রবিবারের বৈঠকী আড্ডা ঃ অষ্টম ভাগ

0

HnExpress একটু অন্যরকম, বিধিলিপি, শুভাদিত্য ঘোষ দস্তিদার নমস্কার। হ্যাঁ নমস্কার। বলছিলাম আপনি এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন বুঝি? আসলে দেখুন না আমার একটা লেখা আপনাদের কাগজে দেব বলে সেই কবে থেকে ঘুরছি। কিন্তু, কী আশ্চর্য যাকেই জিগ্যেস করছি সবাই বলছেন উনি এখন কলকাতার বাইরে। আপনি কিছুদিন পর আসুন। এই করে আজ প্রায় এক মাস হয়ে গেল। ভাগ্যিস আজ আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল। এতটা বলে, এতক্ষণ পর সে চুপ করল। আমি ঠায় ওনার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।

আপনার লেখার কপিটা এনেছেন? সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে একটি খাম বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি খামটি হাতে নিয়ে রেখে দিলাম। আচ্ছা আমি বলছিলাম আবার কবে নাগাদ আমি আসতে পারি। আমি বললাম, লেখাটা মনোনীত হলে আপনার ঠিকানায় অথবা ফোন নম্বরে জানিয়ে দেওয়া হবে। যদি কিছু মনে না করেন আপনার ফোন নম্বর টা পেতে পারি? ড্রয়ার থেকে একটি কার্ড বার করে দেয় অরিত্র বর্মন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনিও আমার ধন্যবাদ নেবেন।

এর তিন মাস পর। একদিন অফিসে একটি ফোন আসে। একজন মহিলা ফোন করে বলেন আমি অরিত্র বর্মনের সঙ্গে কথা বলতে পারি? অফিস থেকে বলা হয় উনি তো সরাসরি কারোর সাথে কথা বলেন না, আপনার কিছু বলবার থাকলে আমাকে বলতে পারেন। অপর প্রান্ত থেকে মহিলা বলেন কথাটা ওনার সাথেই বলবার ছিল। ম্যাডাম ওনার পার্সোনাল নম্বর আপনার জানা থাকলে আপনি সরাসরি কথা বলতে পারেন। কারণ ওনার ফোন নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের রেস্ট্রিকশন আছে। ফোনের লাইনটা কেটে যায়।

হ্যালো আমি মিঃ অরিত্র বর্মনের সঙ্গে কথা বলছি? হ্যাঁ বলছি। নমস্কার আমি পর্ণো মৈত্র কথা বলছি। কে পর্ণো? সে কি! আপনার সঙ্গে আপনার অফিসে বসে একটা লেখা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখা করে এসেছিলাম। আপনি আমাকে আপনার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন। ওহ হ্যাঁ বলুন? আসলে আপনার লেখাটা আমার কাছে এখনও আসেনি। আপনি বরং আরেকটি নতুন করে লেখা পাঠান। তিনি একটু হতাশ ভাবেই বললেন, মানে আমার আগের লেখাটা কী ভ্যানিশ হয়ে গেল! আমি বললাম, না না ঠিক তা নয়। আচ্ছা আমি দেখছি।

যেকোনো রকমের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন।

অরিত্র বরাবরই কথা কম বলতে পছন্দ করে। বাড়িতেও প্রয়োজন ছাড়া কারও সাথেই তেমন একটা কথা বলে না। যেটুকু কথা বলে শুধু মায়ের সাথেই। এমন একটি ছেলেকে পর্ণো মৈত্রর খুব মনে ধরেছে। লেখা দেওয়াটা আসলে একটা অজুহাত মাত্র। আসলে অরিত্রর মা’র এই মেয়েটিকে খুব পছন্দ। একটি অনুষ্ঠানে ওকে দেখে খুব ভালো লেগে যায়। সেই সূত্রে যোগাযোগও করেন ওদের বাড়িতে গিয়ে। অথচ এর বিন্দু বিসর্গ অরিত্র জানেই না। আজ রোববার। অরি ঘরে আছোস। হ্যাঁ মা। কিছু বলবে? শোন্ আমি আর একা এভাবে সবকিছু সামলাইতে পারতাছি না। হয় বিয়া কর নয় আমারে ছুটি দিয়া দে।

