“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই“— লকডাউনের দিনলিপিতে সঙ্গীতা ত্রিপাঠি মিত্র
HnExpress ২৫শে মার্চ, অশোক সেনগুপ্ত : “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এটাই এখনো পর্যন্ত আমার বিশ্বাসের ভিত্তি।” কী করছেন লকডাউনে— আলোচনার শুরুতেই একথা জানালেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চন্দননগর কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা তথা বঙ্কিম -চর্চা কেন্দ্রের প্রাক্তন অধিকর্তা সঙ্গীতা ত্রিপাঠি মিত্র।
তিনি সাক্ষাৎকারে জানালেন, করোনার ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আজই এই গান বাঁধল আমার পুত্র —
“কে মিত্র কে শত্রু
তুমি ভুলে যেও,
কাছে যেও না। …
কিছুদিন আরো কিছুদিন
কোনো প্রতিবাদে
নেমে পোড়ো না।
মিথ্যে খবর
ভুল তথ্যের সমাহারে
তুমি নিঃশ্বাস ফেলো না।
. . . .
শহর স্তব্ধ রেখে জিতছে সবাই
মাঝে তুমি হেরে যেও না।” ইত্যাদি।
সঙ্গীতা দেবীর কথায়, লকডাউনে আমার প্রধানত সময় কাটছে পুত্রের সঙ্গে। ও বিদ্যামন্দিরের ছাত্র। ওরও কলেজ ছুটি। তাই বাড়িতেই আছে। কিন্তু আসল কথা হল ও গান লেখে, সুর বাঁধে আর গান গায়। এই ছুটিতে ওর নতুন কিছু গান শুনে বড়ো ভাল সময় কাটছে। অনেকদিন ধরে মনে মনে বিশ্রাম চাইছিলাম। এখন কলেজ বন্ধ। সেই সুযোগ এলো। তবে ই-মেলের মাধ্যমে কলেজের প্রয়োজনীয় কাজ হচ্ছে।
ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে পড়াশোনার আলোচনাও ফোনে কিম্বা হোয়াটসঅ্যাপের মারফৎ চলছে। গবেষক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও একই ব্যবস্থা।
অনেকদিন পরে সংসারের প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। ভাল লাগছে। ঘরদোর পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে আনন্দ। রান্না করে আনন্দ। আর শিক্ষাবিদ জানান, কথাটা বলতে শোনাল যেন বড়ো আনন্দে আছি। তা কিন্তু একেবারে নয়।
গান শোনা, ঘরের কাজ যাই করিনা কেন সর্বক্ষণ মনে একটা বিষন্নতা ছেয়ে আছে। সারা বিশ্ব এবং দেশের সংকট প্রথম ছুটি অর্থাৎ ১৫ই মার্চ রবিবারের বিশ্রামকে একটুও শান্তি দেয় নি। বোঝা তো যাচ্ছিল একটা বড় সংকট আসতে চলেছে। অনেক মানুষ এই অসুখের গুরুত্বটা ঠিক ঠিক বুঝছেন না তো ! তাঁদের মারাত্মক ভুলের মাশুল অন্যদের দিতে হচ্ছে ভয়াবহ ভাবে। তাই কাজের মাঝে মাঝে খবর শুনছি উৎকণ্ঠিত মন নিয়ে। মনে মনে আলোচনা করছি বর্তমান পরিস্থিতির।
সঙ্গীতাদেবী জানান, পছন্দের বই আছে পড়ার জন্য। ক্লাশে পড়ানোর জন্যও নতুন বই পড়া দরকার। কিন্তু মনটা কিছুতেই আয়ত্তে আসছে না। বারে বারে মনে হচ্ছে আশে পাশের মানুষজনকে সচেতন করা ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব রয়ে গেল না তো? যদিও জানি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে রকম শক্ত হাতে পরিস্থিতির রাশ ধরেছেন।
দেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনীতির রঙ ছেড়ে, দল-মত নির্বিশেষে ধনী-দরিদ্র, সংবাদমাধ্যম, পুলিশ প্রশাসন, সাধারণ মানুষ উঁচু-নীচু ভেদাভেদ তুচ্ছ করে সাধ্যমত মানুষকে সচেতন করতে এবং পরিস্থিতির মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে সুস্থ দেশ এবং মন আমরা পাবই ঠিক। শুধু একটু শান্ত থেকে ধৈর্য ধরতে হবে। একবার জোরে উচ্চারণ করতে ইচ্ছে করছে, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই!