January 23, 2025

সাহায্য নয়, পরিজনদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাকুল আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্বজন হারানো পরিবারের

0
Advertisements


HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, রামপুরহাট বাগটুই ঃ আনিস কান্ডের পর রামপুরহাটের অগ্নিকান্ডে হত্যালীলা। গণতান্ত্রিক দেশে নির্মম ভাবে গণতন্ত্রের হত্যাকান্ডে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বর্তমানে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ বড়োসড়ো প্রশ্ন চিহ্নের মুখে! গত সোমবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বোমা হামলায় মৃত্যু হয় তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের। ভাদু শেখ বগটুই গ্রামেরই বাসিন্দা ও এক নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন। একটি চায়ের দোকান বসে আড্ডা দেওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ে পালায় এক দল দুষ্কৃতি।

স্থানীয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভাদু শেখকে নিয়ে যাওয়া হলেও কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যু হয় তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। ঠিক তার পরেই সেই গ্রামেরই কয়েকটি বাড়িতে পর পর আগুন লেগে যায়। শিশু, মহিলা-সহ ৮ জনের মৃত্যু হয় অগ্নিদগ্ধ হয়ে। আহত আরও ৩। স্থানীয় সুত্রের খবর, পুলিশের সামনেই একটি ঘরে মহিলা-পুরুষ-শিশু সহ ৮ জনকে তালাবন্দি করে পেট্রোল ঢেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরা ফেলা হয়েছে।

এমন জঘন্য ন্যাক্কারজনক ও ভয়াবহ হত্যালীলার প্রতিবাদে ঘটনাস্থলে যান বাম নেতা বিমান বসু ও মহম্মদ সেলিম। এদিন বিমান বসু বলেন, “এই গণহত্যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। যারা এটা করেছে, তাদের জনগণের দরবারে আসামি করা উচিত।” “কিন্তু যার মাথায় অক্সিজেনের অভাব, সে কখন কী বলে, কখন কী আচরণ করে তাঁর পক্ষে ব্যাখ্যা দেওয়া খুবই কঠিন’, অনুব্রত মণ্ডলকে কটাক্ষ বাম নেতার। সোমবার রাতে হত্যাকাণ্ডের পর শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ঘটনাস্থল সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে গিয়ে ছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা।

তবে যাওয়ার পথে বর্ধমানের শক্তিগড়ে নেমে ল্যাংচা ভোজন করেন। যা ভাইরাল হতেই হাসির খোরাক হয়ে ওঠে নেটদুনিনায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বগটুইয়ে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সকালে কেউ কলকাতা থেকে রামপুরহাটে এলে তাঁর রাস্তায় খিদে পাবে না? আর খিদে পেলে খাওয়ার খাওয়া যায় না, সেটা কি অপরাধ?’’ বিজেপি বিধায়কেরা ‘ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে’ যাচ্ছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তা অশোভনীয় বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।

বুধবার সকালে কলকাতা থেকে বাসে করে বগটুই গ্রামের পথে রওনা দিয়েছিলেন বিজেপির বিধায়করা। আর তা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দল ল্যাংচা খেয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে ঢুকছেন। আজ রামপুরহাট যাব ভেবেও তাই গেলাম না।’’ উপলক্ষ ছিল একটি ভিডিয়ো। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ টুইটারে ওই ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন। তাতে দেখা গিয়েছে, বর্ধমানের শক্তিগড়ে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিজেপি প্রতিনিধিদলের বাসগুলি।

কুণাল ঘোষ টুইট করেন, ‘বিজেপি-র পিকনিক দু’গাড়ি, বাসে যথাযথ আয়োজন বলে খবর। তবে শক্তিগড়ের ল্যাংচা না হলে কি চলে?”এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘সকালে কলকাতা থেকে রামপুরহাট এলে রাস্তায় খিদে পাবে না? তিনি তো আসবেন হেলিকপ্টারে। আর যিনি রাস্তা দিয়ে আসছেন, তিনি তো জলখাবার খাবেনই। রাস্তার অবস্থাটা জানেন? বিজেপি-র বিধায়করা ৩টের সময় এসে পৌঁছেছেন। তাঁদের বলা হচ্ছে, ল্যাংচা খেয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে যাচ্ছেন! পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ কেমন ভাষা!’



গড়বেতার তৎকালীন দাপুটে নেতা-মন্ত্রী, বর্তমানে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘ছোট আঙারিয়ার ঘটনাও ছিল তৃণমূলের ষড়যন্ত্র, সিপিএমকে ফাঁসানোর কায়দা। যা আদালতে প্রমাণ হওয়ায় বেকসুর ছাড়া পেয়ে যান অনেকেই।’’ ভাদু শেখের মৃত্যুতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাগটুই এলাকা সহ গোটা রাজ্য। রাতভর গ্রামে চলেছে বোমাবাজি, দুষ্কৃতির উন্মাদ তাণ্ডব। কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, গতকালও উপপ্রধানের অনুগামীরা রাতভর বকটুই গ্রামে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টারে বাগটুই যান মুখ্যমন্ত্রী। দেখা করেন আক্রান্ত সোনা শেখের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এরপর আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকার চেক ও বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ টাকার চেকও তুলে দেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে চলে যাওয়ার পর তাঁরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়। সেই সদস্যদের মধ্যে লাল শেখ নামের একজন বলেন, ‘দিদি যা বললেন তাই করতে হবে।

কারণ তিনি টাকা দিলেন, চাকরি দিলেন। সামান্য কিছু দিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করলেন। আর চাপে পড়ে আমাদের নিতেও হল। কিন্তু গ্রামে যে থাকব তার নিরাপত্তা কোথায়?’ পুলিশ এখানে নিরব দর্শক, আমরা তাই সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। এদিন আদালতে মহামান্য বিচারপতিও রামপুরহাট কেসে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বলে সুত্রের খবর।

Advertisements

Leave a Reply