শুধু মাত্র নষ্টালজিয়ার টানে আপামর বাঙালী রেডিও নিয়ে মাতবেন মহালয়ার ভোরে

0

HnExpress পল মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর ঃ ধুলো পড়ে থাকা রেডিওটি ঝাড়তে ঝাড়তে মহালয়া নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রবীন সাংবাদিক দিলীপ কুমার তালুকদার, তার হাতে লেখা অনেক প্রতিবেদন প্রানবন্ত হয়ে ওঠেছে। মহালয়ার প্রাক্কালে তিনি বললেন, টেকনোলজির প্রাচুর্যে যে রেডিয়ো সেটটির কথা মনে থাকে না আজ আপামর আম বাঙালির, সেই রেডিওই সময় সরণী বেয়ে মহালয়ার আগে ফিরে আসে হারানো স্মৃতি নিয়ে৷

যে স্মৃতিতেই লুকিয়ে হয়তো আপন সত্তা৷ ঘুম চোখে রাত চারটেয় বালিশের পাশে রাখা রেডিয়ো অন করলেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে, আশ্বিনের শারদপ্রাতে …৷ হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ বাঙালির চিরন্তন এক আগমনী৷ ইউটিউব, এমপি থ্রি ফাইল, সিডি —যাতেই সেই প্রোগ্রামের রেকর্ডিং থাকুক না কেন, মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীর বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান শোনার মধ্যে হয়তো লুকিয়ে বাঙালির স্মৃতি -সত্তা৷

না হলে কেন, দক্ষিন দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত বালুরঘাট গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর সহ প্রত্যন্তগ্রাম, সর্বত্রই মহালয়ার ঠিক আগে আগে রেডিয়ো সেট সারানোর এত ব্যাকুলতা কেন? সাবেক রেডিয়োর জায়গায় এসেছে ডিজিটাল এফএম৷ যদিও সুত্রের খবর দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নানান ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে দোকানে রেডিয়োরও খোঁজ করছেন অনেকে৷ যা বলছে , বাঙালির নস্টালজিয়ার প্রতি টান বদলায়নি৷

বছর পঁচাত্তরের গোপাল ভট্টাচার্য্য কিংবা বছর তিরিশের নিতাই পাল দুজনেই ধুলো ঝেড়ে দু’টি ভাঙাচোরা রেডিও নিয়ে হাজির হয়েছেন একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে৷ তাঁদের বক্তব্য , ‘যতই রঙিন টিভিতে অনুষ্ঠান হোক, রেডিওতে ওই অনুষ্ঠান না শুনলে মনে হয়, ঠিক ভাবে পুজো শুরু হল না৷’ জেলার এক দোকান ‘রিন্টু ওয়াচ সার্ভিস ’-এর মালিক পিন্টু মন্ডল সেদিন বললেন, ‘আগে রেডিও, টেপ সারাই করেই সংসার চালাতাম৷

অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আমাদের এবছরের পুজো পরিক্রমা ২০১৯, যারা যারা আমাদের সাথে সহযোগী পার্টনার ও মিডিয়া পার্টনার হিসেবে যুক্ত হতে ইচ্ছুক তারা অতিসত্বর যোগাযোগ করুন ঃ ৬২৮৯২৩৫০৭৬।

এখন ওসবের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘড়ি , টিভি সারাই করি৷ তবে মহালয়ার আগে ফি বছর এই দোকানেই রেডিও প্রেমীরা ভিড় করেন রেডিও সারানোর জন্য৷ ’ আরেক রেডিও মেকার দেবব্রত বিশ্বাসের কথায়, ‘গতকালই একজনকে রেডিয়ো সারিয়ে দিলাম৷ নতুন প্রজন্ম অবশ্য মোবাইলের চিপ -এ গান শোনে৷ আগের মতো না হলেও এখনও মাঝে মধ্যে রেডিয়ো সারাই করার জন্য অনেকে আসেন৷ ’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্তগ্রাম রামপাড়া চেঁচড়া ৷

দুর্জয়চন্দ্র কর্মকার রেডিয়ো বিক্রি ও মেরামতির কাজ করছেন প্রায় ৩০ -৪০ বছর ধরে৷ তাঁর কথায়, ‘এ বছর এখনও পর্যন্ত ১০টা রেডিয়ো বিক্রি করেছি৷ মহালয়ার আগে ৮টি রেডিয়ো সারিয়েছি৷’ ছবিটা একটু অন্যরকম বুনিয়াদপুর হাটখোলায়, রেডিয়ো ব্যবসায়ী বাপ্পা রায় বললেন, ‘রেডিয়ো সারাতে আগে যত মানুষ আসতেন, এখন তার বিশ শতাংশও আসেন না৷ তবে মহালয়ার আগে রেডিও সারানোর কাজ বাড়ে৷ গত বছর এ সময় পাঁচটি রেডিয়ো সারিয়েছি৷

এ বছর এখনও পর্যন্ত তিনটে৷’ আরেক এক বিক্রেতা শিবনাথ ঘোষের বক্তব্য, ‘এখন চিনা রেডিয়োও বেশি বিকোচ্ছে৷ অনেকেই এফএম রেডিও কেনেন মহালয়ার আগে৷‘ এই সময় ৩০০ -৪০০ নতুন রেডিয়ো বিক্রি হত৷ এখন ডিজিটাল রেডিয়ো কেনা ও সারাইয়ের কাজটা বেশি৷ মোবাইলেও তো এখন এফ এম থাকে৷ অনেকেই স্রেফ নস্টালজিয়ার টানেই রেডিয়ো আঁকড়ে৷ ওঁদের কাছে দশপ্রহরণধারিণী আবির্ভূতা হবেন আকাশবাণীতেই৷

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply