সংবাদের জেরে নিজেদের দোষ স্বীকার করে রোগীর পরিবারের হাতে দুই পর্যায়ে ৮,৮০০ টাকা ফেরত দিল বারাসাতের নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল
HnExpress ১১ই সেপ্টেম্বর, হীরক মুখোপাধ্যায়, বারাসাত ঃ অবশেষে সংবাদের জেরে নিজেদের দোষ স্বীকার করে রোগীর পরিবারের হাতে দুই পর্যায়ে ৮,৮০০ টাকা ফেরত দিল নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল’-এর বারাসাত শাখা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২৭ অগস্ট শিশুতোষ ঘোষ-এর পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৬,৬১৫ টাকা আদায় করেছিল এই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ।
গত ২৭শে অগস্ট বুকে পেসমেকার বসাবার প্রয়োজনে বর্ষীয়ান শিশুতোষ ঘোষকে (৭৮) ‘নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল’-এর বারাসাত শাখায় ভর্তি করা হয়েছিল। রোগীর পরিবারের তরফ থেকে সঞ্জয়কুমার ঘোষ গত ৮ই সেপ্টেম্বর দুপুরে হসপিটালের মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ডন্ট-এর কাছে এক লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন।
যেখানে জানানো হয়, ‘হসপিটালে রোগী ভর্তি থাকাকালীন একদিকে যেমন রোগীকে ভিজে কম্বল জড়িয়ে শীততাপনিয়ন্ত্রণ ঘরে শুইয়ে রাখা হয়েছিল, ঠিক তেমনই এক জনৈক ওয়ার্ড বয় কিছু বিষয় বোঝাতে না পেরে রাগের চোটে রোগীর গালে সপাটে একটি চড়ও মারেন।’ প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে চড় মারার দৃশ্য রোগীর পরিবারের চোখে পড়ে যেতেই রোগীর পরিবার তড়িঘড়ি রোগীকে হসপিটাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
এরপর রোগীর পরিবার থেকে হসপিটালে লিখিত অভিযোগ করে জানানো হয়েছিল, ‘হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রোগীর শরীরে একটা চ্যানেলও বসাতে পারেনি, মুখ দিয়ে একটাও ওষুধ খাওয়াতে পারেনি, রোগী আইসিইউ-তে দুই তিন ঘণ্টার বেশি থাকেনওনি। তারপরেও হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে ওষুধের জন্য চড়া দামের বিল ও আইসিইউ-এর জন্য একদিনের পুরো খরচ নিল?
আর সেই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসার পরেই হসপিটালের প্রশাসক শুভেন্দু প্রকাশ-এর সাথে কথা বলে রোগীর পরিবার থেকে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এলো হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ নিরসনে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিলেন তাঁরা। যদিও গায়ে হাত তোলার মত দোষে দোষী সাবস্ত হওয়া সেই ওয়ার্ডবয় এর বিরুদ্ধে কোনো আইনিপদক্ষেপ নেওয়া হয়েনি এখনো অব্দি।
তারপর আইসিইউ শয্যা ভাড়া বাবদ ৬,৮০০ টাকা ও পরে ওষুধ বাবদ নেওয়া আরো ২০০০ টাকা অর্থাৎ মোট ৮,৮০০ টাকা রোগীর পরিবারকে ফেরত দিল ‘নারায়ণা মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল’-এর বারাসাত শাখা। যার ফেরত মূল্য ৫০% এর কাছাকাছি। যদিও অভিযোগকর্তার দাবী, “আমার মূল অভিযোগই ছিল, যিনি আমার বাবাকে মেরেছেন তাঁকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনো সদর্থক ভূমিকা নেয়নি।
তবে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে ওষুধ ও আইসিইউ বেড ভাড়া সম্পর্কিত অন্য দুই অভিযোগের নিরসন হেতু আমার হাতে দুই পর্যায়ে মোট ৮,৮০০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” আজ ‘নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল’-এর বারাসাত শাখার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সঞ্জয় কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, “নাম ও খরচের অনুপাতে এখানে উন্নতমানের কোনো চিকিৎসা পরিষেবাই পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে রোগীর পুত্র বললেন যে, আমার বাবাকে এখানে ভর্তি নেওয়ার পর এখানকার চিকিৎসকেরা একদিকে যেমন বাবার হাতের শিরা বা ধমনী খুঁজে না পেয়ে একটা চ্যানেল বসাতে পারেননি, ঠিক তেমনি বাবার শল্য চিকিৎসা করাও সম্ভব নয় বলে নিদান দিলেও পরে অন্য এক অখ্যাত সেবাকেন্দ্র থেকে সাফল্যের সঙ্গেই বাবার শল্য চিকিৎসা সম্ভব হয়েছিল।”