ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় দের কোটি টাকার সোনার বিস্কুট সহ ধৃত ১ পাচারকারী

0

HnExpress ১৮ই ডিসেম্বর, অরূপ অধিকারী, উত্তর ২৪ পরগণা ঃ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সোনা পাচারের করিডর হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি লাগোয়া ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত। বিগত এক বছরে এক ডজনেরও বেশি বার ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার একটার পর একটা সোনার বিস্কুট সহ পাঁচজন সোনা পাচারকারী। সোনা পাচার কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বেশ বড় ধরনের পাচারচক্র, যা ধৃত পাচারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।

বস্তুতঃ উত্তরবঙ্গের সীমান্তে নজরদারি জোরদার হওয়ার ফলে সোনা পাচারকারীরা এবার তাদের স্ট্রাটেজি পরিবর্তন করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে সোনা পাচারের পথ ধরেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গোয়েন্দাদের অনুমান। আর এই অনুমানের ফলেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সীমা সুরক্ষা বল থেকে ২৩টি সোনার বিস্কুট সহ ১জন চোরাকারবারীকে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএফ জওয়ানরা। জানা গেছে, ধৃতের নাম সুখদেব বিশ্বাস।

সুত্র মারফত জানা গিয়েছে এদিন বৃহস্পতিবার, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কর্মীরা ২৬৮২.৮৫০ গ্রাম সোনার বিস্কুট বাজেয়াপ্ত করে, যার বাজার মূল্য এক কোটি সাঁইত্রিশ লক্ষ ঊননব্বই হাজার আটশত ঊনচল্লিশ টাকা। বাজেয়াপ্ত সোনার বিস্কুটগুলি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সীমান্ত ফাঁড়ির গুনারমঠ অঞ্চল থেকে পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হচ্ছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গোয়েন্দা আধিকারিকদের দাবি।

আরও জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গুনারমঠের ১৫৮ ব্যাটেলিয়নের বর্ডার চৌকির জওয়ানেরা এদিন সোনা চোরা চালানের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত এর কাছে একটি তল্লাশি অভিযান চালায়। প্রায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জওয়ানরা একটি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে সাইকেলে চড়ে ফেন্সিং গেট দিয়ে গুনারমঠ রাস্তার দিকে আসতে দেখে।

তাকে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর কথা বললে, সে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কর্মীরা তাকে তাড়া করে ধরে ফেলে এবং হেফাজতে নিয়ে যায়। আটককৃত ব্যক্তির তল্লাশির সময় তার কাপড়ের ভিতরে এবং সাইকেলের ফ্রেম থেকে ২৩টি সোনার বিস্কুট পাওয়া যায়। হেফাজতে নেওয়া চোরাকারবারীর নাম সুখদেব বিশ্বাস, পিতা গুরঙ্গ বিশ্বাস, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁর বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

আটককৃত চোরাকারবারী সুখদেব বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় যে, গুনারামথে বসবাসকারী এক ভারতীয় নাগরিক সে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গৌতম মন্ডলের (সোনার মালিক) নির্দেশে বাহক হিসাবে সোনা পাচার করে আসছিলেন তিনি। যার জন্য তিনি প্রতি বিস্কুট ৩০০/- টাকা পায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তিনি বাংলাদেশে বাসরত মহিনউদ্দিন (গ্রাম-পুটখালী, থানা-সরসা, জেলা- যশোর) এর কাছ থেকে এই সোনার বিস্কুটগুলি নিয়ে তাঁর জামাকাপড়ের ভিতরে লুকিয়ে রেখে সীমান্তের বেড়ার গেট পেরিয়ে বেরিয়ে আসেন।

২৩টি সোনার বিস্কুট সহ আটক সাইকেল

এই সমস্ত সোনার বিস্কুট বনগাঁ হাসপাতালের কাছে রমেশ নামে এক ব্যক্তিকে দেওয়ার কথা ছিল বলে বিশ্বস্ত সুত্রের খবর। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা গুনারমঠ রাস্তার কাছেই তল্লাশি করার সময় তাঁকে ২৩টি সোনার বিস্কুট সহ গ্রেপ্তার করে। কমান্ডিং অফিসার সুরেন্দ্র সিংহ, ১৫৮ ব্যাটেলিয়ন বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এর জওয়ানদের কৃতিত্বের জন্য খুশি প্রকাশ করেছেন। কারণ এই অপারেশনের ফলে ২৩টি সোনার বিস্কুট সহ এক চোরাচালককে আটক করা হয়েছে এবং এই পাচারকে ব্যর্থ করা গেছে।

এদিন তিনি বলেন যে, কেবলমাত্র দায়িত্বে থাকা বিএসএফ জওয়ানদের সতর্কতার ফলেই এটি সম্ভবপর হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, তাঁর জওয়ানরা সীমান্তে অপরাধ রোধের সমাধানটি বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর, সীমান্ত দক্ষিণবঙ্গ কলকাতা দ্বারা পরিদর্শন করা একটি অভিযান ছিল। সোনার বিস্কুট সহ ধৃত সেই পাচারকারিকে ডিআরআই ইউনিটের হাতে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ জওয়ানরা।

এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের বিএসএফ জওয়ানরা বাংলাদেশে পাচারের জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার সময় ৩২৯১৮.৬৫১ গ্রাম সোনা আটক করে ছিল। এই ঘটনার থেকেই কেন্দ্রীয় রাজস্ব দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের অনুমান, বিদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচারের একটা বড় চক্র দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। এবং তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে থাকে।

আটক ২৩টি সোনার বিস্কুট

শিলিগুড়ি সহ মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, হিলি, বনগাঁ, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে তাদের বড়োসড়ো নেটওয়ার্ক কাজ করছে। অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে সোনা চোরাচালান রোধে সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর নজরদারি কঠোর রয়েছে বলে এই সাফল্য পাওয়া গেছে, এমনটাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গোয়েন্দাদের দাবি।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply