জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে গ্রামে গিয়ে শাবকের জন্ম দিল এক বিবাগী গন্ডার

0

HnExpress ১৯শে ফেব্রুয়ারি, সৌভিক সিংহ রায়, আলিপুরদুয়ার : নজিরবিহীন ঘটনা ঘটলো জঙ্গলে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে গ্রামে গিয়ে শাবকের জন্ম দিল এক বিবাগী গন্ডার। গতকাল বুধবার সকালে এই ঘটনায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া সিধাবাড়ি গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

জানা গিয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের শিশামারি জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম হলো সিধাবাড়ি। বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ ওই গ্রামে নদীর বাঁধের কাছেই একটি শাবকের জন্ম দেয় মা গন্ডার। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরেই মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বনদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে তারা গন্ডারের শাবকটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় বন দফতরে।

এরপর অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা মা গণ্ডারকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে কাবু করা হয়। তারপর ঘটনাস্থলে শুরু হয় মা গন্ডারের চিকিৎসা। কিন্তু আশপাশে গ্রামবাসীদের ভীড়ে চিকিৎসা ব্যাহত হয় বলে জানা গেছে। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বনদপ্তর। ক্রেনে করে বিশাল আকার গন্ডারটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় উদ্যানের ভেতরে।

আপাতত শাবক ও মা দুজনেই সুস্থ আছে বলে জানিয়েছে বনদফতর। তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে কি কারণে এইরকম ভাবে মা গন্ডার জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে গিয়ে শাবকের জন্ম দিল তা খতিয়ে দেখছে বনদপ্তর। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গেছে গন্ডারটিকে প্রসব কালীন অবস্থায় নজর রাখছিল বনদপ্তর।

কিন্তু বনদপ্তরের নজর এড়িয়ে বুধবার সকালে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে যায় এই গন্ডারটি। সেখানে স্থানীয় বিদুর বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির জমিতে মা গন্ডারটি একটি শাবকের জন্ম দেয়। শাবকটিকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করতে পারলেও বিশাল আকার মা গঙ্গারকে উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয় বনদফতরকে। পরে মা গণ্ডারটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে কাবু করে উদ্ধার করা হয়।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কতৃপক্ষ জানিয়েছে দুজনেরই চিকিৎসা চলছে। তবে আপাতত চিকিৎসকরা দুইজনকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। আমরা আশা করছি মা বাচ্চা দুইজনকেই সুস্থ করে জঙ্গলে ফিরিয়ে দিতে পারব। উল্লেখ্য যে, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া লোকালয়ে গিয়ে গন্ডারের শাবকের জন্ম দেওয়ার ঘটনা সম্প্রতি ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

তবে এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক হুলুস্থুল তৈরি হয়। উল্লেখ্য, রাজ্যে বর্তমানে গরুমারা ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান এই দুই জায়গায় গন্ডারের বিচরন ভুমি রয়েছে। জলদাপাড়াতে ৩০০র বেশি গণ্ডার রয়েছে। কিন্তু জলদাপাড়ায় পুরুষ ও স্ত্রী গন্ডারের সঠিক ভারসাম্য নেই। সাধারনত একটি পুরুষ গণ্ডার পিছু দুটো স্ত্রী গণ্ডারের বিচরন ভুমির জন্য আদর্শ আনুপাতিক হার।

কিন্তু জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে এই অনুপাত একেবারে উল্টো। এখানে দুইটি পুরুষ গণ্ডার পিছু মাত্র একটি স্ত্রী গণ্ডার রয়েছে। সেই কারনে মাঝে মধ্যেই পুরুষ গণ্ডারদের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। আর এই কারনে অনেক সময় পৃথিবী বিখ্যাত এই এক শৃংগ গন্ডারের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। সেই কারনে দীর্ঘদিন থেকে রাজ্যে তৃতীয় গণ্ডারের বিচরন ভুমির খোঁজ করছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

অবশেষে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। পাতলাখাওয়াতে গন্ডারের তৃতীয় বিচরন ভুমি তৈরি করেছে রাজ্য বনদফতর। সেখানে জলদাপাড়া থেকে দুই গণ্ডার নিয়ে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন এই গন্ডারের বিচরন ভুমিতে মোট ১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করা হবে। তবে বুধবার সকালের ঘটনা প্রমাণ করলো আরেকটি গন্ডারের বিচরণভূমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply