কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যে আসতে চলেছে সুপার সাইক্লোন যশ, সর্তকবার্তা দিল নবান্ন
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, ওয়েদার রিপোর্ট ঃ গতবছর ঠিক এই সময় করোনা আবহে চলচ্ছিল কড়া লকডাউন। যার জেরে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ তথা বিশ্ব। আর মে মাসের মাঝামাঝি রাজ্যের উপকূল ও জেলায় জেলায় আছড়ে পড়ছিল করোনার দোসর বিধ্বংসী সুপার সাইক্লোন আমফান। ঠিক এক বছর পর সেই মে মাসেই আবারও সেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে চলছে লকডাউন, সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফিরে আসতে চলেছে সুপার সাইক্লোন যশ, আমফান এর সেই দগদগে স্মৃতিকে তাজা রেখে।
আবহাওয়া দফতরের সুত্র, আগামী ২৬শে মে অর্থাৎ আগামী বুধবার সকালের দিকেই বাংলায় আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। তার আগেই মঙ্গলবার থেকে উপকূলবর্তী সমস্ত জেলাগুলিতে অল্প থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হবে। এ বিষয় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে সর্তকবার্তা জারি করা হলো। ফাঁকা এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালো আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্দামানের উত্তরে এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের কাছে আগামী ২২-২৩ মে এর মধ্যে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে।
ওই নিম্নচাপটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে এক ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিতে পারে ২৪ মে-র মধ্যে। তারপর সেটি ছুটে আসবে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলের দিকে। একে করোনায় রক্ষে নেই, সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় দোসর। যদিও বঙ্গে প্রতি বছরই একটা দুটো ঝড় ঝঞ্জা লেগেই থাকে। কিন্তু গেল বছর অর্থাৎ ২০২০ থেকে সারা বিশ্ব তথা দেশ জুড়ে চলছে করোনা মহামারীর মৃত্যু মিছিল। যার ফলে দেশ ও রাজ্য জুড়ে চলছে কড়া লকডাউন। সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত মানবজাতি।
যেখানে করোনার প্রকোপে বহু মানুষ আজ মৃত্যু পথযাত্রী, কাজ হারিয়ে না খেতে পেয়ে, মাথার ছাদ হারিয়ে, ধার দেনায় ডুবে একটু একটু করে মৃত্যুর দিন গুনছে, সেখানে একের পর এক এই সুপার সাইক্লোন মানব জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল ভেঙ্গে দিচ্ছে। যদিও গেল বছর আমফানের সময় এবং বর্তমানে আগত যশের পথ আগলে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় বসে আছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সদা সর্তক করছেন বাংলার নাগরিকদের। তার পাশাপাশি সমস্ত রাজ্যের প্রশাসনকেও সজাগ থেকে এই দূর্যোগের সাথে মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
যশ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিম্নোক্ত ঃ-
১) যশের এই মুহূর্তের অবস্থান, চেন্নাই থেকে একটা কাল্পনিক সরলরেখা এবং গঙ্গাসাগর থেকে একটা কাল্পনিক সরলরেখা আঁকা গেলে সেদুটি ঠিক যেখানে মিট করবে, সেখানে দাঁড়িয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে।
২) জলের মধ্যে ইতিমধ্যেই ঘূর্ণি তরঙ্গ তৈরি করছে। অর্থাৎ তার শক্তি ক্রমশঃ বাড়ছে।
৩) ফর্মেশন বা গঠন ২২ তারিখ বিকেলে সম্পূর্ণ হবে। অর্থাৎ তখন ডপলার রাডারে তার প্রকৃত চরিত্র ও শক্তি বোঝা যাবে।
৪) নিজের গঠন সম্পূর্ণ করে ২২ তারিখ বিকেলের পর থেকে যশ স্থলভাগের দিকে এগোতে শুরু করবে। এই এগনোর কাজটা সাড়ে ৩ বা ৪ দিন ধরে হবে।
৫) অর্থাৎ যশ এর ল্যান্ডফল ২৫ তারিখ মধ্যরাত থেকে ২৬ তারিখ ভোররাতের মধ্যে হবে বলে হাওয়া অফিস সুত্রের খবর।
৬) এখন ফর্মেশন রেডি নয়। তাই অভিমুখও পরিষ্কার নয়। তবু, প্রাথমিক অনুমান যশ ভারত বাংলাদেশ বর্ডারের সুন্দরবন অঞ্চলের কোনো একটি জায়গায় ল্যান্ডফল করবে।
৭) ল্যান্ডফলের সময় তার সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৩৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটার। (আমপান ল্যান্ডফল করেছিল ১২১ কিলোমিটার)
৮) যশ এর ব্যাপ্তি ১৪০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ল্যান্ডফল থেকে টেল এন্ড পর্যন্ত সে দীর্ঘক্ষণ তাণ্ডব চালানোর মতো আকার ও শক্তি নিয়েই আসছে।
৯) ঝড়খালি, কাকদ্বীপ, ক্যানিং। গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, সন্দেশখালি, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, বকখালিতে ল্যান্ডফলের সর্বাধিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। (এখনও পর্যন্ত পাওয়া সুত্রের খবর)
১০) উপরোক্ত জায়গাগুলিতে ২৪ তারিখ দুপুরের পর থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়ে যাবে। উপকূলে উঁচু ঢেউ উঠতে শুরু করবে।
সূত্র : মৌসম ভবন।