করোনায় মৃত্যু ঠেকাতেই ভ‍্যাকসিনের পরিপূরক কি লকডাউন?

0

HnExpress ২৭শে জুলাই, ঝুম্পা দেবনাথ, কলকাতা ঃ দিনে দিনে উর্ধ্বমুখী হচ্ছে করোনা সংক্রমণের গ্ৰাফ। N-95 মাস্ক পড়া বা সামাজিক দূরত্ব বা চিকিৎসকদের মতানুযায়ী ঘরোয়া টোটকা কোন রকম ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণকে। ফলে এই করোনা-মৃত্যু ঠেকাতেই ভ‍্যাকসিনের পরিপূরক কি লকডাউন? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৩১০ জন এবং কোভিডকে হারিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন ৩২ হাজার ৬০২ জন‌।

দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৬১ জন। এর পাশাপাশি করোনার প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ হাজার ৬০১ জন মানুষ। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে করোনায় মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে ভারত।
এমতাবস্থায় করোনায় এই বিপুল সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং মানুষের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই বিভিন্ন দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে পাল্লা দিয়ে ভ‍্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা। দিল্লিতে ভ‍্যাকসিন তৈরির ট্রায়ালের দ্বিতীয় দফায় সফল হয়েছে ভারত।

অন‍্যদিকে সিরাম ইনস্টিটিউট ঘোষণা ক‍রেছে, ভারতে এই ভ‍্যাকসিন পাওয়া যাবে বিনামূল্যেই। বিশ্ব জুড়ে ভ‍্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া যখন প্রায় জোড়কদমে চলছে, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি তুলছেন যে, ২০২১ সালের আগে এই ভ‍্যাকসিন আসা সম্ভব নয়। আর এর পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মুখ‍্য বিজ্ঞানী তথা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং টিবি ও এইচআইডি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত গবেষক ড. সৌম্য স্বামীনাথন করোনার বিপুল সংক্রমণ ব‍্যাপারে সারা বিশ্বকে সর্তক করে দিয়ে জানান, করোনার মতো অতিমারীর বিরুদ্ধে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে এখনও প্রচুর সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, হার্ড শব্দের অর্থ জনগোষ্ঠী। ইমিউনিটি মানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর ভ‍্যাকসিন নিয়ে সংক্রমণের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষের শরীরে যখন কোনও বিশেষ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার অকৃত্রিম ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায় এবং এর সুবিধা পেতে শুরু করেন অন‍্যরাও, তখন এই ঘটনাকে বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি। তিনি এই হার্ড ইমিউনিটির ধারণার ক্ষেত্রে বলেন, জনসংখ্যার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে ইমিউনিটি গড়ে তোলা কোনও ভ‍্যাকসিনের মাধ্যমেও তা সহজ কাজ নয়।

কোভিড-১৯ র ভ‍্যাকসিন কখনও পাওয়া নাও যেতে পারে, আমাদের সকলকে এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে, এমনটাই সম্ভাবনার কথা বলছেন ড. সৌম্য স্বামীনাথন এবং হু -র বিজ্ঞানী মহল। হু-র বিজ্ঞানী মহলের গোষ্ঠী সংক্রমণের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় সাংবাদিক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানান যে, কেরালার মতো পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়ে গেছে গোষ্ঠী সংক্রমণ। তাই এই গোষ্ঠী সংক্রমণের চেনটাকে ব্রেক করার উদ্দেশ্যেই রাজ‍্যে সপ্তাহে ২ দিন পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হয়।

তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শনিবার লকডাউনের ভিত্তিতে বাস, ট্রেন, দোকান, বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। আগামী সপ্তাহে বুধবার পূর্ণ লকডাউন করা হবে এবং আগামী সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনটি সোমবার বৈঠকে বসে ঠিক করা হবে বলেই জানিয়ে ছিলেন তিনি। চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শনিবার অর্থাৎ ২৩ জুলাই ও ২৫ জুলাই জেলায় জেলায় সফল লকডাউনে সাড়া দিয়েছেন মানুষ।

কলকাতা, উওর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ প‍রগনা, হাওড়া, হুগলি , মালদা, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বীরভূম সহ রাজ‍্যের সমস্ত জেলাতেই লকডাউনকে সফ‍ল ক‍রার জন্য পুলিশ স্বতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাহলে এই গোষ্ঠী সংক্রমণের ভিত্তিতে ভ‍্যাকসিনের পরিপূরক হিসাবে সপ্তাহে দু-দিন লকডাউনই কি ভরসা? এই নিয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, বাংলার মানুষ পোকামাকড় নিয়ে বড়ো হয়েছে, শুধুমাত্র বাংলায় রাজ‍্য সরকারের পরিকল্পনার অভাবের জন্যই করোনা নামক এই সংক্রমণ বিপুল আকার ধারণ করেছে।

তিনি আরও জানান, টেস্ট করানো কথা বলেও এই সরকার টেস্ট করাছেন না। তিনি আরও জানান, মানুষ কোন জ্বর বা কিছু হলে, কোথায় যাবে, সেই সংক্রান্ত কোন নির্দেশিকা দিতে ব‍্যর্থ এই সরকার। তিনি বলেন, তথ্য গোপন করেও কিছু করতে পারলেন না, অবশেষে পরিস্থিতি চাপে পড়ে গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা স্বীকার করেছেন এই সরকার। তথ্য গোপন ও লোপাট ছাড়া এই সরকার কিছুই পারেন না বলেই জানান তিনি।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply