সংসার চালানোর তাগিদে এবারে ক্যামেরা ছেড়ে বাবার বন্ধ হওয়া চায়ের দোকানই উপার্জনের একমাত্র সঙ্গী
HnExpress ৫ই জুন, সুদীপ ঘোষ, নদীয়া ঃ সংসার চালানোর তাগিদে এবারে ক্যামেরা ছেড়ে বাবার বন্ধ হয়ে যাওয়া চায়ের দোকানই উপার্জনের একমাত্র সঙ্গী। প্রসঙ্গত, সারা বিশ্ব এখন একটা অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে, যার আপাতত নেই কোন ছন্দে ফেরার ঠিকানা। এই অচলাবস্থার একমাত্র কারণ হল মহামারী ভাইরাস করোনা। সারা বিশ্ব এই অচলাবস্থা থেকে বা মহামারীর কবল থেকে কবে যে মুক্তি পাবে তা সঠিক কেউ জানে না।
কিন্তু এটা বলাই বাহুল্য যে একদিন এই পৃথিবী করোনা মুক্ত হবেই হবে, সে নিয়ে বিশ্ববাসী যথেষ্ট আশাবাদী। মানুষের মধ্যে আবার ফিরে আসবে হাসি খুশির জোয়ার, কিন্তু কবে তা আমরা সঠিকভাবে কেউই জানিনা। কারণ মহামারী করোনার এখনো কোন প্রতিষেধক বার হয়নি। তাই এই মহামারী করোনা আটকাতে আপাতত একটাই হাতিয়ার, তা হল লকডাউন।
মার্চ মাসের ২২ তারিখে সকল ভারতবাসীর কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একদিনের জনতা কারফিউ পালন করার জন্য আহ্বান জানান। তারপরের দিন থেকেই অর্থাৎ ২৩শে মার্চ থেকে শুরু হয়ে যায় এক টানা লকডাউন পর্ব। আর এই টানা লকডাউনের ফলেই রুটিরুজিতেও টান ধরেছে সাধারণ মানুষের। রুজিরুটি জোগানোর তাগিদে মানুষের জীবিকা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে উঠেছে নদীয়ার ভিমপুরের সুভাষ বিশ্বাস এর।
পেশায় তিনি ক্যামেরাম্যান, কিন্তু আজ বড় সাধের সেই ক্যামেরায় জমেছে ধুলোর আস্তরণ। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! কিছু দিন আগেও একের পর এক ছবি তোলার অর্ডার আসছিলো তাঁর। সামনে একের পর এক অনুষ্ঠান ছিল। কাজের অগ্রিম চুক্তিও হয়ে গেছিলো নদিয়া জেলার অন্তর্গত ভীমপুরের ক্যামেরাম্যান সুভাষ বিশ্বাসের। কবে ঠিক হবে সব আবার আগের মত? সে কি নতুন করে শুরু করা সম্ভব হবে? প্রশ্ন আছে কিন্তু উত্তর দেবে কে!
বড় সাধের জিনিসে আজ ধুলো জমেছে, তাই হতাশ দৃষ্টিতেই দেখা ছাড়া আর কিইবা করার আছে। তবে এমন তো হবার ছিল না। কিন্তু ২৩ মার্চের লকডাউনের পর থেকে সবই কেমন যেন বদলে গেল। এই মুহূর্তে ক্যামেরম্যানের পরিবর্তে তার পরিচয়টা একজন চা বিক্রেতার। নদিয়ার ভীমপুরের সুভাষ বিশ্বাস ক্যামেরাম্যান পরিচয় আর ফিরে পাবে কিনা তা সময়ই বলবে। তিন বছরের শিশুকন্যার দুধের জোগান দিতে বাধ্য হয়েছে সুভাষ নিজের ভালোবাসার পেশাকে পাশে সরিয়ে রাখতে।
একটা সময় যার লেন্স বন্দী থাকত মানুষের সব অনুভূতিগুলো। আজ তার অনুভূতিগুলো কেমন যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে একটু সাহায্য চাইছে সে। তাঁর মতই আরও কত শত যুবক আজ কর্মহীন তা খোঁজ নিলেই দেখা যাবে। তাই বন্ধ হয়ে যাওয়া বাবার পুরনো চায়ের দোকানই এখন একমাত্র ভরসা সুভাষের। ছবি তুলে যে টাকা জমিয়ে ছিল সে, লকডাউনে সেই টাকা শেষ।
স্ত্রী এবং ছোট্ট শিশু কন্যাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়ের দোকানই যে এখন শেষ সহায়সম্বল হল ভীমপুর এর ক্যামেরাম্যান সুভাষ বিশ্বাস এর। তাঁকে সাহায্য করতেই প্রায় দুবেলা করেই চা খেতে এগিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। তবে আর এভাবে কতদিনই বা সংসারের বোঝা টানবে সুভাষ, তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েই গেল!