উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যপূর্ণ বোল্লা রক্ষাকালীর পুজো শুরু আজ থেকে
HnExpress জয়দীপ মৈত্র, দক্ষিন দিনাজপুর ঃ কথায় আছে, “বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।” আর সেই তেরো পার্বণের পালা এখনও অব্যাহত। দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক পুজোর পরে প্রসিদ্ধ ও সুপ্রাচীন উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ঐতিহ্যপূর্ণ বোল্লা রক্ষাকালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ পুজো। শুক্রবার সাড়ম্বরে পূজিত হবেন সেই “বোল্লা” কালী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর শহর বালুরঘাট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে বোল্লা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্য সমৃদ্ধ এই রক্ষাকালীর মন্দির। যা বোল্লা কালী মাতা বলেই সুপ্রসিদ্ধ।
প্রতি বছর রাসপূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয় ও সোমবারে মায়ের বিসর্জন হয়। এই কয়েকদিন যাবৎ মায়ের পুজোকে ঘিরে বিশাল মেলা হয়। এছাড়াও সারা বছর নিয়মের সাথে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও মঙ্গলবারে মায়ের পুজো হয়। এই মেলা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যপূর্ণ। দুই দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ও রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ এই মেলা দেখতে আসেন।
উল্লেখ্য, গত দু’বছর ধরে চলতে থাকা এই করোনা আবহের জেরে এবছর বোল্লা কালী পুজো হলেও করোনা বিধির কথা মাথায় রেখে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনের তরফে জারি নির্দেশিকার পর গত বছরও হয়নি মেলা। এবারও হবে না মেলা, সাথে মানতের পাঁঠা বলিও হচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। তবে করোনা প্রটোকলকে প্রাধান্য দিয়ে বোল্লা কালী পুজো সাড়ম্বরে হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
কথিত আছে, জনৈক এক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মায়ের শিলাময় রূপটি উদ্ধার করেন ও প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পূজা শুরু করেন। এই সময়ে মাকে ‘মরকা কালী’ বলে অভিহিত করা হত। প্রতি জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যায় হত মায়ের বিশেষ পূজা। এরপর ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার মুরারিমোহন চৌধুরী ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ঘটনাক্রমে বহু গ্রামবাসী সহ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি মড়কা কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি বেকসুর খালাস পান।
জ্যৈষ্ঠ মাস আসতে দেরি থাকায়; সেই সময় তিনি ধার্য করেন যে, রাস পূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের পুজো করবেন। সেই থেকে দেবীর বাৎসরিক পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সালটা ১৯২০। মা তখন থেকে রক্ষাকালী নামে পরিচিত হন। তখন ছোট করে পূজা হলেও কালে কালে পূজার বহর ও কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সাড়ে সাত হাত মাতৃমূর্তি পূজিত হন। কয়েক হাজার পাঁঠাবলি ও একটি মহিষ বলি হয়। প্রায় ১৪ কেজি সোনার গহনায় মায়ের প্রতিমা সজ্জিত হয়। বহু ভক্ত মানত করা ছোট ছোট কালী মূর্তিতে পূজা দেন ও বাতাসা নৈবেদ্য অর্পণ করেন।
স্থানীয় মুসলিমরাও হিন্দুদের সাথে মায়ের উদ্দ্যেশ্যে পুজো দেন। বল্লভ মুখোপাধ্যায় বলে কোনো এক জমিদারের নাম থেকে অঞ্চলটির নাম হয় বোল্লা। বোল্লা গ্রামে অবস্থিত রক্ষাকালী মাতা ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ নামে ভক্ত মহলে সুপ্রসিদ্ধ। আর সে থেকেই বোল্লা কালী মাতার পুজো হয়ে আসছে ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহ। আজ শুক্রবার এই জাগ্রত বোল্লা পুজো শুরু হবে। যাকে ঘীরে এলাকা সহ জেলাবাসীদের মধ্যে খুশির আবহের সৃষ্টি হয়েছে। এই বোল্লা কালী পুজোর প্রধান প্রসাদ কদমা ও বাতাসা।
বাতাসার মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর আকারের অবয়বে প্রসাদ প্রস্তুত করা হয়। পাশাপাশি মানতের বিভিন্ন আকারের ছোট-বড় বোল্লা কালীর পুজো দেওয়া হয়। বোল্লা কালীর হাতে থাকে আড়াই টনের সোনার রামদা এবং মন্দিরের সমস্ত অলংকার। পুজো প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকের কয়েকশো পুলিশ প্রহরায় থাকছে, পাশাপাশি মন্দির চত্বর থাকবে সিসিটিভির আওতায়।
হাতে মাত্র আর কয়েক ঘন্টা তার আগে প্রতিবছরের ন্যায় বোল্লা এলাকায় মায়ের পুজোকে ঘীরে যে সম্প্রতির মেলবন্ধন ঘটে তারই অপেক্ষায় অপেক্ষারত এলাকাবাসী সহ জেলার মানুষরা। বোল্লা এলাকায় সকল শ্রেনীর মানুষদের পুজো নিয়ে ব্যাস্ততা এখন তুঙ্গে।