দমদমের দক্ষ পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে লকডাউনকে সফল করতে সাড়া দিচ্ছেন দমদমবাসী

0

HnExpress ২১শে জুলাই, ঝুম্পা দেবনাথ, দমদম ঃ গতকাল থেকে দমদমের বিস্তারিত অঞ্চল জুড়ে করোনা মোকাবিলায় দুপুর ১২টার পর থেকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য কড়া লকডাউন। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা অব্দি লকডাউন শিথিল থাকলেও ১২টার পর থেকে তা জোরকদমে মেনে চলার অভ্যাস শুরু করা হয়েছে। আর দমদমের দক্ষ পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই লকডাউনকে সফল করতে সাড়া দিচ্ছেন দমদমবাসীও।

প্রসঙ্গত, ভারতে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনার সংক্রমণের হার। আর এই সংক্রমণের দিক দিয়ে আস্তে আস্তে ভারত আজ তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যদিও স্বাস্থ্য দফতর থেকে সকলকে বারংবার জানানো হয়েছে মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে। কিন্তু অনেকেই এই সমস্ত কথাকে তোয়াক্কাই না করে বিনা মাস্কে অবাধেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ফলত করোনা অজান্তেই সকলের শরীরে হানা দিচ্ছে, যার খেসারত দিচ্ছে করোনার হাতে বলি হওয়া বহু তাজা প্রাণ, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন থেকে জানা যায়, একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ১৪৮ জন। দেশে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৫৮৭ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ‍্যে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৮২ জন এবং করোনার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন। দেশে মোট কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার ১৯১ জন।

এমতাবস্থায় করোনার সংক্রমণের এই হারকে রুখতে রাজ‍্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান যে, কেরালার পরই পশ্চিমবঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে, তাই গোষ্ঠী সংক্রমণের এই চেনকে ব্রেক করার জন্যই রাজ‍্যে সপ্তাহে ২ দিন সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হবে। তিনি আরও বলেন, চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শনিবার সম্পূর্ণ লকডাউন করা হবে এবং এই সপ্তাহে বুধবার দিনটি এখন পর্যন্ত লকডাউন করা জন্য ঠিক করা হয়েছে।

আর আগামী সপ্তাহে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনটি সোমবার বৈঠকে বসেই ঠিক করা হবে বলেই জানান তিনি। সেই সঙ্গে তিনি করোনা নামক এই অতিমারী পরিস্থিতিতে মানুষের সুবিধার জ‍ন‍্য কয়েকটি হেল্পলাইনও মানুষের উদ্দেশ্যে জানান, কোভিড মোকাবিলায় ইন্টিগ্ৰেটেড হেল্পলাইন ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২ ও ০৩৩-২৩৪১২৬০০, টেলিমেডিসিনের জন্য ০৩৩-২৩৫৭ ৬০০১ এবং বৃহত্তম কলকাতার জন্য অ্যাম্বুল‍্যান্স পেতে ০৩৩-৪০৯০২৯২৯।

এই ফোন নম্বর গুলিও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় এদিনের সাংবাদিক বৈঠকেই। কিন্তু দমদমের তিন পুরসভা অঞ্চলের অনেক মানুষই এই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য পুরসভা ও প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ লকডাউনের ভাবনা গ্ৰহণ করা হয়েছে! উত্ত১র দমদমের প্রশাসক মন্ডলীর প্রধান সুবোধ চক্রবর্তী জানান, গত শনিবার থেকেই যে সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু হয়েছে তা মাইকিং-র মাধ্যমে দমদমবাসীকে জানানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মানুষ মাস্ক পড়ে সচেতন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে বাজারে গিয়ে সামাজিক দূরত্বকে শিকেয় তুলে অসতর্কতার পরিচয় দিয়ে ফেলছেন, ফলত এই সংক্রমণ বাড়ছে

ফল স্বরূপ, এই কারণেই বাজার- দোকান সব বন্ধ রেখে হোম ডেলিভারির ব‍্যাবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছে দমদম পুরসভার পক্ষ থেকে। তিনি আরও জানান, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মাছ, মাংস সমস্ত কিছুই দোকানে ফোন করলেই দোকানদার বাড়িতে এসে পৌঁছে দিয়ে যাবেন বলে জানা গেছে। তবে মানুষ যদি তা সত্ত্বেও অসুবিধায় পড়েন তাহলে পুরসভাকে জানালেই, পুরসভা তাকে সাহায‍্যের জন্য এগিয়ে আসবেন বলেই জানানো হয়।

উত্তর দমদম পুরসভার নিমতা থানার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু ঘোষের দক্ষ হস্তক্ষেপে দমদমবাসী যে সফল লকডাউনের পথে হাঁটছেন, সেই প্রসঙ্গে নিমতা থানার অভিযোগ শাখার পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু বাবু জানান যে, এই অঞ্চলের মানুষজন বিনা কারণে রাস্তায় বের হচ্ছেন না। আর যে সকল ব‍্যক্তি রাস্তায় বেরোছেন তিনি তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে, তারা নিছকি কোনো আড্ডা দেওয়ার জন্য বা কোথাও ঘুরতে বেড়ানোর মানসিকতা নিয়ে বেরোননি

তিনি আরও জানান, হয়তো কেউ বেড়িয়েছেন পেটের দায়ে বা কারো বাচ্চার খাবার কিনতে, তাই সেই সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। কিন্তু যে সকল ব‍্যক্তি বিনা কারণে রাস্তায় বেরোছেন তাদের প্রতি তিনি কঠোরতম আইনত ব‍্যাবস্থা গ্ৰহণ করছেন, যদিও তাদের সংখ্যাটা বেশ কম বলেই জানান তিনি। দমদম পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর প্রধান হরিন্দর সিংহ জানান, সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বাজার দোকান খোলা থাকছে এবং বেলা ১২ টার পর যশোর রোড ও দমদম রোড ছাড়া অন্য কোন রোডে অটো, রিক্সা চালাতে দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন যে, আগে লকডাউন করার জন‍্য সংক্রমণের সংখ্যাটা অনেকটাই কমে যাওয়ার ফলেই প্রশাসনের তরফ থেকে আবার এই লকডাউনের ভাবনাকেই সানন্দে গ্ৰহণ করা হয়েছে। দমদমের প্রশাসকমন্ডলীর আরেক অন‍্যতম প্রশাসক বরুন নট্ট জানান, দমদমের এই পুরসভা অঞ্চলে লকডাউন সফল ভাবেই মানছেন দমদমবাসী। তিনি আরও জানান, এখনো পর্যন্ত এই অঞ্চলের কতদিন পর্যন্ত লকডাউন চলবে তা পুরসভা থেকেই বিচার বিবেচনা করেই দমদমবাসীকে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে

দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর প্রধান ডঃ পাঁচু গোপাল রায় বললেন, পুরসভা থেকে সকাল হতেই মাইকিং-র মাধ্যমে এলাকার সব মানুষকে সচেতন থাকার জন‍্য জানানো হচ্ছে এবং সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই অঞ্চলে বাজার দোকান খোলা থাকছে। বেলা ১২টার পর বিনা কারণে কোন মানুষ বাইরে বেরোলেই পুলিশ আইনত ব‍্যাবস্থা নিচ্ছেন বলেই জানান তিনি। এবং তিনি আরও বলেন, মানুষ সর্তক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই লকডাউন পালন করছেন।

দমদম থানার পুলিশ আধিকারিক জানান, এই অঞ্চলে মানুষ সফলভাবেই লকডাউন পালন করছেন এবং বেলা ১২টার আগে বাজার করতে গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টাটাও করছেন বলে জানান তিনি। ব‍্যারাকপুরের কমিশনারেটের সহায়ক পুলিশ আধিকারিক অলোক পাঞ্জা মুন্সি বলেন, দমদম পুরসভার বাসিন্দারা লকডাউন সফল করার জন্য যথেষ্ট তৎপরতা দেখাছেন এবং খুব দরকার না পড়লে রাস্তায় কেউই বের হচ্ছে না বলেই চলে।

তিনি সেই সঙ্গে এও বলেন বিরাটি অঞ্চলেও পূর্ণ লকডাউন মানছেন অনেকেই, কিন্তু কেউ কেউ লকডাউন ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব‍্যাবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে করোনাকে রুখতে লকডাউনকেই হাতিয়ার হিসাবে সরকার ব‍্যবহার করলেন বলে বিরোধী মহলে বিরোবিতার সুর আরো চওড়া হয়েছে‌। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানান, এই সরকার মুখে বলে এক, আর বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আরেক।

মানুষ সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু সরকার মাইকের সাহায্যে যা তথ্য দিচ্ছেন বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল না থাকায় মানুষ বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি সরকারকে অনুরোধ করে বলেন যে, এই করোনা ভাইরাস এর মতো এমন ভয়ানকতম অতিমারীর পরিস্থিতিতে তথ‍্য গোপনের চেষ্টা না করে মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। উত্তর কলকাতা ও শহরতলির সভাপতি বিজেপি নেতা কিশোর কর জানান, এই সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাই নেই।

কোন একটি অঞ্চলে লকডাউন হলেও অনেক মানুষ অন্য অঞ্চলে অফিস বা বিভিন্ন কাজের সূত্রে যাওয়া আসা করচ্ছেই, ফলে সংক্রমণ এর হার বেড়েই চলেছে। তিনি আরও জানান যে, এটা গোষ্ঠী সংক্রমণ এর আগে থেকেই হচ্ছিল। কিন্তু এই সরকার প্রথমে কিছু স্বীকার করে না, পরবর্তী কালে অবস্থার চাপে পরে স্বীকার করতে বাধ‍্য হয়। এই সরকার যতটা তৎপর মাইকে প্রচার করতে, ঠিক ততটা তৎপর বাস্তবিক ক্ষেত্রে নন মোটেও, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply