হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা দখল নিয়ে চলছে “ট্রাম্প-বাইডেন” এর তীব্র লড়াই, মোদীর কপালে ভাঁজ
HnExpress ৫ই নভেম্বর, অরুণ কুমার ঃ করোনা আবহে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকায় শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ৷ ভোটের লাইনে এবারও দাঁড়িয়েছেন মার্কিনিরা৷ এবারের নির্বাচনে বেশ কিছুটা পিছিয়ে থেকেই ভোট শুরু করেছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন৷ এদিকে সারা বিশ্বের নজর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা দখল নিয়ে ট্রাম্প-বাইডেনের মধ্যে চলছে তীব্র লড়াই, যা দেখে কপালে ভাঁজ মোদি জির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে বাইডেনের দরকার আর মাত্র ৬ ইলেকটোরাল ভোট। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রয়োজন আরও ৫৬ ভোট। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা বেড়ে ২৬৪-তে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে ট্রাম্পের অবস্থান ২১৪-তে। নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণে জানা গেছে, বেশির ভাগ অঙ্গ রাজ্যেই জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু সেগুলোতে ইলেকটোরাল ভোট খুবই কম। রিপাবলিকান প্রার্থী ২৩টি রাজ্যে জয়ী হয়েছেন। যার মধ্যে ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ইন্ডিয়ানা, কেন্টাকি, মিসৌরি ও ওহাইও অন্যতম।
২০১৬ সালের নির্বাচনেও এসব রাজ্য দখলে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। উইসকনসিনের ফলও প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। এখানেও তিনি মামলার কথা বলেছেন। এদিকে, মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা বন্ধে মামলা করার কথা জানিয়েছে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রচার শিবির। তবে সিএনএন সূত্রের খবর সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তা মর্গান অ্যাডামস জানিয়েছেন যে, এ ধরনের কোনো মামলারই নথিপত্র আদালত পায়নি।
সে হিসেবে এখনই মোটামুটি বলা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে চলেছেন জো বাইডেন। মিশিগান, উইসকনসিনে জিতেছেন জো বাইডেন। অন্যদিকে শুধু নেভাদায় দুই প্রার্থীর ব্যবধান সবচেয়ে কম। ভোট গণনাও বাকি অনেক। সেই হিসেবে বলতে গেলে এই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হবেন সেই ভাগ্য ঝুলে আছে নেভাদায়। মিশিগান, উইসকনসিন ও নেভাদায় জিতলেই বাইডেনের ২৭০ এর কোটা পূর্ণ হবে। বাইডেন ১৮টি রাজ্যে জয়ী হলেও সেগুলোতে ইলেকটোরাল ভোট তুলনায় অনেকটাই বেশি।
যার মধ্যে অন্যতম ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন এসব রাজ্য থেকেই জয়ী হয়ে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, পপুলার ভোটে যে জয়ী হবে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না, যদি না ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তাঁর পক্ষে থাকে। আগের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন সাড়ে ২৯ লাখ ভোট বেশি পেয়েও জয়ী হতে পারেননি ট্রাম্পের সঙ্গে। তবে নির্বাচনের ফলাফলের গতি প্রকৃতিতে আভাস মিলছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণে এগিয়ে বাইডেনই।
ভোটগ্রহণ শেষ হতে না হতেই সকাল থেকে যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করে দিয়েছে, তাতে দ্বিতীয় বারের জন্য হোয়াইট হাউস হাতছাড়া হতে পারে ট্রাম্পের৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে দিনের পর দিন বেড়ে চলা সামাজিক মেরুকরণের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছেন ভোটারদের একাংশ৷ তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে ফলাফলেই৷ ভোটারদের একটা বড় অংশ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এর সমর্থনেই পা বাড়িয়েছেন৷ এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে ইন্ডিয়ানা থেকে শুরু করে টেনেসি, আরকানাস সহ ৫টি প্রদেশেই জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে নিউ জার্সি, ম্যসাচুসেটস, ভেরমোন্ট ও মারিল্যান্ডে জয় পেয়েছেন৷ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়৷ ভারতীয় সময় ধারাতে ভোটগ্রহণ শেষ হয়৷ ইতিমধ্যে ভোটের ফলাফলও আসতে শুরু করে দিয়েছে৷ তাতে কিছুটা হলেও পিছিয়ে ট্রাম্প৷ শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ১১৮টি প্রদেশে জয়ী হয়েছেন৷ ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন ২০৯টি প্রদেশে জয়ী৷ আর ২৭০ হল হোয়াইট হাউসের ম্যাজিক ফিগার৷
ভোট গণনা পর্বের শেষবেলা পর্যন্ত বাইডেনের ঝুলিতে যা ভোট পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে তাতে অতীতের বহু বিজয়ী রাষ্ট্রপতির প্রাপ্ত ভোটের রেকর্ডও ভেঙে যেতে পারে। এমনকী প্রাক্তন ডেমোক্র্যাটিক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বারাক ওবামার রেকর্ডও ভেঙে ফেলতে পারেন জো বাইডেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত দনোমনো চললেও রাত যত গড়াতে থাকে ততই ক্রমশ ম্যাজিক ফিগারের অনেকটাই কাছে চলে আসেন ডেমোক্র্যাটিক পদপ্রার্থী জো বাইডেন।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ২৭০ ইলেক্টরাল কলেজের ভোটের সীমারেখা ছোঁয়া বাইডেন শিবিরের জন্য এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সম্ভাব্য পরিণতি কি হতে চলেছে তা দেখে এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কপালেও যে ভাঁজ পরেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। এবিষয়ে নজর রাখছে নয়াদিল্লিও। নরেন্দ্র মোদী একটু সমস্যায় পড়বেন, কারণ আমেরিকার মতো একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান একটু বেশি বর্ণবাদী, ছিটেল ও অশিষ্ট বাচাল হলে যেভাবে ট্যাকেল্ করা যায় সেই ভাবে বাম-ঘেঁষা বাইডেনকে ট্যাকেল্ করা যাবে না।
তাই মার্কিন বিদেশনীতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তা নিয়ে চলেছে কূটনৈতিক স্তরে নানান ভাবনাচিন্তা, এমনটাই ওয়াকিবহাল মহল সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। আর এমতাবস্থায় ভারত-চীন-মার্কিন রসায়নও অনেকটাই বদলে যাবে। যার প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতের বিদেশনীতিতেও। আগামী দিনে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বিশ্বের রাজনীতি কোন পথে অগ্রসর হয় তার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।