রাজনৈতিক খেলার মাঠ থেকে অনেকেই বিতারিত, কান্নায় ভেঙে পরলেন একাধিক বিতর্কে জড়িত সোনালি গুহ
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ অনেকেই আশা করে ছিল, তাঁরা এবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সৈনিক হয়েই লড়াই করবে আগত বিধানসভা ভোটে। কিন্তু খেলা হবে এই স্লোগানেই প্রচারের মাঠ মাতিয়ে অবশেষে খেলার মাঠ থেকেই বের করে দেওয়া হলো। এই সিধান্ত অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ হাইকমান্ডের সিধান্ত মেনে নিয়েছেন মাথা নত করেই।
তবে হাইকমান্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সিধান্ত মেনে নেওয়াটাই শ্রেয়, কারণ নতুনদের জন্য পুরানোদের জায়গা ছেড়ে দিতেই হয়। সূত্রের খবর, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন বেশকিছু মন্ত্রী। এই মন্ত্রীদের শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এবারের ভোটের লড়াই থেকে ব্রাত্য রাখা হল। তাঁরা হলেন অমিত মিত্র, পূর্ণেন্দু বসু, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা প্রমুখ। তারকা প্রার্থীদের ভিড়ে এবার টিকিট পাননি ২৭ জন বিধায়ক।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সরিয়ে খড়দা কেন্দ্রে এবার টিকিট দেওয়া হয়েছে স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান কাজল সিংকে। এরপর কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দফতরের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে সরিয়ে রাজারহাট-গোপালপুরের তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে। কীর্তন সঙ্গীতশিল্পী অদিতি মুন্সিকে খাদ্যপ্রক্রিয়া করণ এবং উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার বদলে প্রাক্তন সিপিএমের নেতা তথা পেশায় চিকিৎসক মহম্মদ রেজাউল করিমকে টিকিট দেওয়া হয়েছে।
আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে বয়সের কারণেই বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদাকে সরিয়ে বসানো হয়েছে কল্পনা কিস্কুকে। এরপর বাদ পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রত্না ঘোষ কর। এইখানেই শেষ নয় এই বিধানসভাতে বাদ পড়লেও এই প্রবীণ মন্ত্রীদের ফের ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন বিধান পরিষদ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
তাই আশি বছরের বেশি যে সমস্ত বিধায়কদের এবার প্রার্থী করা হয়নি, তাঁদেরই উচ্চ কক্ষে নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে সাতগাছিয়ার বিধায়ক সোনালি গুহকে দল টিকিট দেয়নি। শোনা মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালি গুহ। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না দল আমাকে টিকিট দেয়নি! সবকিছু যেন দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। একনিষ্ঠ ভাবে দল করার হয়তো এই পুরস্কারই প্রাপ্য ছিল।’’
সূত্রের খবর, ২০০১ সাতগাছিয়ার সোনালি গুহকে প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের লড়াইতে সিপিএম নেতা গোকুল বৈরাগীকে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিধায়ক হন তিনি। তারপর ২০০৬, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে সেই আসন থেকেই বিধায়ক হন সোনালি গুহ৷ ডেপুটি স্পিকার থাকাকালীন মাঝে মধ্যেই অবশ্য অহেতুক বিতর্কেও জড়িয়েছেন তিনি। টিকিট না পাবার কারণ কি সেই অহেতুক বিতর্কে জড়ানো? এরপর ভাঙড়ের প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নের জাল বুনছিলেন আরাবুল ইসলাম।
কিন্তু ইস্তেহারে নাম নেই তাঁর। অসুস্থ মন্ত্রী তথা ভাঙড়ের বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা যে এবার প্রার্থী হবেন না, তা জানা ছিল। তাই আরাবুল ইসলামের ধারনা ছিল তিনি ভাঙড়ের খেলার মাঠে নামবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে আরাবুল ইসলাম নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন, ‘দলে আজ আমার প্রয়োজন ফুরালো’। কিন্তু আমজনতার কথা অনুযায়ী, অন্য কথাআ ভাবাচ্ছে আরাবুল ইসলামকে। কারণ তাঁকে নিয়ে বারবরই ভাঙড় লাগোয়া এলাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছিল দল।
ফলে তাঁকে একবার সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। তিনি রাজ্যের এক মন্ত্রীর ‘স্নেহধন্য’ ছিলেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া নেয়নি দল। কিন্তু সুযোগ একবারই আসে বার বার নয়। তাই এবার ভোটের টিকিট বন্টনের সময় প্রথম সুযোগেই আরাবুলকে ছেঁটে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারন সোনার বাংলা গড়তে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রয়োজন, এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। এরপর লিস্টে নেই বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক তথা প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস।
ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘দীর্ঘ সাড়ে ছ’বছরের রাজনৈতিক লড়াইয়ে একবার বাদে প্রতিবার ভোটের লড়াইয়ে দলকে জিতিয়েছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সর্বক্ষণ। আমার ব্যবহারে কেউ দুঃখ পেলে ক্ষমা করবেন। ফুটবল বা ক্রিকেটে পারফরম্যান্সই শেষ কথা। আমি এটাই জেনে এসেছি। আমি তো ফুটবলার। আমার কাছে ভাল খেলাটাই বড় কথা ছিল। এখন রাজনীতিতে এসেছি। সেখানেও পারফরম্যান্সই শেষ কথা বলে জানতাম। আমি সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা-ও আমাকে প্রার্থী করা হল না কেন? সেটাই আমি দলের কাছে জানতে চাই।’