টাস্কফোর্স গঠন করে সুপ্রিম কোর্টের কোভিড মোকাবিলায় মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার ঢেউ—

0

HnExpress অরুণ কুমার, কলকাতা ঃ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোদি সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত নড়বড়ে। আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে ও বাহিরে নানান সমালোচনা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টকেও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের এক সময়ের সহযোগী রাজনৈতিক দল শিবসেনাও তীব্র সমালোচনা করেছে মোদি সরকারের।

এ বিষয়ে শিবসেনা এদিন মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছে, যখন পাশের ছোট ছোট দেশগুলি ভারতকে করোনা মোকাবিলায় সহায়তা দিচ্ছে, তখন মোদি সরকার বহু কোটি টাকার কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়। এক সময়ের বিজেপি সহযোগী এই দলটি আরও বলেছে, যে পন্ডিত নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, মনমোহন সিংহ সহ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা বিগত বছরগুলোতে যে স্ন ব্যবস্থা তৈরি করে ছিলেন তাই দেশকে আজ এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।

শিবসেনার দলের মুখপত্র, সামনা’তে আরও লেখা হয়েছে, “নেহেরু-গান্ধীর তৈরি ব্যবস্থায় ভারত টিকে আছে। পাশাপাশি অনেক দরিদ্র দেশও ভারতকে সহায়তা দিচ্ছে। এর আগে পাকিস্তান, রুয়ান্ডা এবং কঙ্গোর মতো দেশ অন্যদের সাহায্য পেত। তবে আজকের ভারতের শাসকের ভুল নীতির কারণে ভারত এখন এই কঠিন পরিস্থিতিতে এসে পড়েছে।” শুধু তাই নয় মোদিকে আক্রমণ করে শিবসেনা লিখেছে যে, যদিও দরিদ্র দেশগুলি ভারতকে তাদের নিজস্ব উপায়ে সহায়তা করছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০,০০০ কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্তার উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি বন্ধ করতে প্রস্তুত নন।

এবার একটু দেশের বাইরের দিকে তাকানো যাক। “ইউনিসেফ আশংকা প্রকাশ করেছে যে করোনা ভাইরাস দেশে যে গতিতে ছড়াচ্ছে তার কারণে ভারত থেকে বিশ্বকে হুমকির সম্মুখীন করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বাধিক সংখ্যক দেশকে ভারতের সহায়তা করা উচিত বলেও একটি আবেদন করা হয়েছে। শিবসেনা তাদের মুখপত্র সমানাতের একটি সম্পাদকীয়তে বলেছে, “বাংলাদেশ ১০,০০০ রেমডিসিভির শিশি প্রেরণ করেছে, এবং ভুটান চিকিৎসার অক্সিজেন প্রেরণ করেছে। নেপাল, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা ভারতকে ‘আত্মনির্ভর’ সহায়তাও দিয়েছে।

অন্যদিকে, ভারতের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির জন্য মোদি সরকারের উদাসীনতাকেই দায়ি করেছে আন্তর্জাতিক পত্রিকা ‘ল্যানসেট’। সারা বিশ্ব জুড়ে এই নিয়ে আরম্ভ হয়েছে তোলপাড়।
এদিন ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মোদি সরকার যে ভাবে কোভিড পরিস্থিতিকে খাটো করে দেখেছে, তাতেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছে। ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে সরাসরি মোদি সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে লেখা হয়েছে যে, করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ ভারত নিজেই ডেকে এনেছে।

ল্যানসেটের বক্তব্য যে, করোনার নতুন প্রকার হল ‘সুপার স্প্রেডার’ সেটা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও মোদি সরকার বারংবার সব রকম ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বিশেষ রাজনৈতিক সমাবেশ এর অনুমতি দিয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে যখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদি সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে তখনই তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে বলে ল্যানসেট উল্লেখ করেছে। মোদি সরকার কোনও সমালোচনাই শুনতে চায় না বলেও তাদের অভিযোগ।

ল্যানসেটের সম্পাদকীয়ের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে করোনা মোকাবিলায় ভারত যে সাফল্য পেয়েছিল তাতে তাদের আত্মতুষ্টি এসে যায়। এপ্রিলের গোড়া পর্যন্ত ভারত সরকার করোনা মোকাবিলায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। করোনা মোকাবিলার যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয় তার বৈঠক পর্যন্তও ডাকা হয়নি। আর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলে ছিলেন যে, মহামারীর শেষের শুরু হয়েছে, সেকথাও উল্লেখ করেছে ল্যানসেটের সম্পাদকীয়। এ ভাবেই একটা পর একটা ঘরে বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।

একটা পর একটা তীব্র আক্রমনের মুখে পড়ছে মোদি সরকার। উল্লেখ করা যেতেই পারে যে,
কোভিড মোকাবিলায় বর্তমানে প্রয়োজনীয় ওষুধ, হাসপাতালের বেড, এমনকী পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগানে ব্যর্থ কেন্দ্রের মোদি সরকার। আর তাই মোদি সরকারের ওপর আর কোনও ভরসা করছে না দেশের শীর্ষ আদালত। বরং ১২জন সদস্যের রাষ্ট্রীয় টাস্কফোর্স গঠন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এবার থেকে তাঁরাই এই কোভিড মোকাবিলায় কাজ করবেন দেশ জুড়ে। টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতার এক নামী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে সম্প্রতি কোভিড অতিমারীর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেই অক্সিজেন এবং কোভিডের প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘটাতি চরমে। যেটি সুপ্রিম কোর্টের নজর এড়িয়ে যায়নি মোটেই। কিন্তু এ নিয়ে কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করেও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। কেন্দ্র সরকার পর্যাপ্ত ওষুধ, ভ্যাক্সিন কিংবা অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। কিন্তু দেশ জুড়ে এই ভয়ানক কোভিড পরিস্থিতিতে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না।

তা ভেবেই এবার জাতীয় স্তরে ১২জন সদস্যের একটি অ্যাকশন টাস্কফোর্স গঠন করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের প্রাক্তন উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস। রয়েছেন দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান ডা. দেবেন্দ্র সিং রানা, ডা. দেবীপ্রসাদ শেট্টি, ডা. গগনদ্বীপ কং, ডা. জেভি পিটার, ডা. রাহুল পণ্ডিতের মতো বিখ্যাত চিকিৎসকরা। এবার থেকে তাঁরাই ঠিক করবেন কোন রাজ্য কতটা অক্সিজেন, ওষুধ ও ভ্যাক্সি পাবে।

মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহে কোথায় কী ঘাটতি রয়েছে? এ বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যগুলিকে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে না কেন্দ্র। এর আগে দিল্লি-সহ একাধিক রাজ্যে কম অক্সিজেন পাওয়ার অভিযোগও তুলেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। ফলে পশ্চিমবঙ্গের জন্যও বাড়তি অক্সিজেন চেয়ে চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট নিজেই। অক্সিজেন তৈরি থেকে শুরু করে রাজ্যগুলিকে বিতরণ সমস্তটার উপরেই নজরদারি চালাবে এই টাস্কফোর্স।

দেশ জু়ড়ে অক্সিজেন ও ওষুধের সমস্যা মেটাতে সুপ্রিম কোর্টের এই হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই মুখ পুড়ল কেন্দ্র সরকারের। সারা বিশ্ব জুড়ে যখন বিভিন্ন দেশ এই মহামারীর মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, ঠিক তখন ভারতে মোদি সরকারের ভূমিকা সমগ্র দেশের মানুষের কাছে এক বড় প্রশ্ন বোধক চিহ্ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে? যা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় সে নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই!

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply