সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গান বাঁধলেন টলিউডের শিল্পীরা
HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ অনেক দিন আগেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে টলিউড ফিল্ম জগৎ। বাম আমলে কিছু সংখ্যায় শিল্পী রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থনে থাকলেও তার পতনের সেই বছর থেকে তৃনমুল দলের হাত ধরেই টলিউডের শিল্পী মহলের বেশী সংখ্যাক শিল্পী প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেয়। কেউ গিয়ে ছিলেন গেরুয়া শিবিরে, কেউ আবার সবুজের দলে। তবে ২০২১ এর ভোট আবহাওয়া কালিন রং বদলের এই মরসুমে বেরিয়ে এল আরও এক শিবিরের স্বর।
রাজনৈতিক মতাদর্শ ছাড়াও যে প্রতিবাদ করা যায়, কিংবা কমিউনিটি কিচেনে সাহায্য করেও যে মানুষের সেবা করা যায় তা দেখিয়ে দিল কিছু সংখ্যাক শিল্পী। এরা কোনো রঙ বদলে বিশ্বাসী নয়, এবং দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে উত্তেজনা মূলক বক্তৃতা দিয়ে পালা বদলেও বিশ্বাসী নয়। রবি ঠাকুরের দেশে গান বেঁধে সেই গানকেই প্রতিবাদের হাতিয়ার করেছেন বুদ্ধিজীবি শিল্পী মহল।
“গুমনামি বাবা” নামক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসকে নিয়ে সিনেমার অভিনেতা ও একাধারে গীতিকার অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কলমের সৃষ্টি এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী গান। যার মূল বিষয় দিয়ে কটাক্ষ করা হল সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিকে। কারন তাঁরা মোদি সরকারের সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এই ভারত ভূমির জন্য মঙ্গল নয়। হিন্দু, মুসলীম ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন স্থল এই পূন্য ভারত ভূমি। যেখানে হিন্দুর উৎসবে মুসলীমের অবাধ বিচরন অথবা উল্টো হয়ে থাকে, সেই খানে এন আর সি কিম্বা সি সি এর মতো আইনের ধারা যুক্তিহীন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন শুধু হিন্দুদেরই ছিলো না তা ইতিহাসের পাতাই বলে দেয়। নীল বিদ্রোহ কিংবা মাস্টারদার সাথে তিতুমীরের মতো বিপ্লবীদেরও একসাথে মনে করে রেখেছে ভারতবাসী। আজও দাদু ঠাকুমারা বাচ্চাকে তাদের সাহসীকতার কথা বলতে বলতে গর্বিত হয়। ছয় মিনিটের এই ভিডিওতে নবীন প্রজন্মের শিল্পীদের সাথে প্রবীণ শিল্পীদের মিশেল দেখা যায়। পরিচালনায় ছিলেন ঋদ্ধি সেন ও ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়।
বয়সের তুলনায় অনেকটাই নবীন প্রজন্মের এই পরিচালকদের কাজের গুনগত মান দেখে ভবিষ্যতে তাদের থেকে অনেক কিছুই আশা করা যায়। ২০১৯ সালে রামলীলা ময়দান থেকে শুরু হওয়া এক মিছিলে হাঁটার পরে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কলমে উঠে এসেছিল এই গান। সঙ্গে ছিলেন ঋদ্ধি সেন এবং ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। তখনই এই ভিডিয়ো তৈরির কথা ভেবে ছিলেন তাঁরা। অভিজ্ঞ শিল্পীদের মধ্য থেকে অংশগ্রহণ করেছেন কৌশিক সেন, রেশমী সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এছাড়াও ছিলেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, অনুপম রায়, রূপঙ্কর বাগচী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন, রাহুল চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী ও সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতো একঝাঁক তারকা। এই শিল্পীদের কোনো দলের হয়ে ভোটের লড়াইতে লড়তে দেখা যায়নি। সুমন মুখোপাধ্যায়ের কথাতে, ‘‘এই দলবদলের রাজনীতি দেখে মানুষও কিছুটা ভয় পেয়ে রয়েছেন।
তাঁরা যে মন খুলে কথা বলতে পারেন, এগিয়ে আসতে পারেন, আজ সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি আমরা।’’ ঋদ্ধি, সুরঙ্গনা এবং ঋতব্রতর মতো নব্য পরিচালকদের সাথে উদ্যোগে সময় বার করে পরিকল্পনা ও প্রতিস্থাপনের দায়িত্ব অনেকটাই সামলেছেন ফেলুদার তোপসে ওরফে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। দেশের বেকারত্ব, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ, নারী নিরাপত্তা, ধর্মের রাজনীতির মতো একাধিক সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে এই গানে।
নব্য পরিচালক ঋদ্ধি সেন বলেন, “এই গানটি তৈরির পরিকল্পনা ছিল বহু দিন ধরেই। বাংলায় যাতে এই ফ্যাসিবাদী সরকার না আসতে পারে। তার জন্যই এই চেষ্টা।’’ তাঁর বাবা কৌশিক সেন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে বাংলায় বিজেপি-কে আটকানোটাই প্রধান উদ্দেশ্য। তবে পশ্চিমবঙ্গে আজ যদি বিজেপি সরকার নাও আসে, কেন্দ্রে কিন্তু এই সরকারই থাকবে। তাই আমাদের লড়াইটাও জারি থাকবে রীতিমতো।” কিন্তু এটার পরেও একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যে ভাবে বিজেপির নোংরা রাজনীতিতে কিছু সংখ্যক তারকা বিজেপিতে যোগদান করছেন তাতে পেটের ভাতে টান পড়বে না তো?
এই প্রশ্নে নব্য পরিচালক ঋতব্রতের উত্তর, ‘‘যাঁরা এখন বলছেন মানুষের হয়ে কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছেন, কিন্তু লকডাউনে দুস্থ শিল্পীদের জন্য তাঁদের কাছে বারংবার সাহায্য চেয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। তখন কোথায় ছিলেন তাঁরা? তাই রাজনৈতিক বিপরীত মতামতের কারণে যদি কাজ না পান, তা নিয়ে ভয় পেতে রাজি নয় এই নব্য অল্প বয়সী পরিচালকদ্বয়। একই সাথে গানে ও বক্তব্যে সুর মিলিয়েছেন অনুপম রায়।
তিনি বলেন, কে কী ভাবল, সব দেখতে গেলে কাজটাই করা যাবে না। আমরা যা মনে করি, সেটাই শুধুমাত্র তুলে ধরেছি এই গানের মধ্য দিয়ে।” দিন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বাড়ছে বিজেপি বিরোধীতা। আমজনতার মুখেও এক কথা, বাংলার রাজনীতিতে আর যেই আসুক না কেন বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দল নয়। কারণ ক্ষমতায় আসার আগেই যে ভাবে বাংলা ভাষা ও বাংলাকে অপমান করছে বিজেপির কিছু সংখ্যাক নেতা, আর যাই হোক ভালো কিছু হতে পারে না। প্রথমে পালা বদলের খেলাতে জনতা মাতলেও, এই মূহুর্তে অনেকেই সংযত হয়েছে বিজেপি সরকার পরিচালিত অন্য রাজ্য গুলিকে দেখে।