December 10, 2024

মণীষীদের স্মৃতি চেনাতে কাশীনাথের এ যেন নীরব সাধনা

0
Img 20190817 Wa0001.jpg
Advertisements

HnExpress অশোক সেনগুপ্ত, কলকাতা ঃ এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। মান্যগণ্যদের সঙ্গে কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ে তাঁর শ্রদ্ধা অর্পন করলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের। এ যেন কাশীনাথের এক নীরব সাধনা। এসেছিলেন সাংসদ মানা রায়, বিপ্লবীচর্চার গবেষক শিবশঙ্কর ঘোষের মত কিছু নামী ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতা দিবসের সকালটা একটা অন্য রূপ নিয়েছিল কালীঘাট রোডে। বাড়ির কাছে রাসবিহারি অ্যাভিনিউ ও ধর্মদাস রো-র সংযোগস্থলে ওনার মন্দির। ওটাই ওঁর ধ্যানজ্ঞান। না কোনও বিগ্রহ নেই ওতে। খোলা ফুটপাথের ধারে ৫৬ জন মণীষীকে প্রতিটি জন্মদিনে তাঁদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্মরণ করেন।

কেবল ১৫ আগস্ট নয়, বছরভর চলে খেয়ালী কাশীনাথবাবুর এই তর্পন। নিষ্ঠাভরে নবীন প্রজন্মকে তিনি চিনিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের মহাপুরুষদের। বড়দের মনে করিয়ে দিচ্ছেন মণীষীদের কথা। এ যেন ওঁর একটা পবিত্র কর্তব্য। ৯ বছর ধরে চলছে ওঁর এই অদ্ভুত খেয়াল। ৫৩ বছরের কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের খোঁজ পেলাম স্বাধীনতা সংগ্রামের দামাল বিপ্লবী শান্তি চৌধুরীর কন্যা অধ্যাপক ভারতী সেনের কাছে। কাশীবাবু একটি বেসরকারী সংস্থার গাড়ির চালক।

৪ ফুট দীর্ঘ, ২ ফুট চওড়া ফ্লেক্সে মণীষীদের ছবি করিয়েছেন কাশীবাবু। মঙ্গল পান্ডে, মহম্মদ ইকবাল, ভগৎ সিংহ, চন্দ্রশেখর আজাদ— এ রকম গুটিকয় বিখ্যাত ছাড়া সবাই বাঙালি। সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই ছবির সঙ্গে লাগান তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। শ্রদ্ধার্ঘ হিসাবে ফুল-ধূপকাঠি। ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি আর ১৫ আগস্ট পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা দিবসের দিন তো ফুটপাথের ধারে বাঁশের গায়ে নেতাজী, বাঘাযতীন, মাষ্টারদা, শহিদ ক্ষুদিরাম, মাতঙ্গিনী হাজরা, বিনয়-বাদল-দীনেশ, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত— এ রকম প্রায় ৩০ জন বিপ্লবীকে, মানে ফ্লেক্সে ওঁদের ছবি উপস্থাপিত করলেন। সবই তাঁর নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে।

কিন্তু এ রকম একটা ভাবনার পোকা মাথায় এলো কীভাবে? কাশীবাবু বললেন, “৯ বছর আগের কথা। মেয়ে ক্লাশ থ্রি-তে পড়ে। ওকে নিয়ে রাতে টিভি-তে একটা কুইজের অনুষ্ঠান দেখছিলাম। নামী একটা স্কুলের তিনটে গ্রুপ। ফাইভ-সিক্সের জন্য গ্রুপ ওয়ান। সেভেন-এইট গ্রুপ টু। নাইন-টেন গ্রুপ থ্রি। অনুষ্ঠানের প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন ‘বন্দেমাতরম’ কার লেখা?

প্রথম দুটো গ্রুপ পারল না। এর পর প্রশ্ন গেল তৃতীয় গ্রুপের, মানে নাইন-টেনের কাছে। ওরা কী উত্তর দিল জানেন? এআর রহমান। আমার মাথায় কে যেন হাতুড়ির বাড়ি মারল! নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, এই অজ্ঞানতার জন্য কারা দায়ী, ওরা না আমরা? পরবর্তী প্রজন্মকে এগুলো জানানোর কি কোনও দায় নেই আমাদের? আর সেই বোধই জন্ম দিল আমার এই খেয়ালের।

কোনও সাহায্য বা বিরোধিতা পেয়েছেন? “না, কেউ বাধা দেননি। পাড়ার এক শুভানুধ্যায়ী সাহিত্য সংসদের ‘বাঙালি চরিতাভিধান’ দিয়েছেন। ওখান থেকে কারও কারও জীবনীর কথা চার্ট পেপারে লিখে ছবির পাশে সেঁটে দিই।“ বউ কী বলেন? হো হো করে হেসে উঠলেন কাশীবাবু। বলেন, “ও বাদ দিন! তবে মেয়ে কিন্তু পাশে থাকে। সকালে কলের জল তুলতে হয়। কোনও দিন হয়ত বললাম, আজ আর সময় হল না। মেয়ে বলে, না বাবা, আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।” একটি মাত্র মেয়ে মল্লিকা, ভর্তি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার একটা কলেজে।

Advertisements

Leave a Reply