January 23, 2025

লাল সোনা’ পাচার করেই পুষ্পার এতো রমরমা, কেন এতো দাম এই রক্তচন্দন কাঠের?

0
Advertisements

HnExpress রাজ ঘোষাল, কলকাতা : ‘লাল সোনা’ পাচার করেই পুষ্পার এতো রমরমা। কেন এতো দাম এই রক্তচন্দন কাঠের (Blood Sandal Wood)? আর চীনেই বা এই রক্তচন্দন কাঠের চাহিদা সবচেয়ে বেশী কেন হয়?

তামিলনাড়ু সংলগ্ন অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) চার জেলা —নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ পাওয়া যায়। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভালো হয়। এক একটি গাছের উচ্চতা প্রায় ৮-১২ মিটার।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৫ই ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে অল্লু অর্জুনের বহুপ্রতীক্ষিত ছবি ‘পুষ্পা ২ : দ্য রুল (Pushpa 2 : The Rule)।’ ২০২১ সালের সুপারহিট ছবি ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ় (Pushpa : The Rise)’ ছবির দ্বিতীয়ভাগ। এই সিনেমাটিতে মূল চরিত্র একজনই, পুষ্পারাজ। প্রথম ছবিটির মতো তাকে ঘিরেই গল্প আবর্তিত হয়েছে এবারেও। সেই চরিত্রকে অল্লু (Allu Arjun) পর্দায় সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

তবে পুষ্পারাজ ছাড়াও এই ছবির আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো লালচন্দন কাঠ (Blood Sandalwood), যেমন ছিল ছবির প্রথমপর্বেও। রক্তচন্দন কাঠের চোরাপাচার নিয়ে এই ছবির কাহিনী। কেন্দ্রীয় চরিত্র পুষ্পা কীভাবে এই রক্তচন্দন কাঠ চোরা পাচার করে এক বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, ছবিটির ছত্রে ছত্রে সেই দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক (Director)।

এটা তো গেল সিনেমার গল্প। কিন্তু ঐ সিনেমাটির মত বাস্তবেও লাল চন্দন অথবা রক্তচন্দনের গাছ বহুমূল্য একটি জিনিস। কিন্তু রক্তচন্দনের কেনই বা এতো দাম? সেই কাঠটিরই এতো চাহিদা কেন? কেনই বা কালোবাজারি (Black Market) চলে লাল চন্দনকাঠ নিয়ে?

রক্তচন্দনকে এই দেশে ‘লাল সোনা (Red Gold)’ বলা হয়। সোনার মতোই বহু মূল্যবান এই গাছ। আর এই গাছটি হল খুবই বিরল প্রজাতির। ‘পুষ্পা’ চিত্রে যে জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে, রক্তচন্দন শেষাচলম পাহাড়ের ওই ঘন জঙ্গলেই পাওয়া যায়। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভালো হয়। এক একটি গাছের উচ্চতা প্রায় ৮-১২ মিটার।

লালচন্দন হল এক ‘এনডেমিক স্পিসিস (Endemic Species)।’ ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বলতে বোঝায় এমন একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রজাতি যেটি একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রাকৃতিকগত ভাবেই এই ‘এনডেমিক স্পিসিস’ পাওয়া যায় না বিশ্বের অন্য কোথাও। আর সেই জন‍্য আন্তর্জাতিক বাজারেও (International Market) রক্তচন্দনের চাহিদা কল্পনাতীত।

দুই ধরনের চন্দনকাঠই পাওয়া যায়। সাদা এবং লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল কিম্বা রক্তচন্দনে কোনও গন্ধই নেই। কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই সারা বিশ্ব জুড়ে এর বিপুল চাহিদা। আর সেই চাহিদার জন‍্যই এই কাঠ পাচার হয়। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সঙ্ঘ (IUCN) এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণীর তালিকাভুক্ত করেছে।

এই কাঠ এতো বিপুল পরিমাণে কাটা ও পাচার হয়েছে যে, সমগ্র বিশ্বে অবশিষ্ট রয়েছে আর মাত্র তার পাঁচ শতাংশ (5 Percent) গাছ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবেই এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। বদহজম, ডায়েরিয়া সহ বেশ কয়েকটি দৈনন্দিন রোগের চিকিৎসাতে এই কাঠ কাজে লাগে।

রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণও রয়েছে এই রক্তচন্দন কাঠের। ঔষধি গুণ ছাড়া অন্যান্য শিল্পেও এই রক্তচন্দন কাঠের বিপুল চাহিদা। এসব ছাড়া পূজা-আর্চা অথবা প্রসাধনী দ্রব্য তৈরীতেও এই কাঠ ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য, রক্তচন্দন (Blood Sandalwood) থেকে যে নির্যাস পাওয়া যায়, তাও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। রক্তচন্দনে বেশ কিছু ‘আর্থ মেটাল (Earth Metal)’ পাওয়া যায়।

রক্তচন্দনের কাঠ সহজে পোড়ানোও যায় না। পূর্বঘাট এলাকাটি শুষ্ক হওয়ায় সেখানকার জঙ্গলে আগুন ধরে যাওয়া অথবা দাবানলের (forest fire) ঘটনা ঘটবার আশঙ্কা প্রবল। রক্তচন্দন প্রাকৃতিক ভাবেই আগুন রোধ করতে সক্ষম। বিশ্বের আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজার টাকার বেশি দামে এই কাঠ বিক্রয় করা হয়।

ভারতে এই গাছ কাটা কঠোর ভাবে আইনত নিষিদ্ধ। তবে এমন কাঠও চোরা পাচার (Smuggling) হয় আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়েই। পাচার রোখবার জন্য ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ও (Red  Sandlers Anti Smuggling Task Force) গঠন করা হয়েছে।

চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বা অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চীনেই (China)। তাই পাচারও বেশী হয় ঐ দেশেই। আসবাবপত্র, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে সেই দেশে এই কাঠের চাহিদা খুবই বেশী।

উল্লেখ্য, অন্ধ্রপ্রদেশে (Andhra Pradesh) প্রাকৃতিক ভাবে রক্তচন্দনের দেখা পাওয়া গেলেও এখন বাণিজ্যিক চাহিদা আর রক্তচন্দন বৃক্ষের অস্তিত্বের সঙ্কটের কথা ভেবে অন্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে।

Advertisements

Leave a Reply