৮ দিনের লড়াইয়ের আজ শেষ দিন, জীবনযুদ্ধে হার মানল পোলবার পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ঋষভ সিনহা্”—-

0

HnExpress ২২ শে ফেব্রুয়ারী, ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত, কলকাতা ঃ ৮ দিনের যমে-মানুষের লড়াইয়ের আজ শেষ দিন ছিল। শনিবার ভোর পাঁচটায় জীবন যুদ্ধে হার মানল পোলবার পুলকার দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ঋষভ সিনহা্। শুক্রবার রাতেই তার অবস্থা প্রায় চিকিৎসকদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পরিজনদের। বাবা-মা দৌড়ে আসেন এসএসকেএম হাসপাতালে। ঋষভকে বাঁচানোর শেষ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান মরিয়া চিকিৎসকরা।

কিন্তু তাতেও যে শেষ রক্ষা হল না। পরিজনদের ছেড়ে বহুদূরের না ফেরার পথে পাড়ি দিল ছোট্ট ঋষভ সোনা। ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্কুল যাওয়ার জন্য শেষবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ঋষভ। সুস্থ অবস্থায় মায়ের সঙ্গে সেই তার শেষ দেখা। বাবা তুলে দিতে গিয়ে ছিলেন পুলকারে। হাত নেড়ে বাবাকে বিদায় জানিয়ে প্রাণোচ্ছ্বল ছোট্ট ঋষভ উঠে গিয়েছিল শেখ শামিমের পুলকারের ভিতর।

আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে খবর আসে ঋষভের পুলকার দিল্লি রোড ধরে স্কুলে যাওয়ার পথে আচমকাই পোস্টে ধাক্কা মেরে নয়ানজুলির পঁচা খালে উলটে গিয়েছে। তড়িঘড়ি চুঁচুড়া ইমামবাড়ির সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের। কিন্তু ঋষভ এবং দিব্যাংশুর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় থাকায় তাদের গ্রিন করিডরের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।

কিন্তু ফুসফুসে প্রচুর পরিমাণে কাদাজল ঢুকে যাওয়ায় শ্বাস নিতে পারছিল না ছ’বছরের ক্লাস টুয়ের পড়ুয়া ঋষভ। ইকমো পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু হয় তার। দিন যত গড়িয়েছে ততই একের পর এক বিকল হয়েছে নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। সাথে ক্রমশই কমছিল প্লেটলেট। রক্তে থাকা অন্যান্য উপাদানেরও তারতম্য ঘটছিল প্রতিনিয়ত। আর শুক্রবার দুপুরেই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, লিভার, কিডনি, ফুসফুস কাজ করছে না আর।

সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ঋষভের চিকিৎসা শুরু হয়। তবে শুক্রবার রাতে খুদে পড়ুয়ার অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে। বেশ কয়েক বোতল রক্তও দেওয়া হয় তাঁকে। ডায়ালিসিস করারও চিন্তা ভাবনা চলছিল মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে। কিন্তু খুদে শিশুটি সেই ধকল যে কতটা সহ্য করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল চিকিৎসকদের। তবুও রাতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ঋষভকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা শুরু করেন চিকিৎসকরা।

তবে তাতেও বিশেষ সুবিধা হল না। শনিবার ভোর পাঁচটার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল ৬ বছরের ছোট্ট ঋষভ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরে মৃত্যু হয়েছে পুলকার দুর্ঘটনায় আহত খুদে ঋষভ সিনহা্র। তাঁর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছন খুদের পরিজন এবং পরিচিতরা। সাথে এসএসকেএমে পৌঁছে যান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ঋষভের বাবা।

শনিবারই ঋষভের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল খুদের নিথর দেহখানি। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছোট্ট দুরন্ত ঋষভ বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল তার প্রতি দিনের গন্তব্যস্থল স্কুলের পথে, আর সেই ১৪ই ফেব্রুয়ারীর পর আজ সে বাড়ি ফিরল, কিন্তু কফিনবন্দী হয়ে। কান্না থামাতেই পারছেনা তার বাবা…মা, বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছেন তাঁরা। ঋষভ যে তাদের একমাত্র সন্তান। বড়ই করুণ দৃশ্য সেটা— রোজ যে পথে ছোট্ট ঋষভ ফিরতো তাঁর মায়ের কোলে করে….আজ সেই পথেই রওনা দিলো ঋষভ না ফেরার দেশে…।

গাড়িটাও আজ বদলে গেছে, স্কুল ব্যাগটাও নেই আজ আর সাথে…একাকী ঋষভ ঘুমিয়ে আছে ছুটছে গাড়ি— ঋষভ যে আর কোনো দিন তাদের কোলে ফিরবে না সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার বাবা -মা! মেনে নিতে পারছে না গোটা শ্রীরামপুর সহ সেই এলাকার অগণিত মানুষ। ঋষবের এই অকাল মৃত্যুতে শোকাহত গোটা রাজ্যবাসী সহ সারা পোলবা।

প্রয়াত ঋষভ সিনহা্।

তৎসহ পরিবার পরিজন, এলাকাবাসী ও সারা শ্রীরামপুরে নেমে এসেছে গভীর শোকের কালো ছায়া। তবে ঋষভের এই অকালে চলে যাওয়াটা কিন্তু অনেক গুলো কঠিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে গেলো এই সমাজের দিকে —কী দোষ ছিল ক্লাস টু’য়ে পড়া ফুলের মত ছোট্ট ঋষভের….?
কেনইবা চালকের দায়িত্বজ্ঞান হীনতার বলি হতে হলো ওকে….? কেন আজও ঠিকঠাক মানা হয় না ট্রাফিক আইন…? কেন বারবার ফুটফুটে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুদের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা চলে?…কেন..?

প্রশ্ন আজ প্রতিটি আম জনতার মুখে মুখে, প্রশ্ন প্রতিটি সন্তানের বাবা-মায়ের, কাল রাস্তায় তাদের সন্তানরা কি আদৌ নিরাপদ? যদিও এক্ষেত্রে এটা বলাই বাহুল্য, এসএসকেএমের প্রতিটি চিকিৎসক তাদের সর্বস্ব দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ছোট্ট ঋষভের জীবন প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার, কিন্তু না, শেষ রক্ষা যে হল না। অকালেই ঝরে গেল ফুলের মত একটা নিষ্পাপ জীবন।

 

 

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply