করোনা আবহে, জৌলুস ছাড়াই হবে আশকোলা গ্রামের প্রাচীন মনসা পুজো, বন্ধ থাকছে ঝাঁপান উৎসব
HnExpress ১৬ই অক্টোবর, অরুণ কুমার, ঝাড়্গ্রাম ঃ করোনা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না, কিন্তু তা হলে কি হবে উৎসব মুখর দিনগুলিতে সচেতনতার পথেই হাঁটা দিল গ্রাম বাংলার মানুষ। করোনা আবহে, জৌলুশ ছাড়াই ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২নং ব্লকের আশকোলা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মনসা পুজা হবে। কিন্তু বন্ধ থাকবে ঝাঁপান উৎসব। তবে এই পুজা উপলক্ষ্যে আজও পুরোনো রীতি মেনেই এই এলাকায় পুজিতা হয়ে আসছেন মনসা বুড়ি। প্রায় ১০০বছর বা তার আগে থেকে এই পুজোর শুভারম্ভ হয় আশকোলা গ্রামে।
আশকোলা গ্রামবাসীদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় এই পুজো। তবে এই গ্রামে পুজো ছাড়াও লোকজনের সমাগম বেশি হয় ‘ঝাঁপান’ উৎসব দেখতে। ঝাঁপান এর অর্থ সাপের খেলা। এই ঝাঁপান দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। ঘট উত্তোলনের পর ঘটের সামনে সাপের খেলা দেখিয়ে দেখিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে মন্ডপে পৌঁছান৷ সাপের খেলা দেখাতে পয়সার বিনিময়ে বাইরে থেকে লোক আনা হয়৷ সাপের খেলা দেখাতে প্রায় ১০-১৫ টি বিষধর সাপ নিয়ে আসেন সাপুড়ে৷
মুখে সাপ ঢুকিয়ে, ৩/৪টে সাপ একসাথে নিয়ে, সাপ গলায় জড়িয়ে হাত দিয়ে টানা এক চাকা লাগানো এক গাড়ির উপর এই সব খেলা দেখানো হয়। এই খেলা দেখতেই মেতে উঠে গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই। এই প্রসঙ্গে গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা বল্লভ বাগ, শসাঙ্ক পাল ও শক্তিপদ পাল বলেন, “এটি আমাদের একটি প্রাচীন রীতি। সাপের খেলা দেখানোর পরই পুজিতা হন মনসা বুড়ি।” বৈকুণ্ঠ দাস নামে একজন ব্যাক্তির হাত ধরেই এই পূজার সুত্রপাত হয়েছিল এই গ্রামে।
ওই ব্যক্তির স্বপ্নাদেশ থেকেই এই পুজো শুরু হয়। ২টি ঘট বসানো হয় এই পুজোয়। কেবল মাত্র আশকোলা গ্রামের পুজোতেই এই রীতি লক্ষ্য করা যায়। কারন জানতে চাইলে বৈকুন্ঠ দাসের বংশধর দেবাশীস দাস বলেন, “বৈকুণ্ঠ দাস যখন আশকোলা গ্রামে পূজো শুরু করেন তারপরে একবছর গ্রামের নদী থেকে ঘট তুলে আনার সময় হঠাৎ ভেঙে গিয়েছিল ঘটটি। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সবাই পরামর্শ নিতে যায় চোরচিতা গ্রামের এক মহারাজের কাছে।
এবং সেই মহারাজ জানান আপনাদের পুজোতে আপনারা ২টি ঘট তুলবেন ঘট পূজোস্থানে পৌঁছে যাওয়ার একটা মনসা মায়ের ঘট ও আর একটা শিতলা মায়ের ঘট হিসেবে প্রতিস্থাপন করবেন। এই গ্রামের পূজোতে কোনো পুরোহিত এর প্রয়োজন হয় না। যাঁরা এই পুজোটি শুরু করেছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যের হাতেই পুজিতা হন মনসা বুড়ি।” এই পুজোর সঙ্গে মা লক্ষী ও সরস্বতি পুজোক হয়। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুজোর ঘট আনতে যাওয়ার আগের দিন রাতে গিয়ে যেই জায়গায় ঘট ওঠানো হবে সেই জায়গাটা চিহ্নিত করে রেখে আসতে হয়।
হঠাৎ একবছর সেই ঘাট চিহ্নিত করতে যাওয়া গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ একজন আমিশ খেয়ে ছিলেন। তারপর থেকেই সেই ভূল স্বরূপ আজও মনসা মায়ের সঙ্গে লক্ষী ও সরস্বতিকেও পুজো করতে হয়। এই পুজো দু’দিন ধরে হয় এবং দ্বিতীয় দিনের পুজোতে সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এছাড়াও গ্রামের স্থায়ী মন্ডপে পুজো করার পর প্যান্ডেলে পুজিতা হন মনসা বুড়ি। গ্রামবাসী অম্বুজ বাগ, বুবুল বাগ ও শিবশঙ্কর দেহুরী’রা বলেন,”গ্রামের ছোটো বড় সবাই এই পুজোতে মেতে ওঠে।
সাপের খেলা আর পুজো ছাড়াও সন্ধ্যাকালীন বিভিন্ন যাত্রা ও অনুষ্ঠানও পালিত হয়। পুজোর সময় বাদ দিয়ে এই সময়ই আমাদের গ্রামের সবার বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসেন।”
আগামী দিনগুলিতে বিভিন্ন উৎসব পার্বণে আশা করা যায় এ ধরনের সচেতনতা সর্তকতা মহামারী মোকাবিলায় গ্রাম বাংলার মানুষ দেশ সমাজকে পথ দেখাবে বলে তাদের ধারণা।