রবিবারের বৈঠকী আড্ডা ঃ সপ্তম ভাগ

0

HnExpress একটু অন্যরকম, শুভ পরিণয়, শুভাদিত্য ঘোষ দস্তিদার ঃ গভীর রাত। জ্যোৎস্না যেন আজ সারা আকাশ জুড়ে মেখে রয়েছে। একরাশ ছোট ছোট সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে এককোণে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে একরাশ সাদা চন্দ্রমল্লিকা যেন ফুটে আছে। দোতলার বারান্দায় একা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে ইন্দ্রানী। আজ তার জীবনের পরম রাত্রি। স্বামীর সঙ্গে আজ প্রথম সাক্ষাৎ হবে তার। প্রথম ঠিক নয়, তবু প্রথম। বাসর ঘরে ভিড়ে ভিড়, ফুলশয্যার অস্বাভাবিকতা এবং একটা উন্মুক্ত উন্মাদনা। আজই প্রকৃত অর্থে প্রথম মিলনরাত্রি।

নিরালায় জ্যোৎস্নার আলো নিবিড় হয়ে আসছে যেন একান্তে। ধাপে ধাপে সুর চড়িয়ে ডেকে চলে গেল ? পাখিটা… চোখ গেল বয়ে গেল—-জ্যোৎস্নার আলোয় যেন শিহরণ লাগল। খোঁপার থেকে একটা বেল ফুল পড়ে গেল। ফুলটা হাসছে ….। স্বপ্নলোক যেন। ইন্দ্রানীর স্বপ্ন সফল হয়েছে, এমন রূপবান, গুণবান একজন মানুষ তাকেই পছন্দ করেছেন। বাংলাদেশে তার মতো মেয়ের অভাব ছিল না। কত রূপসী, কত বিদূষী, কত না জানি ধনীর ঘরের দুলালীরা এসেছিল ভিড় করে। কিন্তু তার গলার সুরের কাছে একপ্রকার পরাভব মানতে হয়েছিল তাদের সবাইকেই।

যেকোনো রকম বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন।

আর এটা ভাবা মাত্রই একটা সূক্ষ্ম গর্ব নেশার মতো সঞ্চারিত হতে লাগলো তার মনে। আর হবে না-ই বা কেন? অতীতে বিভোর ইন্দ্রানীর মনে পড়তে লাগলো, কি কৃচ্ছসাধনই না সে করেছে। দিবা রাত্রি গলা সাধা। তানপুরার সঙ্গে বড় বড় রাগ- রাগিণীর আলাপ। কখনো আবার সেতার, এস্রাজ, বীণ্। জীবনে সে আর তো কিছুই তেমন করেনি। গত সতেরো বছর সুরের সাধনাই কেবল করে গেছে একাগ্ৰ চিত্তে। অবশেষে সুরের ঝরণা তলায় দেখা হল তার স্বামীর সঙ্গে। স্বামী অনিন্দ্য’র সুন্দর মুখখানি ওর মানসপটে ধীরে ধীরে ফুটে উঠত লাগলো।

আজ রাতে সে ঠিক করেই রেখেছে বাগেশ্রী আলাপ করে শোনাবে তার মনের মানুষটিকে। সেতার টা তাই আগে থেকেই এনে রেখেছে পাশের ঘরে। হটাৎ ঝন্ ঝন্ করে কি যেন শব্দ হল একটা। সেতারের তারটা কি তবে ছিঁড়ে গেল? ঘাড় ফিরিয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল ইন্দ্রানী। পাশের ঘরের দরজায় একজন তন্বী রূপসী মত যেন কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। অপরূপ রূপসী। সে মুচকি হেসে বলল…” আমি চলে যাচ্ছি”। “কে আপনি? তোমার গানের সুর। এতদিন আমাকে নিয়েই তুমি তন্ময় হয়ে ছিলে, তাই আমি তোমার কাছেই ছিলাম।

এখন তুমি আর একজনের গলায় মালা দিয়ে তারই স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছো দিবারাত্রি। আজ আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই আমি চললাম।” ইন্দ্রানীকে কিছু বলবার অবকাশ না দিয়ে সে বেরিয়ে গেল। হটাৎ মিলিয়ে গেল যেন। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ইন্দ্রানী। অনেকক্ষণ সে একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। উন্মুক্ত আকাশের দিকে সে চোখ তুলে চাইল। হংসমিথুন শ্বেতশুভ্র বসনা একটি পরী উড়ে চলেছে যেন কোনও এক অজানার উদ্দেশ্যে। ওড়নাটা তার পতপত করে উড়ছে আকাশ জুড়ে…..। হঠাৎই সে চমকে উঠল। পিছনের দিক থেকে কে যেন তার চোখ দুটো টিপে ধরেছে। কে! নিঃশব্দচরণে তার স্বামী কখন এসে প্রবেশ করেছেন সে যে টের পায় নি।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply