আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে : পঞ্জশির উপত্যকায় প্রতিরোধের মুখে তালিবান—

0


HnExpress অরুণ কুমার ঃ আফগানিস্তান এর মতো বৈচিত্রে ভরা দেশ এখন জ্বলছে হিংস্রতায়। তালিবান দখল করেছে গোটা দেশ। প্রাণে বাঁচতে মরিয়া আফগানরা। গোটা বিশ্বের কাছে রোজই আফগানিস্তানের চিত্র ভয়াবহ ভাবে সামনে আসছে। এদিকে, আফগানিস্তানে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে তালিবানের বিরুদ্ধে। পঞ্জশির উপত্যকায় আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে আফগান বিদ্রোহীরা।

ফলে জেহাদিদের রুখে দিতে তৈরি ‘নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’। ইতিমধ্যেই পঞ্জশিরে যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের খবর। পঞ্জশির উপত্যকা নিয়ে তালিবান যে ঘোষণা করেছে বলে একাধিক সংবাদসংস্থায় জানানো হয়েছে, তা শুনে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দিনে আরও রক্তাক্ত হতে চলেছে আফগানিস্তান। সূত্র উদ্ধৃত করে বিশ্ব সংবাদসংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, পঞ্জশির উপত্যকা দখল করতে ‘শয়ে শয়ে যোদ্ধাদের পাঠানো শুরু করেছে তালিবান।

এছাড়া তালিবানের আরবিক টুইটার হ্যান্ডেলেও জানানো হয়েছে, ইসলামিক এমিরেটের শয়ে শয়ে মুজাহিদ্দিন পঞ্জশির দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন শান্তিপূর্ণভাবে প্রদেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না চাওয়ার কারণেই এই পদক্ষেপ।” আরো জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় ইতিমধ্যে প্রচন্ড গুলির লড়াইও হচ্ছে। আর তাতে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে তালিবানরা। জানা গিয়েছে যে, প্রতিরোধের মুখে বাগলানে ১১জন তালিবানের মৃত্যুও হয়েছে। অন্য সূত্রে জানা গিয়েছে এই সংখ্যাটা অনেকটাক বেশি।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পঞ্জশির চিরদিনই তালিবান বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে থেকে গিয়েছে। এর আগেও ৯৬-এ যখন গোটা আফগানিস্তান প্রায় তালিবানদের দখলে। তখনও পঞ্জশিরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছিল স্থানীয় নেতা তথা ভারতের বন্ধু আহমেদ শাহ মাসুদের বাহিনী। ২০০১ সালে আল-কায়দা জঙ্গিদের হাতে খুন হতে হয় আহমেদ শাহ মাসুদকে। তারপরও পঞ্জশির দখল করতে পারেনি তালিবানরা।

উলটে, মার্কিন সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আফগানিস্তানকে তালিবান মুক্ত করার কাজে হাত লাগিয়েছিল আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমেদ মাসুদের বাহিনী। সেই মাসুদের বাহিনীই ফের আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তালিবানদের রুখে দিয়েছেন। এবারও আফগানিস্তানের প্রায় ৯৮ শতাংশ দখল করে ফেললেও পঞ্জশিরে ফের আটকে গিয়েছে জঙ্গিরা।

কাবুলে ঢুকে পড়লেও রাজধানী থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরের এই প্রদেশ এখনও তালিবান মুক্ত। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মঙ্গলবার জি-৭-এর জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিশেষ বৈঠক ডাকার পাশাপাশি সেখানে আলোচনার দাবী ক্রমশ জোরালো হতে আরম্ভ করা হয়েছে বিভিন্ন শক্তিধর দেশগুলোর দ্বারা। এই অবস্থায় আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তালিবান।



তবে সমগ্র আফগানিস্তান তালিবানের দখলে এলেও পঞ্জশির এখনও হাতছাড়া। পঞ্জশির তালিবানের জন্য হয়ে উঠেছে দুর্গম ঘাঁটি। তা দখল করতে এদিকে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালিবানরা। আত্মসমপর্ণ না করলে আগামী
দিনে আরো জোরালো হামলার হুঁশিয়ারও দিয়েছে তাঁরা। ইতিমধ্যে ওই প্রদেশে হামলা চালাতে আরও তালিবান জঙ্গি পঞ্জশিরে পৌঁছেও গিয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই এই নর্দার্ন অ্যালায়েন্স এর সাথে সাধারণ মানুষরাও কিন্তু সেই দলে যোগ দিতে শুরু করেছে বলে সুত্রের খবর।

এইরকম পরিস্থিতিতেই বাগলান প্রদেশে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী। দাবি করা হচ্ছে, বাগলানে নর্দান অ্যালায়েন্সের হামলায় প্রায় ৩০০ জন তালিবান নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজনকে বন্দিও করা হয়েছে। ইয়ালদা হাকিম নামে এক সাংবাদিক টুইট করে বাগলানের আন্দরাবে ৩০০ তালিবানের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। টুইটে তিনি দাবি করেছেন, অতর্কিত হামলা সামলাতে পারেনি তালিবানরা। তালিবান বিরোধী যোদ্ধারা ৩০০ জন তালিবান সদস্যকে নিকেশ করেছে।

তবে এ বিষয়ে আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহও এই হামলার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। একটি ট্যুইটের মাধ্যমে তালিবানদের নিয়ে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, ‘পঞ্জশিরে হামলা করতে উদ্যত হয়েছিল তালিবানরা। কিন্তু নর্দান অ্যালায়েন্সের পাল্টা মারে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই জীবিত অবস্থায় ফিরতে পারেনি। হামলা করতে গিয়ে নিজেরাই হত হয়েছে।’

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত প্রায় চলতি মাসে গোটা আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। রাজধানী কাবুল-সহ দেশটির ৯৮ শতাংশ দখল করলেও এখনও পঞ্জশির প্রদেশ দখলে আনতে পারেনি তাঁরা। সেখানে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। আর তাই নতুন উদ্যমে পঞ্জশির দখলের ডাক দিয়েছে তালিবানরা। ওই উপত্যকা দখলে নতুন করে আরও ‘যোদ্ধা’ পাঠাচ্ছে তালিবরা।

আর এরপরই পঞ্জশির উপত্যকায় তালিবান পন্থীদের সাথে প্রচন্ড লড়াই চলছে নর্দান এলায়েন্স বলে একাধিক সংবাদসংস্থা‌ সূত্রে জানা গিয়েছে। হিন্দুকুশ পর্বতের কোলে পঞ্জশিরে যেখানে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে তালিবানদের। ইতিমধ্যেই বাগলান প্রদেশ দখল করে নিয়েছে তালিবান বিরোধী আহমেদ মাসুদের বাহিনী। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩০০-রও বেশি তালিবান। পাশাপাশি লড়াই জারি রেখেই তালিবানকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে আহমেদ মাসুদ।

সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পঞ্জশিরের নেতা জানান, তালিবানগোষ্ঠীকে সমঝোতার টেবিলে আনতেই তাঁদের এ লড়াই। অন্যদিকে, পঞ্জশিরে প্রতিরোধের দেওয়াল ভাঙতে মরিয়া তালিবানও। কয়েকশো তালিবান পঞ্জশিরের দিকে এগোচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার এবং আফগান সেনা পিছু হঠায় তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের দখল নিয়েছে তালিবান।

ফলে এই পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই যে সহজ হবে না, তা জানে মাসুদ বাহিনী বলেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। এখন দেখার বিষয় পঞ্জশির উপত্যকায় তালিবান পন্থীদের সাথে প্রচন্ড প্রতিরোধ ‌কি ফলাফল দেয়। আর এটা জানার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply