওয়া ?
উপরে উল্লিখিত বিষয়ে গভীরে প্রবেশ করলেই বোঝা যাবে খাদ্য কি? তার প্রয়োজনীয়তাই টা বা কি, আর খাদ্য বা শক্তি ছাড়াও কোনো ইঞ্জিন চলতে পারে কি না? এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, না খেয়ে থাকা, উপোষ ও রোজা বা সিয়াম সাধনা এক নয়। না খেয়ে থাকা একটা ঘটনা বা বিষয় মাত্র, যেটা জাগতিক এবং অনির্দিষ্ট সময় সাপেক্ষ; আবার পরের দুটোতে ধর্মীয় বিষয় যুক্ত। উপোষ আর রোজার মধ্যেও ধর্মীয় রীতি নীতি অনুযায়ী ফারাক আছে। তবে তিনটি বিষয়কেই বিজ্ঞানের আলোকে এখানে বলা যায়, কিছু সময় (অল্প বা বেশী, নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট) খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ না করা বা শরীরে প্রবেশ না করানো। এই সব কিছু বিষয়ের প্রয়োজন কেবলমাত্র শরীরের বা প্রার্থিব বিষয়ের। যে আত্মা ঈশ্বর প্রেমে মগ্ন থাকবে তার আবার খাবার এর চিন্তা কিসের? আত্মার খাবার সাধনা, ভজনা, আরাধনা।
জাগতিক বিষয়ের উর্দ্ধে অবস্থান করা সম্ভব না হলে কোনো কিছুই সঠিকভাবে হয়না, আর তখন প্রার্থিব বিষয় বেশি ডাকে। উপোষ করে বা রোজা বা সিয়াম সাধনাকালে তাই যদি পিপাসা বা খিদের জন্য কষ্ট হয় তাহলে বোঝাই যায় যে পরমাত্মা যেমন সাধনা চায় তা আত্মা দিতে ব্যর্থ, অর্থাৎ সাধনা পরিপূর্ণ ও নিখুঁত হয় নি। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, পরমাত্মার সাধনার জন্য জাগতিক সকল বিষয় বর্জন গ্রহণযোগ্য বিকল্প নাও হতে পারে। অর্থাৎ জাগতিক বিষয়ের মধ্যে থেকেও ঐশ্বরিক সাধনায় মেতে থাকা যায়। যেমন আমরা চাইলে (বা না চাইলেও) আমাদের অবচেতন মনকে সক্রিয়, অতিসক্রিয়, ঝিমানো বা নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারি বা চেষ্টা করতে পারি, এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই।
উপোষ বা উপবাস ক্ষেত্র বিশেষে সজলা বা নির্জলা হয়, ক্ষেত্র বিশেষে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য গ্রহণ বা বর্জনেও হয়। রোজা বা সিয়াম সাধনা নির্দিষ্ট সময় থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে বিরত রাখে একটি নির্দিষ্ট দিন থেকে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত। এটা তথাকথিত ধর্মীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া পালন করা বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে উপোষ বা উপবাসের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বিষয়টা নেই। সার্বিকভাবে এই না খেয়ে থাকার সব থেকে বড় বিজ্ঞান সম্মত উপকার হলো শরীরের বাড়তি মেদকে রিডিউস করা। আর আধ্যাত্মিকতার উপকারিতা হলো ইন্দ্রিয়ের উপর কর্তৃত্ব করা। আর তাই জ্ঞানী মানুষরা এই সময় আত্মাকে শক্তি জুগিয়ে পরোমাত্মাকে খুশি করতে চায়। অর্থাৎ তাঁরা প্রার্থিব ও অপার্থিব দুটো বিষয়েই লাভবান হয়ে থাকেন।