শোন, তর বাবা একটা মাইয়া দ্যাখছে তর জন্য। আমারো মাইটারে খুব ভালো লাগছে। এইবার তুই দেইখা মত দিলেই সব কথা পাইড়া ফেলুম। তর কারো লগে প্রেমটেম আছে নাকি? থাকলে বাপু আগে থিকিয়া কইয়া দিবি। আমাগো মানসম্মান আছে তো নাকি? কারোরে ভালো লাগলে আমারে কইতে পারোস। অরিত্র, না-মা।
মুখে না বললেও মনে মনে অরিত্রর কিন্তু পর্ণো কে বেশ ভালোই লেগেছে। এমন সুন্দর একটা প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েকে কেউ খুব কাছ থেকে দেখলে ভালো না বেসে থাকতে পারা যায় না। সমস্যা হোলো কী করেই বা বলবে। ইচ্ছে থাকলেও পর্ণো কে বলতে রীতিমতো ভয়ই পাচ্ছে অরিত্র। যদি ও অন্যভাবে রিএক্ট করে। আবার বাড়িতেও একটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির উপর কোনো দাগ লাগুক সেটাও মানতে পারছে না।

গতকালই বাবা ছুটি নিয়ে দিল্লি থেকে এসেছেন। আজ বাবা রাতে শুতে যাবার আগে মাকে বলতে শুনলাম কই গেলা, বলছি আমি শুধু কিন্তু তোমার কথায় চারদিনের ছুটি নিয়া আইছি। কাল গিয়া আমি সব ফাইনাল কৈরা আসুম। কাল তো খোকার ছুটি। সকাল ১০টায় খোকন গাড়ি নিয়া আসবো। ওরে তৈরি থাকতে বইলো। মেয়ে গো বাড়ি থিকা ফিরবার পথে কার্ড, গায়ে হলুদের শাড়ি, বেনারসী সব ঠিক কৈরা ফেলুম। এদিকে সারারাত অরিত্র ঘুমোতে পারলো না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবলো ইস্ একটা বার যদি মুখ ফুটে বলতে পারতাম পর্ণো আমি তোমাকে ভালোবাসি। মা মাগো একটি বার আমাকে বলবার একটা শেষ সুযোগ যদি দাও মা। বাবার এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কী ঠিক হলো?

পরদিন খুব সকালে অরিত্র সাহস করে পর্ণো কে ফোন করে ওরই করা মোবাইল নম্বরে। ফোনটা বেজে যায় তিনবার। ফোনটা তুললো না দেখে আরও হতাশ হয়ে পড়ল অরিত্র।
ছেলেবেলায় মাষ্টারমশাইয়ের কাছে শোনা একটা কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো অরিত্রর। “Time and Tide wait for none” বুঝলে অরিত্র সময় কাহারও জন্য অপেক্ষা করে না। সে খুবই নিষ্ঠুর। এমন সময়ে বাবার ডাক শুনতে পেল অরিত্র। গাড়ি আইসা গ্যাছে। মা ডাকছে অরি, গাড়ি আইয়া পরছে নীচে। চইলা আয়। অরিত্রর শরীরটাই যাচ্ছে মন আর চলছে না যে। বাবা, মা অরিত্র কে নিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করল। এমন সময়ে মোবাইল অন করতেই দেখতে পেল একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে পর্ণো মৈত্র। তাড়াতাড়ি অন করতেই দেখতে পেল লেখা আছে, হ্যাঁ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দেবেন আপনার ফোনটা ধরতে না পারার জন্য। আসলে আজ আমাকে ছেলের বাড়ি থেকে সবাই দেখতে আসবে। ভালো থাকবেন। পর্ণো মৈত্র….

মোবাইল এর আলোটা নিভে গেল। হাতে মোবাইলটা ধরা অবস্থায় অরিত্র বসে আছে চুপ করে। এমন সময়ে অখিলেশ বর্মন ড্রাইভার খোকনকে নির্দেশ দিলেন হ্যাঁ হ্যাঁ খোকন এইখানে দাঁড় করাও। গাড়ি থেকে একে একে সবাই নেমে মেয়ের বাড়িতে প্রবেশ করলেন। দোতলার সুসজ্জিত ঘরে বসবার আয়োজন চোখে পড়বার মতো। কথা একটু একটু করে এগোতে লাগলো। চা, মিষ্টির প্লেটগুলো টেবিলের অনেকখানি অংশ দখল করে নিয়েছে। এবার অখিলেশ বর্মন বলে উঠলেন কই এবার যারে দেখবার লগে আইলাম তাকে ডাইকা পাঠান। অরিত্র চোখ বন্ধ করল, পর্ণোর মুখটাই মনে করবার চেষ্টা করছে। এমন সময়ে মেয়ের মাইমা বলে উঠলেন এই যে দেখুন, আমাদের মেয়ে এসে গেছে। অরিত্র যখন চোখ খুললো দেখলো তার অফিসে যাওয়া সেই পর্ণো মৈত্র’ই তার সামনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply