ফরিদাবাদের “লভ জিহাদ” এর ঘটনায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

0

HnExpress ৩০শে অক্টোবর, অরুণ কুমার ঃ একটার পর একটা লাভ জিহাদের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সারা দেশ জুড়ে। সম্প্রতি হরিয়ানার ফরিদাবাদের নৃশংস ঘটনায় ‘লাভ জেহাদের’ যোগ রয়েছে বলেই অভিযোগ করেছেন মৃতার পরিবার। যদিও ইতিমধ্যে দুই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, কলেজের বি কম এর তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী নিকিতা তোমরকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেছিল দুই যুবক।

সেই কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে সেখানে তখন তাঁর এক বান্ধবীও উপস্থিত ছিল। হঠাৎ করেই একটি সাদা গাড়ি এসে যুবতীর সামনে দাঁড়ায়। তারপর গাড়ি থেকে দুই যুবক নেমে এসে বি কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নিকিতা তোমরকে অপহরণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। কিন্তু কোনও ভাবেই তাঁরা নিকিতাকে জোর জবরদস্তি করেও গাড়িতে তুলতে পারে না। আর তখনই একজন যুবক রাগের বশে নিকিতাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নিকিতা।

এরপর ওই দুই যুবক নিজেদের গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা বান্ধবী নিকিতার সামনে গিয়ে দেখে, তাঁর দেহ নিথর হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। জানা গিয়েছে, নিকিতা আততায়ী যুবকের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। আর সেই গররাজির ‘অপরাধে’ই রীতিমতো দিনে দুপুরে কলেজের সামনে তাকে গুলি করে খুন করে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত যুবক ও তাঁর এক বন্ধু।
আর এই নৃশংস খুনের গোটা ঘটনাটি কলেজের সামনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।

তাতে দেখা গিয়েছে, সদ্য পরীক্ষা দিয়ে কলেজ থেকে ফিরছিলেন নিকিতা। কলেজ থেকে বের হতেই একটি গাড়ি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। জোর করে তাঁকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে দু’জন। কিন্তু তাঁকে গাড়িতে তুলতে না পেরে সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। আর সেই মূল অভিযুক্তের নাম তৌসিফ বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই খুনের পিছনে লাভ জেহাদকেই অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছে মেয়েটির পরিবার।

তাঁদের অভিযোগ, ভিনধর্মের তৌসিফ বহুদিন ধরেই নিকিতাকে পছন্দ করত। ২০১৮ সালে তৌসিফের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছিল মেয়েটির পরিবার। যদিও পরে তাঁরা সেই অভিযোগ তুলে নেয় মেয়ের সম্মান ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ফরিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় দোকান ভাঙচুর করে ধর্ণায় বসেছে প্রতিবাদকারীরা। সুবিচারের আশায় নিরব ধর্ণায় বসেছে মেয়েটির পরিবার।

নিকিতার মায়ের কথায়, মূল অভিযুক্ত দোষীকে যতক্ষণ না এনকাউন্টার করে মারা হচ্ছে, ঠিক ততক্ষণই মেয়ের দেহ তাঁরা দাহ করবেন না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিকিতার জন্য সুবিচার দাবি করা হয়েছে। এবিষয়ে হরিয়ানার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, “২০১৮ সালে নিকিতার পরিবারের পক্ষ থেকে তৌসিফের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু সময় পরে নিকিতার পরিবারই আবার সেই মামলা তুলে নেয়। তাই সেই সময় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি।

কিন্তু এবার তাঁকে হাতেনাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকগুলো বিষয় সামনে উঠে এসেছে, তা হল হরিয়ানার ফরিদাবাদের বল্লভগড় থানার মিল্ক প্লান্ট রোডের এই ঘটনা কিন্তু রাতের অন্ধকারে ঘটেনি। ঘটেছে একেবারে দিনের স্বচ্ছ আলোয়। যে সময় যুবতীকে অপহরণের চেষ্টা করা হচ্ছিল, তখন আশেপাশে, সামনাসামনি বেশ অনেকেই ছিলেন। কিন্তু কেউই এগিয়ে এসে সেই অপহরণ রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেননি।

প্রকাশ্য রাস্তায় দিনের আলোয় এক কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করে দুজন যুবক। আর তা না করতে পেরে ব্যর্থ হয়ে রাস্তার উপরে তৃতীয় বর্ষের সেই কলেজ ছাত্রীকে গুলি করে পালিয়ে যায় আততায়ী। স্বাভাবিক ভাবেই এই চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনায় মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আরো একবার বড়সড় প্রশ্ন উঠে এসেছে! সারা দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা।

তা বাড়ি হোক বা বাড়ির বাইরে, মেয়েদের উপর এই অত্যাচার ও নির্যাতন যেন এদেশে এখন অনেকটা জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, দু’বছর আগে নিকিতাকে আরো একবার অপহরণের চেষ্টা করেছিল এই একই যুবক। তবে সেবার নিকিতার পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু জানাজানি ও লোক লজ্জার ভয়ে শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করেন নিকিতার বাবা।

অন্যদিকে কেস তুলে নেওয়ায় পুলিসও আর এই ঘটনা নিয়ে কোনও তদন্ত করেনি। এখন নিকিতার বাবা মুলচন্দ আফশোস করে বলছেন, সেদিন ওই যুবকের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিলে হয়তো এখন তাঁর মেয়েটি বেঁচে থাকত! জানা গিয়েছে, তৌসিফ নামের সেই যুবক স্কুল জীবন থেকেই নিকিতাকে বিরক্ত করত। পুলিসের ধারণা, বহু বছর ধরেই নিকিতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছিল তৌসিফ। কিন্তু নিকিতা বারবারই তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

আর তাই প্রতিশোধ স্পৃহায় যুবক এই নৃশংস হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সালেও একবার নিকিতাকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল তৌসিফ। সেবার নিকিতার পরিবারের তরফে পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে ও মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিকিতার বাবা সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তাঁর সেই ভুলের মাসুল দিতে হল নিকিতাকে নিজের জীবন দিয়ে। পুলিস জানিয়েছে, নিকিতার উপর প্রচন্ড রেগে ছিল তৌসিফ।

নিকিতাকে বারবার ফোন করেছিল সে। কিন্তু নিকিতা তার ফোন তোলেনি এবং পরে তাঁর নম্বরও ব্লক করে দেয়। এরপর কলেজে পরীক্ষা দিতে এসেছিল নিকিতা। পরীক্ষা শেষে এক বান্ধবীর সঙ্গে কলেজ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল সে। তৌসিফ জানত ঠিক কোন সময়ে গেলে নিকিতাকে কলেজের বাইরে পাওয়া যাবে। ফরিদাবাদের এই ঘটনায় আবারও লাভ জিহাদের অভিযোগ সামনে উঠে এসেছে। নিকিতার পরিবারের একজন দাবি করেছেন, তৌসিফ নামের সেই যুবক নিকিতাকে বারবার ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ের জন্য চাপ দিত।

তৌসিফ নামের যুবক মুসলিম সম্প্রদায়ের। আর তাই নিকিতাকে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে ছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু নিকিতা তাঁর সেই প্রস্তাবে কখনো সাড়া দেননি। এরপরই তৌসিফ আরেক সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে নিকিতাকে অপহরণ করতে আসে। কলেজ থেকে বেরনোর পর নিকিতাকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে তৌসিফ। তখন ওই এলাকায় বেশ ভিড় ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আশেপাশে প্রচুর লোক থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কেউই নিকিতাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি।

দিনের প্রকাশ্য আলোয় রাস্তার উপর এক তরুণী কলেজ ছাত্রীকে গুলি করে খুন করা হলো। এমন হাড়হিম করা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে গেছে নেটিজেনদের মধ্যে। ফরিদাবাদের বল্লভপুরের এই ঘটনা আরও একবার এদেশে মহিলাদের নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে অসুরক্ষার এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিল সমাজের কাছে!

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply