করোনার দরুন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ঃ মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা

0

HnExpress ৩০শে জুন, বিশেষ প্রতিবেদন ঃ করোনার প্রকোপ দরুন বাংলার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলায় ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা। এমতাবস্থায় ছাত্র-ছাত্রী তথা যুবসমাজ এর জীবন সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই ৩১শে জুলাই পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছেন বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রী তথা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এতদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা হবে কি করে? আর তাদের মূল‍্যয়নই বা হবে কি করে?

ইতিমধ্যেই উচ্চমাধ্যমিকের বাকি তিনটি পরীক্ষা এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের চূড়ান্ত মূল‍্যয়নের পরীক্ষাও করোনার এ ঘনঘটা আবহে লকডাউনের জন্য বহুদিন যাবৎ বন্ধ হয়ে পরে রয়েছে, সেই পরীক্ষাই বা হবে কি করে? এই রকম নানা আশঙ্কাজনক প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের মনে জল্পনা উঠেছে তুঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান যে, ২রা জুলাই, ৬ই জুলাই ও ৮ই জুলাই এই তিনদিন উচ্চমাধ্যমিক এর পড়ুয়াদের জন্য বাকি পরীক্ষার ব‍্যবস্থা করে ছিলেন তিনি। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশানুযায়ী সিবিএসই এবং আইসিএসি পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায় করোনার জন্য।

করোনা দিনের পর দিন বাংলার মানুষের শরীরে ক্রমশই জবরদস্ত থাবা বসাতে শুরু করেছে, তাই বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা পড়ুয়াদের জীবন সুরিক্ষিত করার জন্যই আইসিএসই ও সিবিএসই-র মতো উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া সহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পরীক্ষা বাতিল করার নির্দেশ দিলেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানান যে, করোনার মতো এই মহামারীর পরিস্থিতিতে উচ্চমাধ্যমিকের কোনো পরীক্ষার্থীকেই পরীক্ষা দিতে আসতে হবে না।

বাকি পরীক্ষা তথা ভূগোল, অ্যাকাউন্ট‍্যান্সি, অর্থনীতি, রসায়ন, পদার্থবিদ‍্যা, কম্পিউটার সায়েন্স, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এডুকেশন এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষার মূল্যায়ণ কি করে হবে তা পরে জানানো হবে বলেই তিনি জানান। আবার অন‍্যদিকে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল সেমিস্টারের বা চূড়ান্ত বর্ষের (পার্ট থ্রি) ক্ষেত্রে আগের সেমিস্টার থেকে যেটার নম্বর সব থেকে বেশি তার ৮০ শতাংশ আর ২০ শতাংশ অন্তরবর্তী মূল‍্যয়নের ভিত্তি পড়ুয়াদের ৩১শে জুলাই’র মধ্যে মূল্যায়ণ করা হবে বলেই জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি আরও জানান যে, উচ্চমাধ্যমিক সহ কলেজ-বিশ্ববিদ‍্যালয়ের পড়ুয়ারা যদি এই মূল্যায়ণে খুশি না হন, তাহলে করোনা পরিস্থিতি “স্বাভাবিক” হলেই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, সেক্ষেত্রে পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রাপ্ত ফলাফলই চূড়ান্ত হিসাবে বিবেচিত হবে! তবে উচ্চমাধ‍্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়ণ কিভাবে হবে তা নিয়ে পড়ুয়াদের মনে নানা সংশয় দানা বাঁধছে। পাঠভবন স্কুলের আর্টস বিভাগের এক ছাত্রী রিমি দে জানান যে, বাকি পরীক্ষা তথা ভূগোল ও অর্থনীতি এই দুই পরীক্ষায় খুব ভালো ভাবে তৈরি ছিল সে, তার ইচ্ছা ছিল অর্থনীতি নিয়ে অর্নাস পড়ার।

কিন্তু মূল্যায়ণে ৮০ শতাংশ যদি তার ওই বিষয়ে না থাকে তাহলে কি করে সে অর্নাস পাবে? এই নিয়ে সংশয় পোষণ করছেন রিমি দে। অনেক অভিভাবকও এই মূল্যায়ণের মাপকাঠিতে খুশি নন। তারা অনেকেই বলছেন, মূল্যায়ণে খুশি না হয়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা দেওয়ার ব‍্যাবস্থা থাকলেও, কবে সেই পরিস্থিতি ঠিক হবে, এবং ততদিন পযর্ন্ত পড়াশোনার রেশ ধরে রাখা যাবে কিনা, এই নিয়েও সংশয় আছে বলেই জানাছেন অনেকেই!

আবার, আশুতোষ কলেজের পদার্থবিদ‍্যা নিয়ে অর্নাস বিভাগের এক ছাত্রী মিতালী বোস জানান যে, কলেজ পড়ুয়াদের এই মূল‍্যায়ণ পদ্ধতিতে তিনি খুশি নন, তিনি মনে করছেন এর ফলে উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতেই পারে। তাই শিক্ষাবর্ষকে পিছিয়ে পরীক্ষা হলে, ভালো হতো বলেই জানান তিনি। আবার, শিবপুর দীনবন্ধু কলেজের সায়েন্স জেনারেল বিভাগের এক ছাত্রী সোমা ঘোষ জানান যে, লকডাউনের পর থেকে অনলাইনে সুবিধা তার বাড়িতে না থাকায় এতদিন পড়াশোনা করতেই পারেননি।

তিনি আরও বলেন যে, সঠিক মূল্যায়ণ হবে না জেনেও তিনি এই পদ্ধতিকে সানন্দে গ্ৰহণ করেছেন, কারণ তার মতো অনেকেই অনলাইন সুবিধা না থাকায় ক্লাস করতেই পারেননি। ফলত কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হলে তাদের রীতি মতো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে বলেই তিনি জানান। শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি জানান, যদি শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে অক্টোবরে পরীক্ষা হোত, পড়ুয়াও সময় পেত এবং মূল্যায়ণও সঠিক হত বলেই জানান তিনি।

তবে অনেকেরই প্রশ্ন, সঠিক মূল‍্যায়নের অভাব উচ্চমাধ্যমিক বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? তাহলে ভবিষ্যতে করোনার এই প্রভাবে বাংলার যুবসমাজ তথা পড়ুয়াদের জীবন কি অন্ধকারের সম্মুখীন হতে চলেছে? এমনই সব প্রশ্ন তুলছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply