অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে নিয়ে দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া

0

HnExpress নিজস্ব সংবাদদাতা, বিশেষ প্রতিবেদন ঃ অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবে। বিকল্প পাঁচ একর জমি পাবে মুসলিমদের পক্ষের ‘সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড’। এ ভাবেই বিতর্কিত অযোধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ শনিবার এই রায় দিয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় বলে আদালত সূত্রে খবর। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির। রায় পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি গগৈ।

রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মূল বিতর্কিত জমি পাবে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’। এই জমিতে মন্দির তৈরিতে কোনও বাধা নেই। তবে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। আর ওই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই থাকবে বিতর্কিত মূল জমি। কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে মন্দির তৈরি হবে, তারও পরিকল্পনা করবে ট্রাস্টই।

হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বরুণ কুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘এটা ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছে।’’ অন্য দিকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরাইব জিলানি বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানাই। তবে এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব।’’

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের রাজ্য সভাপতি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়

তবে কাউকে কোনও প্রতিবাদ-প্রতিরোধের রাস্তায় না যাওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন জাফরাইব। অন্যদিকে রামমন্দির সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সুশীল সমাজে। সন্তোষ প্রকাশ করছেন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের রাজ্য সভাপতি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়। আবার অসন্তোষ জানিয়েছেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল তথা ইন্সটিট্যুট অফ টাউন প্ল্যানার্স-এর রাজ্য সভাপতি দীপঙ্কর সিংহ।

শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিট্যুট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান সুদীপ্তবাবু মনে করেন, “এই রায়ে ভারতবর্ষের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।“ তিনি জানান, “মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়কে আমি স্বাগত জানাই। ভারতবর্ষের ঐতিহ্য অনুযায়ী, এই রায়ের পরে শান্তি এবং সম্প্রীতি রক্ষা করাই এখন আমাদের সকলের কর্তব্য।“

অন্যদিকে দীপঙ্কর সিংহ জানিয়েছেন, “সেটা ছিল ১৯৮৩-৮৪ সাল। আমি কলকাতার এক খ্যাতনামা উপদেষ্টা সংস্থায় স্থপতি হিসাবে কর্মরত। আমার উপর দায় বর্তালো হায়দ্রাবাদে বিড়লা মন্দির সংলগ্ন একটি টিলার উপর একটি প্লানেটারিয়াম নির্মাণের নকশা করার। কলকাতার অফিসে বসে একটা প্রাথমিক রূপরেখা প্রস্তুত করার পরে ওই নির্মাণ ক্ষেত্রের মালিক সংস্থা বিড়লা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নির্মাণস্থল সরেজমিনে পরিদর্শনের অনুরোধ জানালো।

দীপঙ্কর সিংহ, স্থপতি

আমি ও আমাদের এক বয়ঃজ্যেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার পৌঁছালাম সেই নির্মাণ ক্ষেত্রে। ওই সংস্থার এক প্রতিনিধি টিলার উপরে নিয়ে গেলেন। উপর থেকে সুন্দর হুসেইন সাগর হ্রদ দেখা যায়। আর একটু উঁচুতে আধুনিক বিড়লা মন্দির। তারপর ঘুরে ফিরে দেখাতে দেখাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা জানালেন। টিলার উপরে বেশ কিছুদিন ধরে চলছিল এক বেলা হিন্দুদের সংকীর্তন অপর বেলায় চলছিল নামাজ পড়া। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর একদলের দাবী ছিল মন্দির বানানোর।

আর এক দলের দাবী ছিল মসজিদের। বিড়লা গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনের এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে মীমাংসা করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তৈরি হবে আধুনিক প্লানেটারিয়াম ও বিজ্ঞান চর্চাকেন্দ্র। সেই প্লানেটারিয়ামের নকশা আমি করেছিলাম। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। এই ভারতবর্ষে এ ধরণের বিবাদ মীমাংসা করে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা দিশা পেয়ে ছিলাম বিড়লা শিল্প গোষ্ঠীর কাছ থেকে। আজ তার বড় অভাব বোধ করলাম।

ওই ধরণের বিতর্কিত স্থানে মন্দির বা মসজিদ নয়, দরকার ছিল কোনো কারখানা, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র। কিন্তু কে বোঝাবে? এখন ওই প্লানেটারিয়ামটি বহু মানুষ দেখতে যায়। তাদের মধ্যে কিন্তু কোনও বিদ্বেষ নেই।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply